নিউইয়র্ক ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

জৌলুসপূর্ণ প্রাসাদ এখন জড়াজীর্ণ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৬৩ বার পঠিত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ডেস্ক : এক সময় যাদের দাপটে বাঘে-মোষে এক ঘাটে জল খেত, যাদের জৗলুসপূর্ণ বাড়ির দিকে সাধারণ মানুষ অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকত, সেই নওগাঁর দুবলহাটির রাজবাড়ি এখন জড়াজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময়ের প্রতাবশালী রাজা কৃষ্ণনাথের রাজবাড়ি অবহেলা আর অযত্নে প্রায় বিলুপ্তির পথে। দুইশত বছরের পুরাতন রাজবাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষনের অভাবে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পরার আশঙ্কা স্থানীয়দের। ঝুঁকিপূর্ণ জড়াজীর্ণ এই রাজবাড়ি দেখতে দূরদূরন্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন।

বর্তমানে রাজবাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। রাজবাড়িটি সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো উল্ল্যেখ করার মত পদক্ষেপ। স্থানীয়রা বলছেন, এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। পর্যটকদের সামাজিক নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তন করেন। এই প্রথা অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ও বাংলার জমি মালিকদের (সকল শ্রেণীর জমিদার ও স্বতন্ত্র তালুকদারদের) মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির আওতায় জমিদাররা ভূ-সম্পত্তির নিরঙ্কুশ স্বত্বাধিকারী হন।

এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় রাজা কৃষ্ণনাথ ১৪ লাখ ৪৯৫ টাকা দিয়ে লর্ড কর্ণওয়ালিস এর কাছ থেকে এলাকাটির পত্তনি নেন। এ রাজবাড়ি থেকেই তৎকালীন সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশের জমিদারি পরিচালিত হতো। রাজা কৃষ্ণনাথ নিঃসন্তান ছিলেন। ১৮৫৩ সালে রাজত্বভার গ্রহণ করেন তার নাতি রাজা হরনাথ রায়। রাজা হরনাথের আমলে দুবলহাটির রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তিনি দুবলহাটি রাজ প্রাসাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নাট্যশালা নির্মাণ ও প্রজা সাধারণের সুপেয় পানীয় জলের কষ্ট দূরীকরণের ব্যবস্থা নেন।

রাজবাড়িতে সবমিলিয়ে ৭টি আঙিনা এবং প্রায় ৩০০ ঘর ছিল। প্রাসাদের ভেতরে ভবনগুলো কোনটি তিনতলা কোনটি চারতলা, আর ছিল রাজরাজেশ্বরী মন্দির। রাজবাড়ির সামনে ছিল গোবিন্দ পুকুর, এর পাশে ছিল ‘গান বাড়ি’ নামে একটি ভবন। গানবাড়িতে নিয়মিত চলত গানবাজনা। এর অনতি দূরে ছিল কালী মন্দির। কালী মন্দির হতে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বয়েছে রাজার বাগানবাড়ি। ১৮৯২ সালে রাজা হরনাথ রায় ভারতে চলে যান। আর কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় সুবিশাল অট্টালিকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ৫ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত দুবলহাটি রাজবাড়ি। রাজবাড়ির মূল ফটকে রোমান স্টাইলের স্তম্ভগুলো রুচির পরিচয় বহন করে। এখন চারদিকে নলখাগড়া, জঙ্গল, লতাপাতায় ঘিওে আছে এক সময়ের জৌলুসপূর্ণ রাজবাড়ি। খসে পড়ছে পলেস্তারা, দেয়াল ও পিলার। কয়েক বছর আগেই প্রসাদটির গায়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি।

ঐতিহাসিক এই স্থানটি এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানা। অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা না থাকায় সেখানে যেতে ভয় পান পর্যটকরা। প্রাসাদ দেখাশুনা করার মত আর কেউ নেই।

মিলি আক্তার নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, কয়েক বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। তখন ভিতরে গিয়ে দেখার মতো পরিবেশ ছিলো। কিন্তু বর্তমান ভিতরে সামাজিক নিরাপত্তা নাই।

খায়রুল নামের স্থানীয় একজন বলেন, আগের মত আর লোকজন আসে না। দেওয়ালের ইট খুলে পড়ছে, ভেতরে জঙ্গলে ভরে গেছে। বখাটে ছেলেরা ভেতরে নেশা করে। ভয়ে মেয়েরা ভিতর ঢুকতে ভয় পায়। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর আর রাজবাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাবে। সংস্কার করে রাজবাড়িটি পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

