দুর্নীতি শতভাগ নির্মূলের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- প্রকাশের সময় : ০১:৪২:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৯৭ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। এই নির্দেশনা এবার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।’ একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে কর্মপরিকল্পনা নেওয়াসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক হয়। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের জন্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ অনুমোদন করা হয়েছে এই বৈঠকে।
সভার শুরুতে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ দুই সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজ ভালোভাবে বুঝতে বলেছেন। এরপর শুরুতে এক বছরের কাজের পরিকল্পনা নিতে বলেছেন। তারপর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি নির্মূল করা সরকারের পুরনো নির্দেশনা।
সেই নির্দেশনা এবার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রথম বৈঠকে শুধু দ্বাদশ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন নতুন মন্ত্রীরা। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, বিশেষ করে আগামী রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য ও রোজাসংশ্লিষ্ট পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ইশতেহার অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে তারা যেন এখনই কর্মপরিকল্পনা নেন। সেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনিটর করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষি উত্পাদনের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কৃষি উত্পাদন যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। একই সঙ্গে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য আরো সংরক্ষণাগার তৈরি করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। যে মন্ত্রণালয়ের যে অংশ এসব স্তম্ভের সঙ্গে জড়িত, তাদের সে অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলেছেন। এ ছাড়া যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে কিভাবে সেটা জনগণের কল্যাণে লাগবে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে বলেছেন। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কথা বলেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলো যেন প্রকৃত মানুষ পায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সাফল্যের যে ধারা তৈরি হয়েছে সেটি যেন কোনো অবস্থায়ই ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং সে বাজারে প্রবেশের জন্য কিভাবে সহায়তা করা যায়, সে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনটি পণ্যের ক্ষেত্রে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাতপণ্য এবং কৃষিজাত পণ্যের বিষয়ে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। গার্মেন্টসকে যেভাবে সহায়তা করা হয়েছিল বিকাশে, প্রয়োজনে সে রকম সহায়তা দিয়ে তিনটি ক্ষেত্রে যেন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইসিটি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ফ্রিল্যান্সিং যেন আরো বাড়তে পারে, সেদিকে তিনি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। যুবসমাজের জন্য খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন। সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে বলেছেন। যাতে করে তারা মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে পারে। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সরকারি যে শূন্য পদগুলো আছে, সেগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতাকে সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ
সাথী / হককথা