নিউইয়র্ক ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় দেড় শতাধিক পুলিশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
  • / ৪০ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় দেড় শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, সৌদি আরবের ক্লাব, দূতাবাস, বাসভবনসহ কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় ৪৮ জন পুলিশ মোতায়েন আছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনের নিরাপত্তায় ২৯ জন দায়িত্ব পালন করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ১৫৮ জন নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তাদের এসব নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বাড়তি সুবিধা প্রত্যাহার হবে। বিবিসি জানায়, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরব ও ভারতের কূটনীতিকদের জন্য পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, পররবর্তীতে দেখা গেছে যে এটা আসলে মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই করতো। তাদের যে আসল নিরাপত্তার ব্যবস্থা সেটা অপরিবর্তিত আছে।

সচিব বলেন, এখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো আছে। এজন্য রাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন দেখছে না বাংলাদেশ সরকার। তিনি বলেন, বিদেশি যেসব দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতরা আছেন, তাদের যে বেসিক নিরাপত্তা আছে সেটা আমরা কখনোই কম্প্রোমাইজ করব না। এটুকু আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। পররাষ্ট্র সচিব জানান, কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আনসারের স্পেশাল ব্যাটালিয়ন অনেকদিন ধরেই তৈরি করা হচ্ছিল। এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সৌজন্যমূলক আচরণের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি প্রটোকল হিসেবে পুলিশি এসকোর্ট সুবিধা দেওয়া হতো।

অর্থাৎ রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিকরা যাতে দ্রুত চলাচল করতে পারে, এজন্য একটি গাড়িতে পাঁচ থেকে আটজন পুলিশের মাধ্যমে রাস্তা ট্রাফিক মুক্ত রাখার বাড়তি সুবিধা দেওয়া হতো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে যেকোনো স্বাগতিক দেশ সব কূটনৈতিক মিশন এবং তাদের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে এবং কর্মীদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যে ধরনের ‘বিশেষ সুবিধা’ পেয়ে থাকেন, বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতরা সে সুবিধা পান না।

আরোও পড়ুন । বুধবার রাজধানীতে পদযাত্রা করবে বিএনপি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধা দেয় না। সাধারণত স্বাগতিক দেশের ওপরেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিধি-বিধান নির্ভর করে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‌রাষ্ট্রদূতদের নিরাপদে কাজ করার জন্য স্বাগতিক দেশের যতটুকু সুবিধা দেওয়া দরকার তারা সেটা দেয়। এ নিয়ে স্বাগতিক দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে থাকে। কি ধরনের পরিবেশ তৈরি করলে সবাই নিরাপদে থাকবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং উজবেকিস্তানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে এবং আরো অন্তত দশটি দেশে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, কূটনীতিক হিসেবে অনেক দেশে কাজ করেছি, বাংলাদেশ স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের যে নিরাপত্তা দেয় তা আর কোথাও দেখিনি। কখনো কোথাও আমি বিশেষ এসকোর্ট পাইনি, পশ্চিমা দেশে গাড়িতে পতাকা ওড়ানো যেত না। সোহরাব হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের দূতাবাসের বাইরে বা রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা থাকে না। বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী বা গানম্যান থাকা দূরের কথা। গাড়িতে শুধু চালক ও কূটনীতিক থাকেন। এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশ মনে করে যে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। আলাদা করে পুলিশ এসকোর্টের দরকার নেই। আন্তর্জাতিক আইনে এ নিয়ে কিছু বলা নেই। তাই তারা এটা কাউকেই দেয় না। তিনি বলেন, ‌‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কিভাবে নিরাপত্তা দেবে সেটা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। আমার কখনো মনে হয়নি বাড়তি নিরাপত্তা দরকার, তাই কখনো চাইনি। তবে চাইলে হয়তো পেতাম।’

