জাপায় ফের নাটক

- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৮৩ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিতে ফের নাটক শুরু হয়েছে। গত দুই দশক ধরে নির্বাচন এলেই জনগণের বিপক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে সংসদে যাওয়ার চেস্টা করে এবং গ্রুপিং করে নাটক মনস্থ করে থাকে। ২০০৬ সালে প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পাতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এইচ এম এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে রওশন এরশাদ নিজেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ওই সময় মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যহতি দিয়ে গোলাম মহিকে মহাসচিব করা হয়। ১৮ বছরের মাথায় আবার রওশন এরশাদ দেবর জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে নিজেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর কাজী মামুনুর রশিদ নামের একজনকে মহাসচিব করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে তার নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নিজেকে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন । একই সঙ্গে জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে কাজী মামুনুর রশিদকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বেগম রওশন এরশাদের ঘোষণা আমলে নিচ্ছি না। এই সিদ্ধান্তের কোন ভিত্তি নেই, এটি অগঠনতান্ত্রিক।
রওশন এরশাদ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য নেতৃত্ব ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টিতে এখন ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও কো-চেয়ারম্যান হওয়ায় আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, সংকট নিরসনে পার্টির নেতা-কর্মীদের অনুরোধে এবং গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম। সেই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের অনুরোধে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত কাজী মো. মামুনর রশিদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম।
গত ৭ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জাপায় সৃষ্টি হয় দ্বিধা-বিভক্তি। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফলে পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে দলটির ৬৭১ জন নেতা-কর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এই প্রেক্ষাপটে রওশন এরশাদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই এই বৈঠকে বসেন ক্ষুব্ধ নেতারা।
এদিকে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হচ্ছেন জিএম কাদের। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন নম্বর-১২। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তিনিই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং আমি (মুজিবুল হক চুন্নু) মহাসচিব।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে এমন কোন ধারা নেই, যে ধারার ক্ষমতায় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, মহাসচিব বা অন্য কাউকে পদ থেকে বাদ দিতে পারে। এমন কিছু আমাদের গঠনতন্ত্রে নেই। এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো তিনি আমাদের বাদ দিয়েছেন। এর আগেও দুইবার আমাদের বাদ দিয়ে তিনি সেই চিঠি প্রত্যাহার করেছেন। তাই পার্টির মহাসচিব হিসেবে বেগম রওশন এরশাদের ঘোষণা নলেজে নিচ্ছি না। এই সিদ্ধান্তের কোন ভিত্তি নেই, এটি অগঠনতান্ত্রিক। মুজিবুল হক চুন্নু আরো বলেন, বেগম রওশন এরশাদ হচ্ছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের স্ত্রী, আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি। সে কারণেই তাকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়েছে। তার দলীয় বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদটি হচ্ছে অলংকারিক পদ। এই পদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার নেই। আমাদের দলের প্রেসিডিয়াম ও নির্বাহী কমিটির মিটিং ডাকা হবে, সেখানে বিশ্লেষণ করা হবে আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে। জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে।
দেশের রাজনীতির যারা খোঁজ খবর রাখেন তারা বলছেন, জাপা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই। বরং গণমাধ্যমে প্রচারণা পেতে দলটির নেতারা প্রায় নাটকের অবতারণা করেন। জাপার রাজনীতিতে ছিলেন এবং এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এমন কয়েকজন নেতা আলাপের মধ্যে বললেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি রহস্যজনক। গণমাধ্যম গণবিচ্ছিন্ন সুবিধাবাদী দলটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রিন্ট মিডিয়ায় জাতীয় পার্টি নিয়ে খবর প্রচার করা কাগজ নষ্টের নামান্তর। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব
হককথা/নাছরিন