জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে এসেছে : জন কেরি

- প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১
- / ২৮ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে এসেছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষার জন্য সব দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একক কোনো দেশের পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয়। এজন্য আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট আহবান করেছেন। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে কেরি বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুঃখিত যে, আগের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা আবারও ফিরে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আসন্ন সম্মেলনে ধনী ও বড় দেশগুলোর পাশাপাশি ভালনারেবল দেশগুলোরও সুযোগ থাকবে তাদের কথা বলার এবং আমরা তাদের কথা শুনব। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হলে কারো কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে না বরং উপকার হবে। অর্থনীতিতে আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’ তিনি এ সময় নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর, কার্বন নিঃসরণ ও অভিযোজনসহ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘১০ কোটি আমেরিকান নাগরিককে করোনা টিকা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে টিকা সরবরাহ করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।’ প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ১০০ দিনে ১০ কোটি মার্কিনীর করোনা টিকা নিশ্চিতের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৯ কোটি ৯০ লাখের বেশি আমেরিকান নাগরিক প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন এবং ৫ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। জন কেরি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র টিকা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। ১০ কোটি আমেরিকানের টিকা নেওয়া হলেই তা অন্যান্য দেশে পাঠানো হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলার জন্য প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিলে অর্থায়ন করার কথা উন্নত বিশ্বের। কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতি খুবই কম। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূতকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছি।’ আমি আশা করি, প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের কাজটি তিনি করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্থের ৫০ শতাংশ অভিযোজন এবং ৫০ শতাংশ প্রশমনে ব্যয় করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে আমরা জন কেরিকে অবহিত করেছি।’ এছাড়া চলতি বছর গøাসগোতে কপ-২৬ এ বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট করতে চায়। এজন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থ ও প্রযুক্তি প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ আশা করে- যুক্তরাষ্ট্র সেটি জোগান দেবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বনায়ন ধ্বংস করছে। তাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এর সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার।’ এ সময় কেরি জানান, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে এবং মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট-এ অংশগ্রহণে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমেরিকান প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি ছয় ঘণ্টার এক সংক্ষিপ্ত সফরে শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন এবং ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ও সাংবাদিক সম্মেলনের পর বিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। শুক্রবারইবিকালেই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক)