টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসুচির মধ্যদিয়ে মাওলানা ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত : রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালনের দাবী

- প্রকাশের সময় : ১১:১৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৬
- / ১১৮০ বার পঠিত
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আফ্রো এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার অবিসংবাদিত নেতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিনটির উল্লেখযোগ্য কর্মসুচীর মধ্যে ছিলো: মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, খিচুরী বিতরন, আলোচনা সভা, সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শন প্রভৃতি। ঐদিন ১৭ নভেম্বর বৃহস্প্রতিবার সকাল থেকেই মাজার প্রাঙ্গণে মাওলানা ভাসানীর মুরিদান, ভক্ত ও অনুসারীসহ হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। দেশের দুরদুরান্ত থেকে ভাসানীর ভক্ত-অনুসারীরা এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাতে ছুটে আসেন। উল্লেখ্য, মওলানা ভাসানী ছিলেন তৎকালিন মুসলিম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সারাটা জীবন তিনি নিপিড়িত মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্যই নয় তিনি কাজ করে গেছেন ভারতীয় উপমহাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের নিপিড়িত মানুষের কল্যানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম রূপকার মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর যথাযথ ভাবে তাকে সন্মান ও স্মরণ করা হচ্ছেনা বলে মনে করেন ভাসানী’র মুরিদ ও অনুসারীরা। সেই সাথে সারা বাংলাদেশে ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাসানীর মৃত্যু বার্ষিকী পালন করার দাবী জানান তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন ও ফাতেহা পাঠের মধ্যদিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর ভাসানীর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। পরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব, আলেমা খাতুন ভাসানী হল, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান হল, খোদাই খেদমতগার, ভাসানী ফাউন্ডেশন, ভাসানী স্মৃতি পরিষদ, ন্যাপ ভাসানী, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা বিএনপি, জাতীয় পাটি, কৃষক শ্রমিক জনতালীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। দিনের কর্মসুচির মধ্যে মাজার প্রাঙ্গনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা সভা এছাড়াও জেলা বিএনপির ও কৃষক শ্রমিক জনতালীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া ‘যুগ যুগ জিয়ো তুমি-মওলানা ভাসানী’ শ্লোগানে মুখোরিত হয়ে উঠে মওলানা ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গন।
ঐদিন সকাল সাড়ে ৮টায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসস্থ মুক্তমঞ্চে ‘মাওলানা ভাসানীর ধর্মচিন্তা ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। মুখ্য আলোচক ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. পিনাকী দে ও মাওলানা ভাসানী রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও মাওলানা ভাসানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মহিউদ্দিন আলোচনা করেন। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাওলানা ভাসানী স্ট্যাডিজ কোর্স-এর শিক্ষক সৈয়দ ইরফানুল বারী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান।
আরো উল্লেখ্য, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনের অধিকাংশ সময়ই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। এখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৯টি কারিগরী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এসব প্রতিষ্ঠান এখনও রয়েছে শুধু তার স্বপ্নের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টিই নেই। বিগত সরকারগুলো কথা দিয়েছিল বারবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১শ’ ৬ দশমিক ২৬ একর জায়গার ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মহান এই নেতা ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের শুরুতে মক্তবে শিক্ষা গ্রহণ এবং মক্তবেই কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। ১৯০৩ সালে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন এবং এ সময় ১০ মাস কারা ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে ভয়াবহ বন্যা হলে মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলে আসেন ত্রাণ বিতরন করতে। এরপর তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষ গ্রামে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রক্ষপুত্র নদীর ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন করেন। সেই থেকে তার নামের পিছনে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।
১৯৩১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। তিনি বাংলার গরীব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বহু আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেন। এ কারনেই তিনি মজলুম জননেতায় পরিণত হন। গরীব-দুঃখীর জন্য আন্দেলন-সংগ্রাম করতে করতেই মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নবেম্বর মৃত্যুবরন করেন। তাকে সমাহিত করা হয় তার প্রিয় টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি যে শনের কুড়ে ঘরে বসবাস করতেন, তাঁর কবরের পাশে সেই শনের কুড়ে ঘরটি আজও সংরক্ষিত রয়েছে।