জরুরী অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি হয়নি, জনরোষেই প্রতিহত হবে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য : প্রধানমন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৮:১২:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৭৮৬ বার পঠিত
ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড প্রতিহত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল জনরোষই এসব দলের অশুভ কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষ ও দেশের অর্থনীতি লক্ষ্য করে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড সম্পর্কে জনগণ সজাগ রয়েছে। জনগণ এ নৈরাজ্য প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে। কেবল জনরোষেই বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য প্রতিহত হবে।’
গত ৫ ফেব্রুযয়ারী বৃহস্প্রতিবার সকালে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক সহিংসতার মাত্রা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত দেশের সম্পত্তি ধ্বংস করছে। নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দেশকে ১৯৭১ সালের অবস্থানে ঠেলে দেওয়া। সে সময়ে তারা গণহত্যা চালিয়েছিল এখন নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।’
বৈঠকে জঙ্গি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে অর্থ জোগানদাতাদের চিহ্নিত এবং জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে ব্যাংকে লেনদেন কঠোরভাবে মনিটর করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতায় পৃষ্ঠপোষকরা দেশে ও দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তরে এখনো ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করছে। এ জন্য ব্যাংকের লেনদেন নিবিড়ভাবে মনিটর করা উচিত এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নকারীদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়গুলোর কাজে গতিশীলতা আনতে তাঁর প্রত্যেক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বক্তব্য দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ ও এর অধীন বিভিন্ন বিভাগে ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে। কারণ আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও মর্যাদাশীল হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এ কথা মনে রেখে দেশ পরিচালনা করি।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণ বিএনপি-জামায়াতের সংঘটিত হামলায় উদ্বিগ্ন। তারা রাজনীতির নামে হত্যা, পেট্রলবোমা হামলা ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকরসহ সব ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইসলামের নামে রাজনীতি করছে। কিন্তু তাদের এ ধরনের কর্মকান্ড দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জন্য বিএনপির কোনো সহানুভূতি নেই। কারণ এ দেশ সৃষ্টিতে দলটির কোনো আত্মত্যাগ নেই। অন্যের ত্যাগের বিনিময়ে তারা এ দেশ পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপি গঠন করে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ছিল দখলদার বাহিনীর দালাল ও দোসর। তারা দখলদার বাহিনীর লালসা মেটাতে আমাদের মা-বোনদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী। এ জন্য এ দলগুলোর দেশরক্ষা ও দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কোনো দায়িত্ব নেই। বিএনপি-জামায়াত কেবল দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ লুট করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে জানে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশের বর্তমান অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। দেশের সব সূচক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে অনেক ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।’
প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সঠিক অবস্থানে থাকলে এই অঞ্চল অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক আগেই উন্নত হতো। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা শুরু করে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতি সঠিক অবস্থানে আসে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি উন্নয়ন মডেল। আওয়ামী লীগ সরকার বিগত দুটি মেয়াদে যুগান্তকারী অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করায় দেশের অগ্রগতি হয়।’
শেখ হাসিনা ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমর্থন কামনা করে বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে তহবিল সংগ্রহে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্বাভাবিক রাখায় সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘২০০৫-০৬ সালে আমাদের জাতীয় বাজেট ছিল ৬১,০৫৭ কোটি টাকা। এই বাজেট বেড়ে চলতি অর্থবছরে হয়েছে ২,৫০,৫০৬ কোটি টাকা।’
প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী চার বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে আর কেউ বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘সমাজ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। পাঁচ কোটি মানুষ তাদের অবস্থান নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ে নিয়ে গেছে। সার্বিক দারিদ্র্য হার কমে ২৪ শতাংশ হয়েছে। অতি দরিদ্রের হার ১০ শতাংশ হয়েছে।’
জরুরী অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি হয়নি : প্রধানমন্ত্রী
এদিকে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা এক মাস ধরে বিরোধী জোটের সহিংস অবরোধ চললেও জরুরী অবস্থা জারির শঙ্কা নাকচ করেছেন তিনি। ৪ ফেব্রুয়ারী বুধবার সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরী অবস্থা কেন জারি করতে হবে? দেশে জরুরী অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয় আমরা পরিস্থিতির মোকাবিলা করব।
তিনি বুধবার সংসদে বলেছেন, ওই স্বপ্ন দেখে লাভ হবে না। অলীক-অলৌকিক স্বপ্ন যারা দেখছে, যারা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়, আমাদের রক্ত থাকতে তা হতে দেব না। ইমারজেন্সি দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে পারেনি।
নাসিমা ফেরদৌসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে বিএনপি-জামায়াত কোনো কারণ ছাড়াই অবরোধ-হরতালের নামে নিরীহ মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারছে। বাস, ট্রেন আর লঞ্চে আগুন দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে আহত ব্যক্তিদের পোড়া চামড়ার গন্ধ আর তাঁদের আহাজারি যেকোনো মানুষের মনে দাগ কাটবে। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কার্মকান্ড চালাচ্ছে। ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীকে জিম্মি করে নাশকতা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও এর হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনকারী ও মদদদাতাদের তালিকা করে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। নাশকতার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলার পর গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য নাশকতাকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছে। নাশকতার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। সরকার আহত-নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সহযোগিতায় ও চিকিৎসার পদক্ষেপ নিয়েছে। (দৈনিক কালের কন্ঠ)