জাপানি দুই শিশু কার কাছে থাকবে তা জানা যাবে ১৫ ডিসেম্বর

- প্রকাশের সময় : ০৫:৫৬:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
- / ৫৪ বার পঠিত
জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার বিষয়ে আগামী বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ। আদেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত দুই মেয়ে জাপানি মা ডা. নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আদেশের জন্য আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) এ দিন ধার্য করেন। আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম।
এর আগে জেসমিন, লিনা ও তাদের মা-বাবার সঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারকরা খাসকামরায় কথা বলেন। এদিকে আজ সকালে শিশু দুটিকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আপিল বিভাগে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
সকালে জাপানি মায়ের আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। শিশুদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। আপিল বিভাগের আদেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের হস্তান্তর না করায় ইমরানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন নাকানো। আজ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়।
গতকাল রবিবার (১২ ডিসেম্বর) দুই শিশুকে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর মায়ের জিম্মায় রাখতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর দুই শিশুকে আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, গতকাল রাত ১০টার মধ্যে দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশনা ছিল। শিশুদের আনতে গেলেও তাদের মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়নি। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করি।
এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হলো- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে স্কুল-বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন।
পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন। পাশাপাশি সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু উভয়পক্ষের আইনজীবীরা কয়েকবার বৈঠকেও সমঝোতায় আসতে পারেনি।
সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মেয়েদের এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকার আদেশ দেন। আর বাবা ইমরান শরীফকে দিনের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা ও সময় কাটাতে পারবেন বলে সুযোগ দেন। পরে ৩১ অক্টোবর ২ রিটের শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।