নিউইয়র্ক ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দিল্লিতেই আস্থা ওয়াশিংটনের

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৭৫ বার পঠিত

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। দিল্লির শক্ত অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বেশ কিছুদিন ধরে চাপে রাখা যুক্তরাষ্ট্রও থমকে গেছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের অভিমত, বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব চাইবে না বাইডেন প্রশাসন। বরং জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দিল্লির অবস্থানের প্রতি আস্থা রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। অবশ্য ভোট ঘিরে সংলাপ-সমঝোতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য তৎপরতা চলতে থাকবে।

ঢাকা ও দিল্লির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারত বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ খোলাসা করেই জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে চীনের প্রভাবের চেয়ে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। আর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকারের চেয়ে ভরসা করার মতো বিকল্প দেখছে না তারা। তাই ভারত শেখ হাসিনার বাইরে যাবে না। হাসিনা সরকারের প্রতি মোদি সরকারের আস্থা অগাধ।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান মেনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নয়; বরং ভালো নির্বাচন করার তাগিদ খোদ বাংলাদেশের রয়েছে বলে বিশ্বাস করে ভারত।

প্রতিবেশী দেশটি মনে করে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিল কি না, এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচ্য জনগণের অংশগ্রহণ। আর এ কারণে ভারত জনগণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। একইসঙ্গে দিল্লির অভিমত, সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়, সব বিরোধী দলেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের দিল্লি সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এসব বিষয় স্পষ্ট করেছেন।

জানা গেছে, দিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনে হামাসের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে কথা ওঠে। তখন ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে সুযোগ দেওয়ায় জামায়াত শক্তিশালী হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের সুযোগে জামায়াতের ব্যাপক তৎপরতা আবারও সেটি প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতে বিএনপি যত বেশি ক্ষমতায়িত হবে জামায়াত তত বেশি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

তবে দিল্লির অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়ার পরও ওয়াশিংটন চুপ করে বসে থাকবে না। তপশিল ঘোষণার পরও তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সংলাপসহ সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার (পিআইসি) সভাপতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক গৌতম লাহিড়ী কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সবসময় স্পষ্ট অবস্থানে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের পঞ্চম প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘টু প্লাস টু’ সংলাপের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কিছু না বললেও ভারতের অবস্থানে তারা একটু থমকে গেছে। বাংলাদেশে অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের নীতি তারা রাতারাতি বদলে ফেলবে বিষয়টি, তা-ও নয়। তবে জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দেয়, সেটা স্পষ্ট হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিষয়টি নিজেদের স্বার্থেই ভাববে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে বাধা হোক—এমনটা চাইবে না বাইডেন প্রশাসন।’

ইতোমধ্যেই শর্তহীন সংলাপের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল সোমবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন।

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের বার্তা ও অবস্থান জানাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন।

স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত করে না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বিশেষ করে ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলো কোনো একটি ইস্যুতে বন্ধুদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্রও আগামী নির্বাচনকে ইস্যু করে ঢাকা-ওয়াশিংটন বহুমাত্রিক সম্পর্ক খারাপ করবে না। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগ ছাড়া নতুন করে এমন কোনো চাপ দেবে না যাতে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর শত্রু চীনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর শেখ হাসিনার সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্রের লাভও নেই। কারণ অতীতের সরকারগুলো আরও বেশি চীনমুখী ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তো চীনকে গুরুত্ব দিয়ে বেশ জোরেশোরেই পূর্বমুখী কূটনীতি আলোচিত হয়েছিল। এ ছাড়াও বিএনপির আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান এবং দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ায় আন্তর্জাতিক মহলে দলটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

এদিকে ঢাকা, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে খোদ আমেরিকায় মতানৈক্য রয়েছে। হোয়াইট হাউস, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও পেন্টাগন বাংলাদেশে কোনো কঠোর নীতির বাস্তবায়ন চায় না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালেই সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপিরবারে হত্যা, সেনা ব্যারাক থেকে জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা, বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বর্তমানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনায় আজকের বাংলাদেশ এবং ঢাকা-দিল্লির ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের বাইরে থাকুক সেটা দিল্লিও চায় না। বরং হার-জিত যাই হোক, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলেই মনে করে তারা। শুধু বিজেপি নয়, ভারতের কংগ্রেসসহ সব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ প্রশ্নে একই মনোভাব পোষণ করে। আমেরিকাও বাংলাদেশে সরকার পতন বা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে নয়।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনার এতদিনেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসাকে মৌন সম্মতি বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ শুধু এদেশের মানুষই নয়, প্রতিবেশী বন্ধু ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়। ভারত এদেশের জন্মলগ্ন থেকে এসব প্রশ্নে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতেও রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এদেশের মানুষও গত ৫২ বছরের সংঘাত-সহিংসতার পথ থেকে বের হতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার তো খোদ সরকারেরই রয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধীদের বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এতে করে নির্বাচন সময়মতো না হলে যে শূন্যতা তৈরি হবে তা বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বের কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।’

