জোট রাজনীতিতে নয়া মেরূকরণের আওয়াজ
- প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৮৮ বার পঠিত
আইডিয়াটা কার ব্রেইন চাইল্ড তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। কেউ বলেন, এটা প্রয়াত রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আনোয়ার জাহিদের তত্ত্ব। আবার কারও মতে, ধারণাটা গোলাম আযমের। আওয়ামী লীগ বিরোধী সব ভোট এক বাক্সে নিয়ে আসা গেলে ভোটের রাজনীতির হিসাব নিজেদের পক্ষে আনা সহজ হবে। আসলে ভোটের জয় সহজ হবে। সেই থিওরির আলোকে দুই যুগ আগে
গড়ে ওঠে চারদলীয় জোট। নানা ভাঙা-গড়া। একসময় তা গড়ায় ২০দলীয় জোটে। অনেকটা নীরবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই এ জোট ভেঙে গেছে। জোটের পেট থেকে ১২দলীয় জোট নামে একটি নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
আরেকটি জোট গঠনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। ওদিকে, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট নতুন করে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। এ জোটে অনেকদিন ধরেই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব চলছে। খবরে আসছে নতুন করে। মিত্র বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি জোটও। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর বৈঠকও রাজনীতিতে কৌতূহল তৈরি করেছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের। সব মিলিয়ে জোট রাজনীতিতে নয়া মেরূকরণ স্পষ্ট হচ্ছে দ্রুত।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে টানাপড়েন শুরু হয় বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর ২০ দলের অনেক শরিক দল যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি বলে অভিযোগ করে। ওই সময় থেকেই জামায়াত অনেকটা ২০ দলের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। জোটের গুরুত্বপূর্ণ দলের নেতারা সক্রিয় ছিলেন না জোটের কার্যক্রমে। এ কারণে খুব একটা দৃশ্যমান ছিল না এ জোটের। বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে বোঝাপড়ার দূরত্বের কারণে এই জোট গুরুত্ব হারায় বলে নেতারা মনে করছেন। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ভেঙে গেছে এই জোট। জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা ইতিমধ্যে ১১ দলীয় একটি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। বাকি কয়েকটি দল মিলে আরেকটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াত ছোট কোনো জোটে যাচ্ছে না। তারা আলাদা করেই রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে। তবে বিরোধী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে সমর্থন থাকবে জামায়াতের। বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ সব কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করবে দলটি। হঠাৎ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হওয়ায় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। তারা বলছেন, দলের আমীরকে গ্রেপ্তার করে চাপ প্রয়োগ করা হলেও সামনের কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না জামায়াত। নেতাদের দাবি এতদিন তারা দল গোছানোর কাজ করেছেন। এখন মাঠের আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখতে তারা প্রস্তুত।
২০ দলের বাইরের বাম এবং মধ্য ধারার যে সাতটি দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে যে জোট গঠন করেছে তারাও বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি এবং যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সক্রিয় রয়েছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জোটের আত্মপ্রকাশকে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন।
বিএনপি চাইছে এসব জোটের বাইরে থাকা আরও কিছু দলকে নিজেদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে। এসব দলের সঙ্গে অনান্ষ্ঠুানিক আলোচনাও চলছে।
বিরোধী দলগুলোর এই জোট তৎপরতার বিপরীতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করারও চিন্তা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জোটের নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারে ১৪ দলের আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের অংশগ্রহণ নেই। আগের দুটি সরকারে তাদের অংশগ্রহণ ছিল। এ কারণে পাওয়াÑনা পাওয়া নিয়ে নেতাদের মধ্যে নানা অনন্তোষ ছিল। এজন্য তাদের তেমন তৎপরতাও দেখা যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বিরোধী দলগুলো সক্রিয় হওয়ায় ১৪ দলের পক্ষ থেকে একাধিক কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়।
সর্বশেষ শুক্রবার গণভবনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এতদিন সরকারের বিরুদ্ধে নানা বক্তৃতা দিলেও হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে দলটির তরফে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। অনেকে বলছেন, নির্বাচনের আগে জোটের যে মেরূকরণ হচ্ছে তাতে কাদের সিদ্দিকী কোনো জোটের অংশীদার হতে পারেন। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তার থাকা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। এরপর থেকে ওই জোটে থাকা দলগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো যায়নি।
জোট রাজনীতিতে বরাবরই আলোচনার বিষয় জাতীয় পার্টি। জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও দলটির অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। দলের ভেতরে দুই ধারা বিদ্যমান থাকায় জাতীয় পার্টি যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করায় দল চাইলেও বিরোধী শিবিরে দলটির ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকের ধারণা নির্বাচনের আগে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই দলটির নেতারা তাদের গন্তব্য ঠিক করবেন। প্রয়োজনে তারা অবস্থান বদলও করতে পারেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই জোট রাজনীতির মেরূকরণ আরও স্পষ্ট হতে পারে। নিষ্ক্রিয় বা মাঠে কৌশলী অবস্থানে থাকা দলগুলোও নিজেদের প্রয়োজনে শামিল হতে পারে সরকারি বা বিরোধী শিবিরে। তবে এর পুরোটাই নির্ভর করবে মাঠের পরিস্থিতির ওপর।