তবে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের সরকারের একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আছে বলে জানান সোহরাব হোসেন। কোনো দেশের কূটনীতিক স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন দিয়ে তাদের চলাচলের কথা জানালে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো বাড়তি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় না। তবে টাকার বিনিময়ে নিরাপত্তা প্রটোকল পাওয়া যায়। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সোহরাব হোসেন বলেন, ‘একবার আমি ইসলামাবাদ থেকে আরেক শহরে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। কিন্তু এজন্য আমার কাছে পয়সা দাবি করা হয়। তখন আর নেইনি।’ তার মতে, কূটনীতিকদের কেমন নিরাপত্তা দেওয়া হবে সেটা স্বাগতিক দেশের ওপর নির্ভর করে। যেমন আফগানিস্তান, পাকিস্তানে কিছুটা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। আবার রাজধানীর বাইরে গেলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে আলাদা কথা। না হলে কোনো দেশেই বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। তবে বাড়তি নিরাপত্তা চাইলে তারা ব্যবস্থা করে তবে সেজন্য মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। বিবিসি জানায়, ভিয়েনা কনভেনশনের আর্টিকেল ২০-এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত তার বাড়িতে, অফিসে, গাড়িতে সেই দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন এবং তাদের মনোগ্রাম বা এমব্লেম ব্যবহার করতে পারবে। এগুলো ব্যবহার করা না করার ব্যাপারে কূটনীতিকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে স্বাগতিক দেশ কোনো বাধা দিতে পারবে না। ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী স্বাগতিক দেশকে অবশ্যই সকল কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। সে হিসেবে কূটনীতিক এবং অবকাঠামোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের এই বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কারণ হিসেবে হুমায়ুন কবির জানান, সাধারণত অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো কূটনৈতিক কমিউনিটির নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি পদক্ষেপ নেয় সরকার। সে সময় বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই সেই বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রতিটি দূতাবাস, কূটনীতিকদের বাসভবন এবং ক্লাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত থাকবে। এই সশস্ত্র সদস্যদের বিশেষ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া আছে।

ঢাকায় কূটনৈতিক জোনে ৫৩টি দেশ রয়েছে। প্রতিটি দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে বিশালসংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন থেকে এই বাড়তি সুবিধা নিতে হলে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। এক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়নের সহায়তায় বিশেষ গার্ড রেজিমেন্ট গঠন করার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যাদের মূল দায়িত্ব হবে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পুলিশের সংকট থাকায় আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত আনসারকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে ভিআইপি ও ভিভিআইপির নিরাপত্তার দায়িত্ব আনসারদের নিয়ে গঠিত গার্ড রেজিমেন্টকে দেওয়া হবে।’

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় দেড় শতাধিক পুলিশ

প্রকাশের সময় : ১১:০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নিরাপত্তায় দেড় শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, সৌদি আরবের ক্লাব, দূতাবাস, বাসভবনসহ কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় ৪৮ জন পুলিশ মোতায়েন আছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনের নিরাপত্তায় ২৯ জন দায়িত্ব পালন করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ১৫৮ জন নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তাদের এসব নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বাড়তি সুবিধা প্রত্যাহার হবে। বিবিসি জানায়, ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরব ও ভারতের কূটনীতিকদের জন্য পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, পররবর্তীতে দেখা গেছে যে এটা আসলে মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই করতো। তাদের যে আসল নিরাপত্তার ব্যবস্থা সেটা অপরিবর্তিত আছে।

সচিব বলেন, এখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো আছে। এজন্য রাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন দেখছে না বাংলাদেশ সরকার। তিনি বলেন, বিদেশি যেসব দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতরা আছেন, তাদের যে বেসিক নিরাপত্তা আছে সেটা আমরা কখনোই কম্প্রোমাইজ করব না। এটুকু আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। পররাষ্ট্র সচিব জানান, কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আনসারের স্পেশাল ব্যাটালিয়ন অনেকদিন ধরেই তৈরি করা হচ্ছিল। এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সৌজন্যমূলক আচরণের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি প্রটোকল হিসেবে পুলিশি এসকোর্ট সুবিধা দেওয়া হতো।

অর্থাৎ রাষ্ট্রদূত বা কূটনীতিকরা যাতে দ্রুত চলাচল করতে পারে, এজন্য একটি গাড়িতে পাঁচ থেকে আটজন পুলিশের মাধ্যমে রাস্তা ট্রাফিক মুক্ত রাখার বাড়তি সুবিধা দেওয়া হতো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে যেকোনো স্বাগতিক দেশ সব কূটনৈতিক মিশন এবং তাদের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে এবং কর্মীদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যে ধরনের ‘বিশেষ সুবিধা’ পেয়ে থাকেন, বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতরা সে সুবিধা পান না।

