ভারতে বসে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের জের! দেশব্যাপী বুলডোজার হামলা : অগ্নি সংযোগ
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন শুধুই ইতিহাস
- প্রকাশের সময় : ০১:২২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৫ বার পঠিত
বিবিসি: গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর বুধবার (৫ ফেব্রæয়ারী) শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণ ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে রাতভর রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও ভবনটিকে বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে দেখা যায়। তবে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এখন কোনো সমস্যা নাই। ম্যাক্সিমাম চলে গেছে। এখন আর লোকজন নাই’। সেখানে ‘পুলিশ কোনো পাহারা-টহলে নেই’ বলেও জানান তিনি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার ছয় মাস পর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন- এমন খবর আসার পর থেকেই এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শেখ হাসিনা বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করেও সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেয়া হয়। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ভবনটি থেকে অবকাঠামোর বিভিন্ন জিনিস লুটের ঘটনাও ঘটে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বুলডোজার হামলা
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের দুটি তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
খুলনা মহানগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ী’ নামে পরিচিত একটি স্থাপনাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এটি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িও। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভোলার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালনো হয়।
চট্টগ্রাম ও সিলেটে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। রংপুরের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয় ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ‘মুজিব ম্যুরাল’।
এছাড়াও দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
উপদেষ্টা ও অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রাত আড়াইটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, ‘গড়ার তাকত আছে আমাদের?’ শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। লম্বা পোস্টের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘ভাঙ্গার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙ্গা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রæতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন’।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুক পেইজে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে’। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি লেখেন, ‘ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’।
রাত ১১টার দিকে দেয়া এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লেখেন, ‘আবু জাহেলের বাড়ি এখন পাবলিক টয়লেট!’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন শুধুই ইতিহাস
এদিকে ইত্তেফাক-এর খবরে প্রকাশ: বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হলো শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি। বুধবার (৫ ফেব্রæয়ারী) রাত পৌনে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেন। এর আগে বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুদ্ধরা। এ সময় বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার ছাত্রজনতা। ভবনের ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এরইমধ্যে বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেছেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা। এ সময় উপিস্থিত ছাত্রজনতা বিভিন্ন ধরনের ¯েøাগান দেন।
এর আগে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙার জন্য বুলডোজার নিয়ে আসা হয়ে। বুধবার রাত ১১টার দিকে ক্রেনযুক্ত বিশাল বাহনটি বাড়ির ভেতরে ঢোকে। এ সময় ধানমন্ডি ৩২ বাড়িটির মূল ফটক, শেখ মুজিবের ভাস্কর্য, মুর্যাল, বাড়ির দরজা জানালাসহ অনেক কিছুই ভেঙে ফেলেন ছাত্র-জনতা। পরে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত ৮টায় শাহবাগ থেকে এ মিছিল শুরু করার কথা থাকলেও বিকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা।
সন্ধ্যা হতেই সেখানে ব্যাপক জনসমাগম দেখা যায় এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী নানা ¯েøাগান দিতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা রাত ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর শুরু করে।
কালের কন্ঠ’র খবরে প্রকাশ: শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় বুধবার (৫ ফেব্রæয়ারী)। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যারা গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’ পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’
এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমÐি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ডও শেয়ার করেন তারা। তাতে বলা হয়, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমÐির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িতে থেকেই তিনি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়।
১৯৮১ সালে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে শুরুতে তাঁকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ওই বছরের ১০ জুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পর শেখ হাসিনা বাড়ির মালিকানা পান। তবে তিনি সেখানে থাকেননি। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। কয়েক ঘণ্টা পর গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। ঢাকায় শেখ মুজিবের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেদিন ধানমÐি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে যায় তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিও।
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন
ঢাকার ধানমÐি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ধানমÐি ৫/এ সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার পর সেখানে আগুন দেওয়া হয় বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে। ওই এলাকায় দায়িত্বরত ধানমÐি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পর ১০ থেকে ১২টি ছেলে এসে সুধা সদনে আগুন দেয়। আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লোকেরা এসে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা এসে পানি দিয়ে নিচতলার আগুন কিছুটা কমিয়েছেন। রাত ১২টার সময় ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো খুলনার ‘শেখবাড়ি’
খুলনায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখবাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। রাত ৯টার দিকে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত পৌনে ৯টায় ‘শেখবাড়ি’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। নগরীর শেরেবাংলা রোডের ‘শেখবাড়ি’ শেখ মুজিবের চাচাতো ভাই শেখ আবু নাসেরের বাড়ি। এখানে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বাবু এবং শেখ হাসিনার ভাইপো বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় বসবাস করতেন। গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িটি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এর বাড়িটিতে শুধু ইট-পাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল।
বরিশালে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্র-জনতা বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগে পাশাপাশি বুলডোজার দিয়ে ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে। বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ দোতলা ভবনটিতে ঢুকে কিছু আসবাব ছুড়ে নিচে ফেলে দেয়। নিচে থাকা লোকজন তাতে আগুন দেয়। পরে বুলডোজার এনে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে ছাত্র-জনতা। রাত দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছিল। এর আগে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরের কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এতে দোতলা বাসভবনের অনেকাংশ পুড়ে যায়। এ সময় সাদিক আবদুল্লাহ বাড়িতে ছিলেন না। সাদিক আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে।
কুষ্টিয়ায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো হানিফের বাড়ি
বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়ি। বুধবার রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়। এর আগে গত ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চলে লুটপাট। এই ঘটনার পর বাড়িটিতে ইট ছাড়া কিছুই ছিল না। তবে ৫ আগস্ট থেকে হানিফ আত্মগোপনে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি বুলডোজার নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে উপজেলা মোড় থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ির সামনে আসে। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
বরিশালে আমুর বাসভবনে বুলডোজার
নগরীর বগুড়া রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনে বুলডোজার নিয়ে হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভাঙচুর চলছিল।
ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে আগুন
রাত পৌনে ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ভোলায় এসে এই বাড়িতে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনা করতেন তিনি।
নাটোরে সাবেক এমপি শিমুলের বাসভবনে আগুন
বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা নাটোর শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবনে আগুন দেয়।
সিলেটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর হওয়া ম্যুরালটি এবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কিনব্রিজ এলাকা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার (হুইল এক্সকাভেটর) নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যায়। পরে তারা ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে।
এছাড়াও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে খুলনা নগরের ময়লাপোতায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখবাড়ি’, বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ি এবং কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের বাড়ি।