ঐতিহাসিক পলাশী দিবস আজ

- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৪:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০
- / ৯১ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: আজ ২৩ জুন, ঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডি দিবস। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আ¤্রকাননে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য।
পরাজয়ের পর নবাবের বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ নবাবকে আজও শ্রদ্ধা জানায়। তার সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। নবাবের সেনাবাহিনীর তুলনায় ইংরেজদের সেনা (৩ হাজার ৫শ’) সংখ্যা ছিল অনেক কম। বিশ্বাসঘাতকতা না হলে নবাবের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে তরুণ সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতাচ্যুত হন। যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিল ভাগীরথী নদীর তীরে আ¤্রকাননে। মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব পরাজিত হন।
এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্যও পড়েছেন, তারাও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং পলাশী যুদ্ধ সম্পর্কে অবগত আছেন। আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আ¤্রকাননে নবাবের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার অস্ত যায়, পরবর্তীতে উপমহাদেশকে আচ্ছন্ন করে। উপমহাদেশকে সেই গোলামীর গøানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে দুশো বছর। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার নবাবের পরাজয় জাতির জন্য বিরাট বড় একটি শিক্ষা।
পলাশীর প্রান্তরে নবাবের পরাজয়ের পেছনে ঐতিহাসিকগণ মীরজাফর দায়ী হলেও এর পেছনে ছিল এক গভীর ও অন্তর্নিহিত কারণ। ইতিহাস সম্পর্কে যারা সচেতন তারা জানেন ইংরেজদের সাথে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবাব সিরাজ-উ-দৌলার বাহিনী ছিল ৫০,০০০ হাজার আর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী ছিল ৩,৫০০। যে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজ-উ-দৌলার পরাজয় হয় বলে উল্লেখ করা হয়, তার অধীনে ছিল ১৬০০০ সৈন্য যারা নবাব বাহিনীর সাথে যুদ্ধের সময়ে প্রধান সেনাপতির হুকুমে নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। এরপরও নবাবের হাতে যে বিপুল সৈন্যসংখ্যা ছিল তা দিয়ে ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করা অসম্ভব ছিল না। এমনকি মীরজাফরের অধীনস্ত ১৬০০০ সৈন্য যদি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তাহলে নবাবের বিজয় হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাংলার নবাব সেদিন পরাজিত হয়ে, জীবন দিয়েও বাংলার মাটিকে, প্রিয় জন্মভূমিকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে রক্ষা করতে পারেননি। কেন পারলেন না? যেখানে সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রভান্ডার, রসদ ও বাহন বিদেশিদের তুলনায় অনেক বেশি তাছাড়া আপন প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকুলে তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয়ের কারণ ছিল জাতির মধ্যে অনৈক্য এবং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীদের ষড়যন্ত্র। সেদিন মীরজাফর, ইয়ার লতিফ খান, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, রায়দূর্লভ, জগৎশেঠ, মানিক চাঁদ, আমির চাঁদ প্রমুখ বিশ্বাসঘাতকগণ নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
সা¤্রাজ্যবাদীদের প্রলোভনে নিজ মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণ ছিল নিজেদের মধ্যে অনৈক্য, ক্ষমতার কাড়াকাড়ি ও হানাহানি। আমরা জানি, প্রাকৃতিক নিয়ম মোতাবেক ঐক্যে জয় আর অনৈক্যে পরাজয়। ১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশীর আ¤্রকাননে জাতির অনৈক্যের কারণে রবার্ট ক্লাইভের ৩৫০০ ইংরেজ বাহিনীর কাছে নবাবের ৫০,০০০ বাহিনীর পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। এটা ছিল জাতির জন্য বড় একটি শিক্ষা। আমরা যদি অনৈক্য, হানাহানি ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাতি হতে পারি প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত রাখতে পারি, তাহলে পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরি হবে না। যার জন্য বাংলার নবাবের পরাজয় হয়েছিল সেই শিক্ষা এখনই গ্রহণ করার সময় এসেছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। (দৈনিক সংগ্রাম)