শমসের মবিন চৌধুরী নিজের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি ওয়াশিংটন বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট পছন্দ করেনি। যদিও এখনো বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি জামায়াত অনুসরণ করছে। এদিকে বরাবরের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ততটা সরব দেখা যাচ্ছে না। পেন্টাগনও বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করেছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস হচ্ছে বাংলাদেশের অংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ওয়াশিংটন দূতাবাসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এসে দেখা করে গেছেন। এ বিষয়টি ইতিবাচক বার্তা দেয়। বৈরী বা শক্ত কোনো বার্তা দিতে তিনি দূতাবাসে আসতেন না। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মনোভাবেও ভিন্নতা লক্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও পিটার হাস নির্বাচন ইস্যুতে অব্যাহত কথা বলছেন। সম্প্রতি একটি পরিবর্তন এসেছে। সেটি হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর পিটার শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানান।’

অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিয়েতনাম, ইরাক বা অন্য কোথাও একপেশে এজেন্ডা নিয়ে সফল হতে পারেনি ওয়াশিংটন। তাই এ অঞ্চলে ভূরাজনীতি ও কৌশলগত স্বার্থে বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লির অবস্থানের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি ওয়াশিংটন নেবে না বলে মনে করি।’

বহুমাত্রিক বৈশ্বিক কাঠামোতে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ এমন মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘চীনের প্রভাব কমানো ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ে ভারত নিজের শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বন্ধুদেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে যে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দেয় তা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অবগত আছে।’

তিনি বলেন, ‘দিল্লি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপ চায় না। তাদের অবস্থান হলো, এদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। যুক্তরাষ্ট্রও বোঝে, ভারতের মতের বাইরে গিয়ে এ অঞ্চলে সুবিধা করতে পারবে না।’

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা, দলটির গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্ত করা, নতুন করে ধরপাকড় না করা এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক দিল্লি ও কলকাতা ঘুরে এসেছেন।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কার্যক্রমে সরকার খুশি নয়, এটা স্পষ্ট। তাই বড় দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমাতে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে সক্রিয় করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। যদিও সারাহ কুকের সফর নিয়ে কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি। সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দিল্লিতেই আস্থা ওয়াশিংটনের

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। দিল্লির শক্ত অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বেশ কিছুদিন ধরে চাপে রাখা যুক্তরাষ্ট্রও থমকে গেছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের অভিমত, বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব চাইবে না বাইডেন প্রশাসন। বরং জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দিল্লির অবস্থানের প্রতি আস্থা রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। অবশ্য ভোট ঘিরে সংলাপ-সমঝোতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য তৎপরতা চলতে থাকবে।

ঢাকা ও দিল্লির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারত বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ খোলাসা করেই জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে চীনের প্রভাবের চেয়ে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। আর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকারের চেয়ে ভরসা করার মতো বিকল্প দেখছে না তারা। তাই ভারত শেখ হাসিনার বাইরে যাবে না। হাসিনা সরকারের প্রতি মোদি সরকারের আস্থা অগাধ।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান মেনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নয়; বরং ভালো নির্বাচন করার তাগিদ খোদ বাংলাদেশের রয়েছে বলে বিশ্বাস করে ভারত।

প্রতিবেশী দেশটি মনে করে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিল কি না, এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচ্য জনগণের অংশগ্রহণ। আর এ কারণে ভারত জনগণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। একইসঙ্গে দিল্লির অভিমত, সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়, সব বিরোধী দলেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের দিল্লি সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এসব বিষয় স্পষ্ট করেছেন।

জানা গেছে, দিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনে হামাসের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে কথা ওঠে। তখন ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে সুযোগ দেওয়ায় জামায়াত শক্তিশালী হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের সুযোগে জামায়াতের ব্যাপক তৎপরতা আবারও সেটি প্রমাণ করেছে। ভবিষ্যতে বিএনপি যত বেশি ক্ষমতায়িত হবে জামায়াত তত বেশি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

তবে দিল্লির অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়ার পরও ওয়াশিংটন চুপ করে বসে থাকবে না। তপশিল ঘোষণার পরও তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সংলাপসহ সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার (পিআইসি) সভাপতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক গৌতম লাহিড়ী কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সবসময় স্পষ্ট অবস্থানে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের পঞ্চম প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘টু প্লাস টু’ সংলাপের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কিছু না বললেও ভারতের অবস্থানে তারা একটু থমকে গেছে। বাংলাদেশে অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের নীতি তারা রাতারাতি বদলে ফেলবে বিষয়টি, তা-ও নয়। তবে জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দেয়, সেটা স্পষ্ট হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিষয়টি নিজেদের স্বার্থেই ভাববে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে বাধা হোক—এমনটা চাইবে না বাইডেন প্রশাসন।’

