বাংলাদেশ ডেস্ক : বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ নানা খাতে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন খাতে খরচ কমানোর প্রক্রিয়াও চলছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলোকেও আনা হয়েছে এর আওতায়। এ প্রেক্ষাপটে কৃচ্ছ্র সাধনের কোপ পড়েছে সাত শতাধিক প্রকল্পে। এই অর্থবছরের (২০২২-২৩) এডিপিতে থাকা এসব প্রকল্পের মধ্যে ৮১টির অর্থছাড় সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়েছে, অর্থাৎ এগুলোর কাজ আপাতত বন্ধ থাকছে। ২৫ শতাংশ অর্থছাড় স্থগিত করা হয়েছে ৬৩৬টি প্রকল্পে।
যদিও প্রয়োজন এবং গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পগুলোর বেশকিছু অনুমোদন দেওয়া হয়েছি। এখন কৃচ্ছ্র সাধনের আওতায় পড়ে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আলোকে প্রকল্প পুনর্বিন্যাস করে পরিকল্পনা কমিশন। সেখানে জাতীয় গুরুত্ব, বর্তমান সময়ের উপযোগিতা, সুবিধাভোগীর সংখ্যা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর শ্রেণি ঠিক করা হয়। কোন মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকল্প কোন শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে, তা সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই অর্থবছরের শুরুতেই গুরুত্ব অনুসারে প্রকল্পগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করার কথা জানিয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
ওই পরিপত্রে বলা হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো ‘এ’ শ্রেণিতে থাকবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলোর বাস্তবায়ন চলবে। গুরুত্বের দিক থেকে মধ্যম শ্রেণির প্রকল্প থাকবে ‘বি’ শ্রেণিতে। এগুলোতে সরকারি অংশের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। খরচ করা যাবে বাকি ৭৫ শতাংশ। আর ‘সি’ শ্রেণিতে থাকা প্রকল্পের পুরো টাকা ছাড়ই আপাতত স্থগিত থাকবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্প সংখ্যা পাওয়া গেছে ৬৪৬টি। ‘বি ও ‘সি’ শ্রেণিতে পড়েছে মোট ৭১৭টি। ৯টি প্রকল্পকে কোনো শ্রেণিভুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ৮৫টি। এগুলোর ক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি সরকার। বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থছাড় পুরোপুরি বা আংশিক স্থগিত থাকার ফলে কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে, এখন সে হিসাব কষছে কমিশন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্তটি নীতিগতভাবে ভালো। তবে স্থগিত প্রকল্প পরে আবার বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হলে তখন খরচ বেড়ে যেতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ের দর পরিস্থিতি বিবেচনায় খরচ ধরা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের সেবা অর্থনীতিতে যে ধরনের মূল্য সংযোজন করার কথা, সেটাও হবে না। প্রকল্পের শ্রেণি করা নিয়ে মতপার্থক্যও থাকতে পারে। তাই কোন প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ রাখা হবে, কোনটা চলমান থাকবে সেটা ঠিকভাবে নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এই খরচ সাশ্রয়ের আওতায় বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও স্থগিতের তালিকায় চলে এসেছে। যেমন, স্ট্রেংদেনিং অ্যাবিলিটি অব ফায়ার ইমার্জেন্সি রেসপন্স (সেফার) প্রকল্পটিও পড়েছে ‘সি’ শ্রেণিতে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্পটি নিয়েছিল সরকার। অনেক বাসাবাড়ি এবং শিল্পকারখানা অগ্নিদুর্ঘটনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন জরুরি ছিল বলে মনে করেন অনেকে। সেফার ছাড়াও সুরক্ষা সেবা বিভাগের ১৬ জেলায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট ভবন নির্মাণ এবং নরসিংদীতে কারাগার নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে এই শ্রেণিতে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য মামুন আল-রশীদ সমকালকে বলেন, কিছু কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ স্থগিত থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অর্থছাড় শতভাগ স্থগিত থাকা অন্য প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বন্ড ব্যবস্থাপনার অটোমেশন, হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা এলসি স্টেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের তিনটি প্রকল্প। এ বিভাগের চলমান একটি প্রকল্পকে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাত প্রকল্পের মধ্যে চারটি ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। একটিকে রাখা হয়েছে ‘বি’ শ্রেণিতে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হেলিপ্যাড নির্মাণ, বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকা পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পও রয়েছে অর্থছাড় স্থগিতের তালিকায়। খবর সমকাল
হককথা/এমউএ