‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি, একান্ত বৈঠকে হয়েছে কি না জানি না’
- প্রকাশের সময় : ১১:১৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৫৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ঢাকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। তবে তাদের একান্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, জানি না। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর রাতে নয়া দিল্লির একটি হোটেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। সন্ধ্যায় দিল্লিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উভয় দেশের মধ্য তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি যান।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে পৌঁছালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রিসিভ করেন। সেখানে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাকে জি-২০ লিডার্স সামিটে নিমন্ত্রণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বিশ্বের অনগ্রসর অংশের, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে জি-২০ এর মতো বৃহৎ পরিসরে সামনে তুলে ধরে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি-২০ এর বৈঠকসমূহে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সাধুবাদ জানান।
ড. মোমেন জানান, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একমত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, গত বছরের ০৪-০৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লীতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ক্ষেত্রে প্রভূত দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ জন্য উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা নরেন্দ্র মোদিকে অবহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। নরেন্দ্র মোদিকে সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নরেন্দ্র মোদি উভয় দেশের মধ্যকার অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহ অফিসিয়াল পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ড. মোমেন জানান, ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে কানেক্টিভিটি তথা রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রম বেগবান করতে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের প্রাক্কালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলি হচ্ছে : দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় সহযোগিতা ও পারস্পরিক লেনদেন সম্পাদন সহযোগিতা স্মারক। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে উভয় প্রধানমন্ত্রীর এই ফলপ্রসূ এবং খোলামেলা আলোচনার ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলোর সমাধান ত্বরান্বিত হবে এবং উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আগামী দুই-দিন প্রধানমন্ত্রী জি-২০ লিডার্স সামিটে অংশ নেবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তিনি বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য উপস্থাপনসহ এই সম্মেলনে অংশ নেওয়া একাধিক রাষ্ট্রপ্রধান/সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এর মধ্যে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রধানমন্ত্রী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
শুক্রবার দুপুরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়া দিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নয়াদিল্লি গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ। সূত্র : বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর
বেলী/হককথা