জৌলুসপূর্ণ প্রাসাদ এখন জড়াজীর্ণ

প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : এক সময় যাদের দাপটে বাঘে-মোষে এক ঘাটে জল খেত, যাদের জৗলুসপূর্ণ বাড়ির দিকে সাধারণ মানুষ অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকত, সেই নওগাঁর দুবলহাটির রাজবাড়ি এখন জড়াজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময়ের প্রতাবশালী রাজা কৃষ্ণনাথের রাজবাড়ি অবহেলা আর অযত্নে প্রায় বিলুপ্তির পথে। দুইশত বছরের পুরাতন রাজবাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষনের অভাবে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পরার আশঙ্কা স্থানীয়দের। ঝুঁকিপূর্ণ জড়াজীর্ণ এই রাজবাড়ি দেখতে দূরদূরন্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন।

বর্তমানে রাজবাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। রাজবাড়িটি সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোনো উল্ল্যেখ করার মত পদক্ষেপ। স্থানীয়রা বলছেন, এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। পর্যটকদের সামাজিক নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তন করেন। এই প্রথা অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ও বাংলার জমি মালিকদের (সকল শ্রেণীর জমিদার ও স্বতন্ত্র তালুকদারদের) মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির আওতায় জমিদাররা ভূ-সম্পত্তির নিরঙ্কুশ স্বত্বাধিকারী হন।

এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় রাজা কৃষ্ণনাথ ১৪ লাখ ৪৯৫ টাকা দিয়ে লর্ড কর্ণওয়ালিস এর কাছ থেকে এলাকাটির পত্তনি নেন। এ রাজবাড়ি থেকেই তৎকালীন সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারতের কিছু অংশের জমিদারি পরিচালিত হতো। রাজা কৃষ্ণনাথ নিঃসন্তান ছিলেন। ১৮৫৩ সালে রাজত্বভার গ্রহণ করেন তার নাতি রাজা হরনাথ রায়। রাজা হরনাথের আমলে দুবলহাটির রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তিনি দুবলহাটি রাজ প্রাসাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নাট্যশালা নির্মাণ ও প্রজা সাধারণের সুপেয় পানীয় জলের কষ্ট দূরীকরণের ব্যবস্থা নেন।

রাজবাড়িতে সবমিলিয়ে ৭টি আঙিনা এবং প্রায় ৩০০ ঘর ছিল। প্রাসাদের ভেতরে ভবনগুলো কোনটি তিনতলা কোনটি চারতলা, আর ছিল রাজরাজেশ্বরী মন্দির। রাজবাড়ির সামনে ছিল গোবিন্দ পুকুর, এর পাশে ছিল ‘গান বাড়ি’ নামে একটি ভবন। গানবাড়িতে নিয়মিত চলত গানবাজনা। এর অনতি দূরে ছিল কালী মন্দির। কালী মন্দির হতে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বয়েছে রাজার বাগানবাড়ি। ১৮৯২ সালে রাজা হরনাথ রায় ভারতে চলে যান। আর কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে যায় সুবিশাল অট্টালিকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ৫ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত দুবলহাটি রাজবাড়ি। রাজবাড়ির মূল ফটকে রোমান স্টাইলের স্তম্ভগুলো রুচির পরিচয় বহন করে। এখন চারদিকে নলখাগড়া, জঙ্গল, লতাপাতায় ঘিওে আছে এক সময়ের জৌলুসপূর্ণ রাজবাড়ি। খসে পড়ছে পলেস্তারা, দেয়াল ও পিলার। কয়েক বছর আগেই প্রসাদটির গায়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি।

ঐতিহাসিক এই স্থানটি এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানা। অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা না থাকায় সেখানে যেতে ভয় পান পর্যটকরা। প্রাসাদ দেখাশুনা করার মত আর কেউ নেই।

মিলি আক্তার নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, কয়েক বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। তখন ভিতরে গিয়ে দেখার মতো পরিবেশ ছিলো। কিন্তু বর্তমান ভিতরে সামাজিক নিরাপত্তা নাই।

খায়রুল নামের স্থানীয় একজন বলেন, আগের মত আর লোকজন আসে না। দেওয়ালের ইট খুলে পড়ছে, ভেতরে জঙ্গলে ভরে গেছে। বখাটে ছেলেরা ভেতরে নেশা করে। ভয়ে মেয়েরা ভিতর ঢুকতে ভয় পায়। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর আর রাজবাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাবে। সংস্কার করে রাজবাড়িটি পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

হককথা/নাছরিন