খালেদা জিয়ার রাজনীতি আবারও আলোচনায়
- প্রকাশের সময় : ০২:২৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৪১ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি রাজনীতি করতে পারবেন? বিষয়টি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই, তবে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে গত রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে নতুন করে সামনে এসেছে এ প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কেউ বলছেন, তিনি রাজনীতি করতে পারলে এত দিন কেন তাঁরা বলেননি? এখন যদি তিনি রাজনীতি করেন, তাহলে তাঁর সাজা স্থগিতের আদেশ বহাল থাকবে কি? আবার কেউ বলছেন, এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। অসুস্থতাজনিত কারণে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার অলিখিত শর্তেই তিনি সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন। তাই শর্ত মেনেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না। অবশ্য আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। দলটির নেতারা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। এ বক্তব্যের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফিরে আসা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে।
আরোও পড়ুন বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে আসছেন, রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়েই সাজা স্থগিত পেয়েছেন খালেদা জিয়া। যদিও তাঁদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন বিএনপি নেতারা। দু’দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই হঠাৎ করে রোববার আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নতুন মাত্রা পেয়েছে রাজনীতিতে। সরকারি কৌশলের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা- এমন জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের কাছে নিজেদের গণতান্ত্রিক অবস্থান প্রমাণ করতেই এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন আইনমন্ত্রী। তবে খালেদা জিয়া সাজা স্থগিতাদেশ বাতিলের আশঙ্কায় নিজ থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না বলেও অভিমত ব্যক্ত করছেন বিশ্নেষকরা।এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন। মূল্যায়ন করে দেখবেন। এর পর দলীয় বক্তব্য দেওয়া হবে। দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার নানা সময়ে নানা কথা বলে। কোন সময়ে কোনটা বলে, তা তারা নিজেরাও জানে না। তাই তাদের বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বিএনপির নেই।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বলেন, এটা তাঁরা আগেও বলেছেন- ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার মুক্তির যে শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, তা বলা নেই। এত দিন সরকার সেটা অস্বীকার করেছে, এখন সেটা স্বীকার করছে। অসুস্থ মানুষ রাজনীতি করতে পারেন না- আইনমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে অসুস্থ মানুষের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। অনেক অসুস্থ মানুষ রাজনীতি করেন। সুস্থ মানুষও অসুস্থ হতে পারেন। তাই বলে রাজনীতি করতে পারবেন না- এমন বিষয় নয়। তাহলে কি খালেদা জিয়া আবার রাজনীতিতে আসতে পারেন- এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বলেন, অবশ্যই পারেন। এত দিন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর রাজনীতি করার স্বাধীনতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এখন খোলাসা করা হয়েছে। তাই খালেদা জিয়া সুস্থবোধ করলে এবং ইচ্ছা পোষণ করলে রাজনীতিতে আসতে পারেন।
আরোও পড়ুন শান্তিরক্ষা মিশনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এটি দুদক আইন ও উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সিদ্ধ হয়নি। উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে, দুদকের মামলায় সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তাঁর মতে, সরকার করোনা পরিস্থিতি বা মানবিক দিক বিবেচনায় হয়তো খালেদা জিয়ার সাজা সাময়িক স্থগিত করেছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, সাধারণত মুচলেকা দেওয়া হয় অপরাধমূলক বা অপরাধজনিত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি হিসেবে। রাজনীতি নিঃসন্দেহে একটি অপরাধমূলক কার্যক্রম নয়। তাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার জন্য খালেদা জিয়ার মুচলেকা দেওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না। আইনমন্ত্রী সম্ভবত এই ধারণাকে স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন কিনা, এটা সম্পূর্ণ তাঁর সিদ্ধান্ত। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার যে সাজা স্থগিত করা হয়েছে, সেটার সংশ্নিষ্ট কাগজপত্র এবং আইনি দিক বিশ্নেষণ করে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কী করবেন, সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাঁকে (ফৌজদারি কার্যবিধি) ৪০১ ধারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে অসুস্থ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে লিখে রাখিনি, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কার্যক্রমের কথাই বলি, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেতে হবে। ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাহলে কি খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নে গতকাল আইনমন্ত্রী সমকালকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় যে চিঠি লেখা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, তাঁর শারীরিক অবস্থা এমন- সুচিকিৎসা না হলে তাঁর জীবন বিপন্ন হবে। আপনারাই বিচার করেন, যিনি অসুস্থ, তিনি কি রাজনীতি করতে পারেন? যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) বিবেচনায় মনে হয় তিনি রাজনীতি করতে পারেন, তাহলে আপনাদের বিবেচনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না- এটাই মনে হচ্ছে বেস্ট জাজমেন্ট।’
‘সাজা স্থগিতের জন্য খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন’- ২৬ জানুয়ারি সংসদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁর এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক হয়। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চয়ই তাঁর কাছে এ বিষয়টির প্রমাণ রয়েছে। তাঁর মতো একজন ব্যক্তি প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবেন- এটাও তো বিশ্বাস করা যায় না। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এ ধরনের কোনো মুচলেকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আওয়ামী লীগের ওই নেতা মিথ্যা ও আজগুবি বক্তব্য দিয়েছেন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এখন আবোলতাবোল বক্তব্য দিচ্ছেন।
তবে গতকালও ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খালেদা জিয়া দণ্ডিত। এই অবস্থান তাঁর নির্বাচন করার পক্ষে নয়। নির্বাচনের যোগ্য তিনি নন। বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি যদি রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাঁকে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী করতে হবে।
আরোও পড়ুন মির্জা ফখরুলকে পাকিস্তান গিয়ে রাজনীতির পরামর্শ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর
অবশ্য দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেগুলো হলো- এ সময় তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয় মাসের জন্য তাঁর সাজা স্থগিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির পর থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাড়িতেই অবস্থান করছেন। ওই সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। এর পর প্রতি ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এবার নিয়ে ছয়বার তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। সূত্রঃ সমকাল
হককথা/ সাথী