জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস : ২৫ মার্চ পালন করা হবে জাতীয় গণহত্যা দিবস

- প্রকাশের সময় : ০৫:০৪:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০১৭
- / ৮৮৬ বার পঠিত
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকান্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। শনিবার (১১ মার্চ) সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর আগে ২৫ মার্চ তারিখে গণহত্যা দিবস পালনের দাবি জানিয়ে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু করে। তাই ওই দিনটিকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
শনিবার বিকালে সংসদের অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দিনের অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে কার্যপ্রণালী বিধি-১৪৭ বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি উত্থাপনের আহ্বান করেন। প্রস্তাবটির উপর আলোচনার সূত্রপাত করে শিরীন আখতার বলেন, বিশ্বে গণহত্যা দিবসের ইতিহাসে যে কোন দিনের চেয়ে ২৫ মার্চের গণহত্যা একটি দুঃসহ স্মরণীয় দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও তান্ডবের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ গণহত্যা দিবসের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতে। বাঙালীর শত্রুরা এই ইতিহাসকে বারবার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। তাই এই দিবসটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার প্রস্তাব করছি। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার পক্ষে দাবি তোলার প্রস্তাব করছি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ও গণবিচার আন্দোলন এবং ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিবসটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হোক। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে সংসদ তা গ্রহণ করলে তা কার্যকরে আদেশ দেবে নির্বাহী বিভাগ। প্রস্তাব উত্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। তিনিও এই প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলেন। এরপর সংসদে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা, অত্যাচার এবং এসব থেকে বাঁচতে বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষের দুর্দশার বিষয়ে একটি প্রামণ্যচিত্র দেখানো হয় সংসদে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাকে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায়।
প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর কয়েকজন সংসদ সদস্য এর উপর আলোচনায় অংশ নেন এবং প্রবীণ সদস্য তোফায়েল আহমেদ-এর সংশোধনী সহ পরবর্তীতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে পাস হয়।
উল্লেখ্য, বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলনকে অস্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চ লাইট নামে চালানো হয় এই গণহত্যা। সেদিন তাদের নির্বিচারে গুলিতে এক রাতেই রাজধানীতে নিহত হয় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ফুটপাতের মানুষের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাসগুলোতেও চালানো হয় নির্মম গণহত্যা। আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। পুলিশ বাহিনী তাদের হালকা অস্ত্র দিয়ে ঠেকাতে পারেনি সেনাদেরকে।
এরপর বাঙালী পাল্টা অস্ত্র তুলে নিলেও পরের নয় মাসজুড়ে দেশজুড়ে চলে গণহত্যা। সব মিলিয়ে প্রাণ হারায় আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ। অত্যাচার, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ আর ধর্ষণ; সাড়ে তিন লাখের বেশি নারী নির্যাতিত হয় সে সময়। শহরের পাশাপাশি দূর গ্রামের মানুষরাও এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে পারেনি। পাকিস্তান থেকে আসা সেনারা ছাড়াও বাংলাদেশেরই মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনী গড়ে তোলে চালায় হত্যাযজ্ঞ।
২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর পর এই দেশ থেকে বিদেশি সাংবাদিকদেরকে বের করে দেয়া হয় এই অঞ্চল থেকে। তারপরও কিছু সাংবাদিক লুকিয়ে এসব গণহত্যার কিছু চিত্র তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। প্রাণে বাঁচতে প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে। আর ৯ মাসের সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের আছে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।