কারা সরকারের টাকা নিচ্ছে প্রমাণ করুন
- প্রকাশের সময় : ০১:২৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৩৮ বার পঠিত
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরকে সরকারের কাছ থেকে বিরোধী জোটের কারা টাকা ও প্লট নিচ্ছেন তাঁদের নাম প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণ করুন- জোট থেকে বের করে দেব। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অনভিজ্ঞতাপ্রসূত ও ছেলেমানুষি। মান্না বলেন, না জেনে, না বুঝে বাকিদের ছোট করা হচ্ছে। ৩০-৪০ বছর কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকলেই বিরোধী নেতৃত্ব ব্যর্থ হয় না। গতকাল রোববার গুলশানের বাসভবনে সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম।
প্রশ্ন : ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করে দাবি আদায় করতে পারেননি। এবার নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে লক্ষ্য ও ঐক্য কতটুকু অটুট রাখতে পারবেন?
মান্না: যত চ্যালেঞ্জ আসুক, একটা একটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। চিন্তাভাবনা করে অগ্রসর হচ্ছি। আশা করি, এবার মোকাবিলা করতে পারব।
প্রশ্ন : জোট গঠনের বেশি দিন হয়নি- এখনই গণতন্ত্র মঞ্চের ভেতর টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেছে?
মান্না: জোটে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে এটি অস্বীকার করব না। জোটের একজন নেতা কিছু বালখিল্য ও ছেলেমানুষি টাইপের কথাবার্তা বলেছেন। সমাবেশে তাঁদের বেশি লোককে বক্তব্য দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন তাঁদের আগে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে না- ইত্যাদি বলছেন।
প্রশ্ন : জোটের শরিক গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ওরফে ভিপি নুর বলেছেন, জোট নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টি রয়েছে। সমস্যাগুলো জোট নেতারা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা করেন।
মান্না: আমরাও সমাধানের চেষ্টা করছি, সেটা হয়তো হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তিনি এমনসব কথা বলে ফেলেছেন! যেমন বিএনপির সমমনা ৫৪ দলের অনেকেই সরকার থেকে টাকা-পয়সা ও প্লট নিচ্ছেন এবং আসন ভাগাভাগিতে ঐকমত্যেও পৌঁছে যাচ্ছেন- এটা তো ঠিক নয়। কারা টাকা নিচ্ছেন তাঁদের নাম বিএনপি কেন খুঁজে বের করবে? অভিযোগ আপনি করেছেন, আর আমাকে খুঁজে বের করতে বলছেন- তা তো হয় না। নাম আপনি বলুন। অবশ্য সাক্ষাৎকারে প্রথমে তিনি গণতন্ত্র মঞ্চের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। এ রকম ঢালাও অভিযোগ অন্যায়।
প্রশ্ন : অবশ্য ভিপি নুর এও বলেছেন, তাঁরা উদার গণতান্ত্রিক জোট করতে চান? কিন্তু জোটে বেশিরভাগ দল বাম ঘরানার হওয়ায় ইসলামী দলগুলো সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
মান্না: তিনি এ রকম চান বলে কখনও বলেননি। তার পরও কথা থাকলে জোটের বৈঠকে বলবেন। ইসলামী দল কোনগুলো- জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই, হেফাজতে ইসলামী এগুলো?
প্রশ্ন : হ্যাঁ, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আমরা মানি বা নামানি এসব দল ফ্যাক্টর।
মান্না : এ রকম বিতর্ক তুললে তো সমস্যা। আমরা তো ঐক্য চাই। এ কারণেই ঐক্য বাদ দিয়ে যুগপৎ কর্মসূচিতে গেছি। কারণ, একমঞ্চে এটা হবে না। অতীতে আমরা তো বহু দেখেছি- কে মঞ্চে উঠলে কী বলতে পারেন। অন্য পক্ষের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? তাতে কি ঐক্যের সুর বাজবে? না অনৈক্যের সুর বাজবে সেটাও দেখেছি। সেখানে আমাদের একটা কথা স্পষ্ট হতে হবে- গত পনেরো বছরে তিনি যাঁদের কথা বলেছেন, গণতন্ত্রের আন্দোলনে তাঁরা কী করেছেন? তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করছি না।
প্রশ্ন : ভিপি নুরের অভিযোগ, ১১ জানুয়ারি সৌদি আরব থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যুগপৎ কর্মসূচির সমাবেশে গিয়ে বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। তবে আপনারা তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করে দিয়েছেন। যাতে তিনি বক্তব্য দিতে না পারেন।