ইতোমধ্যেই শর্তহীন সংলাপের তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল সোমবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন।

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের বার্তা ও অবস্থান জানাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন।

স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত করে না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বিশেষ করে ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলো কোনো একটি ইস্যুতে বন্ধুদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্রও আগামী নির্বাচনকে ইস্যু করে ঢাকা-ওয়াশিংটন বহুমাত্রিক সম্পর্ক খারাপ করবে না। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগ ছাড়া নতুন করে এমন কোনো চাপ দেবে না যাতে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর শত্রু চীনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর শেখ হাসিনার সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্রের লাভও নেই। কারণ অতীতের সরকারগুলো আরও বেশি চীনমুখী ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তো চীনকে গুরুত্ব দিয়ে বেশ জোরেশোরেই পূর্বমুখী কূটনীতি আলোচিত হয়েছিল। এ ছাড়াও বিএনপির আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান এবং দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ায় আন্তর্জাতিক মহলে দলটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

এদিকে ঢাকা, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে খোদ আমেরিকায় মতানৈক্য রয়েছে। হোয়াইট হাউস, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও পেন্টাগন বাংলাদেশে কোনো কঠোর নীতির বাস্তবায়ন চায় না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালেই সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপিরবারে হত্যা, সেনা ব্যারাক থেকে জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা, বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বর্তমানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনায় আজকের বাংলাদেশ এবং ঢাকা-দিল্লির ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের বাইরে থাকুক সেটা দিল্লিও চায় না। বরং হার-জিত যাই হোক, বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলেই মনে করে তারা। শুধু বিজেপি নয়, ভারতের কংগ্রেসসহ সব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ প্রশ্নে একই মনোভাব পোষণ করে। আমেরিকাও বাংলাদেশে সরকার পতন বা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে নয়।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন আলোচনার এতদিনেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসাকে মৌন সম্মতি বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ শুধু এদেশের মানুষই নয়, প্রতিবেশী বন্ধু ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায়। ভারত এদেশের জন্মলগ্ন থেকে এসব প্রশ্নে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতেও রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এদেশের মানুষও গত ৫২ বছরের সংঘাত-সহিংসতার পথ থেকে বের হতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার তো খোদ সরকারেরই রয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধীদের বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এতে করে নির্বাচন সময়মতো না হলে যে শূন্যতা তৈরি হবে তা বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বের কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।’

শমসের মবিন চৌধুরী নিজের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় দেখেছি ওয়াশিংটন বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট পছন্দ করেনি। যদিও এখনো বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি জামায়াত অনুসরণ করছে। এদিকে বরাবরের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ততটা সরব দেখা যাচ্ছে না। পেন্টাগনও বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করেছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস হচ্ছে বাংলাদেশের অংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ওয়াশিংটন দূতাবাসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এসে দেখা করে গেছেন। এ বিষয়টি ইতিবাচক বার্তা দেয়। বৈরী বা শক্ত কোনো বার্তা দিতে তিনি দূতাবাসে আসতেন না। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মনোভাবেও ভিন্নতা লক্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও পিটার হাস নির্বাচন ইস্যুতে অব্যাহত কথা বলছেন। সম্প্রতি একটি পরিবর্তন এসেছে। সেটি হচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর পিটার শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানান।’

অভিজ্ঞ এই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিয়েতনাম, ইরাক বা অন্য কোথাও একপেশে এজেন্ডা নিয়ে সফল হতে পারেনি ওয়াশিংটন। তাই এ অঞ্চলে ভূরাজনীতি ও কৌশলগত স্বার্থে বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লির অবস্থানের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি ওয়াশিংটন নেবে না বলে মনে করি।’

বহুমাত্রিক বৈশ্বিক কাঠামোতে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ এমন মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘চীনের প্রভাব কমানো ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ে ভারত নিজের শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বন্ধুদেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে যে ভারত বিশেষ গুরুত্ব দেয় তা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অবগত আছে।’

তিনি বলেন, ‘দিল্লি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপ চায় না। তাদের অবস্থান হলো, এদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। যুক্তরাষ্ট্রও বোঝে, ভারতের মতের বাইরে গিয়ে এ অঞ্চলে সুবিধা করতে পারবে না।’

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা, দলটির গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্ত করা, নতুন করে ধরপাকড় না করা এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক দিল্লি ও কলকাতা ঘুরে এসেছেন।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কার্যক্রমে সরকার খুশি নয়, এটা স্পষ্ট। তাই বড় দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমাতে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে সক্রিয় করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। যদিও সারাহ কুকের সফর নিয়ে কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি। সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন