জিনিয়া অপহরণ : লুপার কথা বিশ্বাস করছে না পুলিশ

- প্রকাশের সময় : ০৭:১৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ২৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে নিখোঁজের পর উদ্ধার আট বছরের শিশু জিনিয়াকে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার লুপা তালুকদারের কথা বিশ্বাস করছে না পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে লুপা দাবি করছেন, জিনিয়াকে তিনি লালনপালন করে বড় করতে চেয়েছিলেন। মামলার তদন্তে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, লুপা তালুকদারের এ কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল পাচ্ছেন না তারা। লুপা তালুকদার দুদিনের রিমান্ডে আছেন। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তার রিমান্ডের প্রথম দিন ছিল।
টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর গত ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটির একটি বাসা থেকে শিশু জিনিয়াকে উদ্ধার করে। ১ সেপ্টেম্বর রাতে টিএসসি এলাকা থেকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে শিশু জিনিয়াকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ওই বাসায় আটকে রাখেন লুপা তালুকদার।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, জিনিয়াকে যে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল সেই বাসাটি লুপা তালুকদারের কথিত এক বোনের। জিজ্ঞাসাবাদে লুপা তাকে লালনপালন করে বড় করে তোলার দাবি করলেও জিনিয়াকে নেওয়ার সময় তার মায়ের সম্মতি নেননি কিংবা শাহবাগ থানার পুলিশকে জানাননি। ঘটনার দিন লুপা তালুকদারের মেয়ে তার সঙ্গে ছিল। তাকে খুঁজছে পুলিশ।
মিশু বিশ্বাস বলেন, লুপার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। তার বাড়ি পটুয়াখালী। সেখানে তিনি এক অন্তঃসত্ত¡া নারীকে খুন করার মামলার আসামি ছিলেন। তার জীবনযাপন নিয়েও অভিযোগ আছে। তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি শিশু ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিশু জিনিয়াকে বড় করে তোলার পর তাকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ড করার পরিকল্পনা থেকেই অপহরণ করেন লোপা।
লোপা তালুকদার
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, লোপা তালুকদার নিজেকে একটি টিভি চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলে পরিচয় দেন। নিজেকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টাফ করেসপনডেন্ট বলে পরিচয় দেন এবং ভিজিটিং কার্ড দেখান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুধবার সন্ধ্যায় ওই টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক বলেন, ২০১২ সালে তিন মাস প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
টিএসসি এলাকায় ফুল বিক্রি করত ফুটফুটে শিশু জিনিয়া। ১ সেপ্টেম্বর রাতের কোনো একসময় টিএসসি এলাকা থেকে সে নিখোঁজ হয়। মা শিমু, ছোট বোন সিনথিয়া (৭) আর ভাই পলাশের (১৭) সঙ্গে জিনিয়া থাকত টিএসসি এলাকাতেই। টিএসসির বারান্দা তাদের রাতে শোয়ার জায়গা। আর দিন কাটত লাল প্লাস্টিকের বালতিতে করে গোলাপ আর বেলি ফুল বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে শিক্ষার্থী, টিএসসি এলাকার চায়ের দোকানদার, ফুচকার দোকানদার আর ভ্রাম্যমাণ সিগারেট বিক্রেতাদের সবারই পরিচিত জিনিয়া।
নিখোঁজ হওয়ার পরে জিনিয়ার মা শিমু শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি পোস্ট করেন। ট্রাকচালক স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর জিনিয়াসহ তিন সন্তানকে নিয়ে মা শিমু প্রায় পাঁচ বছর আগে টিএসসি এলাকায় আসেন। প্রথম দিকে জিনিয়া আর পলাশ চকলেট বিক্রি করত। সিনথিয়া তখন একেবারেই ছোট হওয়ায় তাকে মা শিমু দেখাশোনা করতেন।
জিনিয়া-পলাশের চকলেট বিক্রির শ দেড়েক টাকা দিয়েই তাদের চলত। এরপর একটু বড় হলে জিনিয়া ফুল বিক্রি শুরু করে, ছোট সিনথিয়াও বোনের সঙ্গে থেকে থেকে এই কাজ করে। আর পলাশ এখন একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। জিনিয়াকে না পাওয়ায় পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। (প্রথম আলো)