মান্না: তিনি ওই দিন কোন ফ্লাইটে আসবেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তা জানতেন না। বিমানবন্দর থেকে প্রেস ক্লাবে আসতে কতক্ষণ লাগে- এটা তো সবার জানা। তিনি এলে বক্তব্য করতে দেব না- এ ধরনের কোনো মনোভাব আমাদের ছিল না। সম্ভবত যখন শেষ বক্তা বক্তব্য রাখছেন, তখন তিনি ছিলেন কারওয়ান বাজারে। এসে ধরতে পারবেন না বলেই সমাবেশ শেষ করা হয়।
প্রশ্ন : সকালে জোটের কর্মসূচিতে গণঅধিকার পরিষদের অল্প কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত হওয়া এবং বিকেলে নিজেদের দলীয় কর্মসূচিতে বড় শোডাউন সম্পর্কেও অনেক যুক্তি দিয়েছেন ভিপি নুর।
মান্না : জোটের আন্দোলন তো এবারই প্রথম হচ্ছে না। আমি ১৫ দলীয় জোটেও ছিলাম। ওই জোটে আমার দলের যেমন একজন বক্তব্য রাখতেন, তেমনি আওয়ামী লীগসহ অন্য সব দলের একজন করে বক্তব্য রাখতেন। উনি যেভাবে বলছেন, তাহলে ১৫ দলের ৪ জন বক্তব্য রাখবেন, আর আওয়ামী লীগের ৪০ জন বক্তব্য রাখবেন- এটা অনভিজ্ঞতাপ্রসূত বক্তব্য। না জেনে, না বুঝে বাকিদের ছোট করা হচ্ছে। আমি দোষ দিচ্ছি না। তাঁরা যদি এসেই বলেন, আ স ম রবের পরই বক্তব্য রাখবেন এবং যদি বলেন, ৫ দলের ৫ জন আর আমাদের ১৫ জন বক্তব্য রাখবেন- এটা তো হয় না। কর্মী গুনে গুনে বক্তার সংখ্যা হয়- এগুলো কোনো রাজনীতি নয়।
প্রশ্ন : এ পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন দেখা দিতে পারে?
মান্না: না, আমি তো ভাঙনের কিছু দেখি না। টানাপোড়েন সবসময়ই থাকে। ১৫ দল, ৭ দল ও ২০ দলেও ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এখনও একসঙ্গে আছি। উনারা যদি বলেন, আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না, তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য হওয়ার জন্য নিজেদের মতো করতেই পারেন।
প্রশ্ন : গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জোটকে শুধু ৭ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১৭ দলে পরিণত করারও প্রস্তাব করেছে?
মান্না : তাদের বিশেষ পছন্দ ইসলামী দল- এটা কখনও বলেনি। সাতটার বাইরে আরও দুটি দল টিপু বিশ্বাস ও বদরউদ্দীন উমর সাহেবের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা হয়তো আমাদের সঙ্গে আসবেন। আর একটা ভুল ধারণা, ৭ দলের অধিকাংশই বামপন্থি নয়। আমি তো বাম নই, ভাসানী অনুসারী পরিষদও বাম নয়। এখানে শুধু দুটি দল বাম জোটে ছিল- এখানে বোঝার ভুল আছে। বাম বলে ইসলামী দল নিচ্ছে না, এ রকম নয়।
প্রশ্ন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে। শীর্ষ নেতৃত্ব সংকটের অভিযোগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
মান্না : খালেদা জিয়া এখন নেতৃত্বে নেই বললেই চলে। আমি যতদূর জানি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশ থেকে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেন। তাঁর যোগ্যতা ভালোমন্দ বলছি না। আমি বলছি, যতদূর সম্ভব আপডেট থেকে চেষ্টা করছেন। হোসনি মোবারক ও সুহার্তোর মতো নেতারাও ৩০-৩২ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। দীর্ঘ সময়ে স্বৈরাচার ক্ষমায় থাকলেই বিরোধী নেতৃত্ব ব্যর্থ- এ রকম নাও হতে পারে।
প্রশ্ন : বর্তমানে ভিপি নুর সম্পর্কে জনমনে নানা সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে? জোটের নেতা হিসেবে আপনার মন্তব্য কী?
মান্না : তিনি এখন পর্যন্ত জোটের সঙ্গে আছেন। তাঁর রাজনৈতিক বয়ানে দৃঢ়তা থাকে না, কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেক পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন- আমি দোষ দিচ্ছি না। তাঁরা একেবারেই নতুন রাজনীতিতে। অনেক বড় জায়গায় চলে গেছে, বড় দায়িত্ব পেয়ে গেছে। সে জন্য ভুল হতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সংশোধন করে নিতে পারে, তাদের জন্য কল্যাণ ও দেশের জন্য কল্যাণ। শুধু আবেগে বড় বড় কথা বলে রাজনীতি হবে না।
প্রশ্ন : ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক এবং জোট ও আপনাদের সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা বলছেন- তাঁর কাছে কোনো ব্যাখ্যা চাইবেন?
মান্না : ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা ভাবিনি। তাঁরা আমাদের সহযোগী ছিলেন এবং এখনও আছেন। তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। তবে তিনি যেভাবে কথা বলছেন, তাতে তো মনে হয়, আমাদের বয়কট করছেন। বয়কট করলে তো আমরা একেবারে পা ধরে কথা বলব- এ রকম হবে না। সূত্র : সমকাল