কৌশল ঠিক করছে আওয়ামী লীগ

- প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
- / ৬৯ বার পঠিত
আসছে ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ আহ্বান করেছে বিএনপি। এদিন ঢাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি’র এই কর্মসূচিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ততা বেড়েছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। ইতিমধ্যে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মৌখিকভাবে। তবে সমাবেশের আগে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হবে। এজন্য দলীয় কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। বিএনপি’র সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এদিন সমাবেশ করতে চায় বলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছে। তবে এতে সায় মেলেনি।
দলীয় সূত্রের দাবি বিএনপি সমাবেশে বাধা বা পাল্টা সমাবেশ ডেকে পরিস্থিতি ঘোলা করতে চায় না আওয়ামী লীগ। এ কারণে ওই সমাবেশে যাতে লোক সমাগম নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং সমাবেশ থেকে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ১লা ডিসেম্বর থেকেই রাজধানী ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৬ই ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোকে কড়া পাহারায় রাখা হবে। ২৪ ঘণ্টা দলের নেতাকর্মীরা পালাক্রম অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি রাজধানীতে থাকা বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও নজর থাকবে নেতাকর্মীদের। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১০ই ডিসেম্বর ঘিরে মূলত দুই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও নবীনগর নেতাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এসব জায়গায় যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারে। স্থাপনাগুলোতে যেন কেউ হামলা চালাতে না পারে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো বেশির ভাগ এসব স্থানে প্রতিষ্ঠিত। তাই শ্রমিকদের মাঝে অপ্রপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে যেনো কেউ উত্তেজিত করে না তোলে সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এসব এলাকার নেতারা জানিয়েছেন তারা দলীয় নির্দেশনা মেনে সক্রিয় থাকবেন। অবস্থান কর্মসূচি বা সমাবেশও করা হবে কোথাও কোথাও। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ১০ই ডিসেম্বর সমাবেশ করা হবে বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছে। ওই সমাবেশের মাধ্যমে ওই দিন নেতাকর্মীরা এলাকায় সক্রিয় থাকবেন। এতে ওই এলাকা দিয়ে অন্য জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে পারবেন না বলে তাদের ধারণা। একই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন টঙ্গী ও গাজীপুরের নেতাকর্মীরাও।
অন্যদিকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কয়েকদিন আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আমাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সঙ্গে থাকবেন। তিনি বলেন, ওইদিন রাজধানীতে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে যেনো জানমালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে আমরা সজাগ থাকবো। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো আমাদের কর্মীরা নজরে রাখবেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত দুই হাজার করে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ হিসেবে রাজধানীজুড়ে দেড় লাখ নেতাকর্মী সক্রিয় থাকবেন। তিনি বলেন, ১লা ডিসেম্বর থেকেই আমাদের কর্মীরা সক্রিয় থাকবেন।
তবে ৬ই ডিসেম্বর থেকে পুরোপুরি সতর্ক অবস্থানে থাকবে। এদিকে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের করণীয় প্রসঙ্গে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক কাজ করবে। দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত করছে। আওয়ামী লীগ ঘরে বসে ঘুমাবে ব্যাপারটা এমন নয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দায়িত্ব হলো দেশের মানুষের কল্যাণে যা যা করা দরকার সেই কাজগুলো করা। আমরা সেই কাজগুলো করবো। সে কাজগুলো করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা সব সময় যার যার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি যাই আসুক না কেন আমাদের কর্মী সমর্থকরা সাহসিকতার সঙ্গে দেশের মানুষের সাথে থেকেই দেশের জন্য কাজ করে থাকে। তিনি বলেন, দেশে কেউ উচ্ছৃঙ্খলতা বা অনাসৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের মানুষের পাশে থাকবে। কোনো দল যেন দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থাকবে।
ওদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দলটি বেশকিছু রুটিন কর্মসূচি ঠিক করে রেখেছিল। এখন পর্যন্ত সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। কিন্তু হঠাৎ করে আগেভাবে বিরোধী দলগুলো রাজপথে নেমে যাওয়ায় রুটিন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনছে ক্ষমতসীন দল। তাই নতুন করে কর্মসূচি নির্ধারনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির দিকে। তাদের তৎপরতা অনুযায়ী নিজেদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগ। তবে আগামী কয়েক মাস কোন ধরনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যেতে চায় না দলটি। পরিস্থিতি যদি আরও বেশি উত্তপ্ত হয় কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি আন্দোলনের নামে সহিংসতা তৈরি করে। কিংবা সরকার পতন ঘটাতে জোর তৎপরতা চালায় তাহলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কথা ভাববে আওয়ামী লীগ।
আসছে ৪ঠা ডিসেম্বর চট্টগ্রামে দলীয় সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর ঢাকার বাইরে এই সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া ৩রা ডিসেম্বর নির্ধারিত তারিখে ছাত্রলীগের সম্মেলন না হলেও পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ই ডিসেম্বর এই সম্মেলন হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের কারণে এই সম্মেলনের তারিখ পেছানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশগুলোর সময়ে আওয়ামী লীগেরও কোনো না কোনো জেলায় সম্মেলন বা অন্য কোনো সমাবেশ হচ্ছে।
এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি সমাবেশের খবর যাতে এক তরফাভাবে প্রকাশিত না হয় তার জন্যই এই কৌশল নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
এদিকে নেতাকর্মীদের আন্দোলন ও সংগ্রামের জন্য চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিনই রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কখনো সশরীরে, কখনো প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে আবার কখনো বিবৃতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মনোভাবের কথা জানাচ্ছেন তিনি। মাঝে মাঝে তিনি বলছেন রাজনৈতিক খেলার কথা।