আরোও পড়ুন । বুধবার রাজধানীতে পদযাত্রা করবে বিএনপি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধা দেয় না। সাধারণত স্বাগতিক দেশের ওপরেই কূটনীতিকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিধি-বিধান নির্ভর করে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‌রাষ্ট্রদূতদের নিরাপদে কাজ করার জন্য স্বাগতিক দেশের যতটুকু সুবিধা দেওয়া দরকার তারা সেটা দেয়। এ নিয়ে স্বাগতিক দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে থাকে। কি ধরনের পরিবেশ তৈরি করলে সবাই নিরাপদে থাকবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং উজবেকিস্তানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে এবং আরো অন্তত দশটি দেশে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, কূটনীতিক হিসেবে অনেক দেশে কাজ করেছি, বাংলাদেশ স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের যে নিরাপত্তা দেয় তা আর কোথাও দেখিনি। কখনো কোথাও আমি বিশেষ এসকোর্ট পাইনি, পশ্চিমা দেশে গাড়িতে পতাকা ওড়ানো যেত না। সোহরাব হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের দূতাবাসের বাইরে বা রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা থাকে না। বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী বা গানম্যান থাকা দূরের কথা। গাড়িতে শুধু চালক ও কূটনীতিক থাকেন। এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশ মনে করে যে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো। আলাদা করে পুলিশ এসকোর্টের দরকার নেই। আন্তর্জাতিক আইনে এ নিয়ে কিছু বলা নেই। তাই তারা এটা কাউকেই দেয় না। তিনি বলেন, ‌‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কিভাবে নিরাপত্তা দেবে সেটা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। আমার কখনো মনে হয়নি বাড়তি নিরাপত্তা দরকার, তাই কখনো চাইনি। তবে চাইলে হয়তো পেতাম।’

তবে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের সরকারের একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আছে বলে জানান সোহরাব হোসেন। কোনো দেশের কূটনীতিক স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন দিয়ে তাদের চলাচলের কথা জানালে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো বাড়তি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় না। তবে টাকার বিনিময়ে নিরাপত্তা প্রটোকল পাওয়া যায়। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সোহরাব হোসেন বলেন, ‘একবার আমি ইসলামাবাদ থেকে আরেক শহরে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। কিন্তু এজন্য আমার কাছে পয়সা দাবি করা হয়। তখন আর নেইনি।’ তার মতে, কূটনীতিকদের কেমন নিরাপত্তা দেওয়া হবে সেটা স্বাগতিক দেশের ওপর নির্ভর করে। যেমন আফগানিস্তান, পাকিস্তানে কিছুটা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। আবার রাজধানীর বাইরে গেলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে আলাদা কথা। না হলে কোনো দেশেই বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। তবে বাড়তি নিরাপত্তা চাইলে তারা ব্যবস্থা করে তবে সেজন্য মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। বিবিসি জানায়, ভিয়েনা কনভেনশনের আর্টিকেল ২০-এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত তার বাড়িতে, অফিসে, গাড়িতে সেই দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন এবং তাদের মনোগ্রাম বা এমব্লেম ব্যবহার করতে পারবে। এগুলো ব্যবহার করা না করার ব্যাপারে কূটনীতিকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে স্বাগতিক দেশ কোনো বাধা দিতে পারবে না। ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী স্বাগতিক দেশকে অবশ্যই সকল কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে। সে হিসেবে কূটনীতিক এবং অবকাঠামোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের এই বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কারণ হিসেবে হুমায়ুন কবির জানান, সাধারণত অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো কূটনৈতিক কমিউনিটির নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তি পদক্ষেপ নেয় সরকার। সে সময় বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই সেই বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রতিটি দূতাবাস, কূটনীতিকদের বাসভবন এবং ক্লাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত থাকবে। এই সশস্ত্র সদস্যদের বিশেষ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া আছে।

ঢাকায় কূটনৈতিক জোনে ৫৩টি দেশ রয়েছে। প্রতিটি দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে বিশালসংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন থেকে এই বাড়তি সুবিধা নিতে হলে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। এক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়নের সহায়তায় বিশেষ গার্ড রেজিমেন্ট গঠন করার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যাদের মূল দায়িত্ব হবে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পুলিশের সংকট থাকায় আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত আনসারকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে ভিআইপি ও ভিভিআইপির নিরাপত্তার দায়িত্ব আনসারদের নিয়ে গঠিত গার্ড রেজিমেন্টকে দেওয়া হবে।’

বেলী/হককথা