ঊর্ধ্বগতি আরও ২ সপ্তাহ চলবে, টিকা নেয়নি মৃতদের ৭৮%

- প্রকাশের সময় : ১২:১৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ৫৩ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধরন ওমিক্রন দেশে বর্তমানে পুরোদমে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও দুই সপ্তাহ দেশে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে।
তারা বলেন, করোনা শনাক্তের হার আগামী মাসের শেষের দিকে দ্রুত কমার আগ পর্যন্ত মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। সরকারি তথ্য মতে, গত কয়েকদিন ধরে দেশে করোনার শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। তবে করোনায় আক্রান্ত অনেক মানুষ পরীক্ষা না করায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও শনাক্তের হার সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।
ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন হাসপাতালের মোট নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) শয্যার ২৪ শতাংশে এখন রোগী ভর্তি আছে, যা গত ১ জানুয়ারি থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ের তুলনায় হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) মোট শয্যার ১০ শতাংশ রোগীর জায়গায় এখন ২৭ শতাংশ শয্যায় রোগী আছে।
সুতরাং আমরা যদি এখনই সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের হাসপাতালগুলো শিগগিরই রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাবে।
অপরদিকে গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ১৪০ জনের মধ্যে পুরুষ ৮০ ও গর্ভবতীসহ ৬০ জন নারী।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় মোট মৃত ১৪০ জনের মধ্যে ১০৯ জন রোগীই করোনার টিকা নেননি, যা প্রায় ৭৮ ভাগ। শুধু ৩১ জন টিকা নিয়েছেন। টিকা গ্রহণকারী ৩১ জনের মধ্যে ছয়জন প্রথম ডোজ, ২৩ জন দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ দুইজন নিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার সংক্রমণ কমাতে সরকারকে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাধ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন।
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে বলেছেন, দেশে করোনা শনাক্ত চূড়ার দিকে যাচ্ছে। এজন্য করোনা শনাক্ত ক্রমাগত বাড়ছে। প্রাণঘাতী করোনার তৃতীয় ঢেউ ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের দিকে হ্রাস পাওয়ার ধাপ শুরু হতে পারে। তবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- এর ওপর নির্ভর করে এটি দ্রুত বা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে।
তিনি বলেন, করোনার র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট ব্যবহার করে দেশে দুই লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু আমি জানি না, কেন এ ধরনের পরীক্ষা দেশে এখনও এত কম। অনেক মানুষ করোনা পরীক্ষা বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং আমরা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাচ্ছি না। আর করোনা পরিস্থিতির আংশিক চিত্র পাওয়ায় আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মাঝে মাঝে সঠিক পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
করোনা সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে বলেছেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ দেখা যাবে। আগামী মাসের শেষের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে অনেক আক্রান্ত মানুষই পরীক্ষা করান না। তাই সরকারি হিসাবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিফলিত হয় না। সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্তের খুব ক্ষুদ্র অংশ রেকর্ড করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত এক বা দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকবে। এই ভাইরাস কাউকে ছাড়বে না। এটা উদ্বেগের যে গ্রামীণ এলাকার অনেক মানুষ এখনও করোনার টিকা নেয়নি। করোনার নমুনা পরীক্ষার করার বিষয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষ খুব কম সচেতন। অধিকাংশ জেলায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চললেও আমরা করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র পাব না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের এখন রোগী ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয়া উচিত। গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ মানুষ টিকা না নেয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা উচিত। যারা এখনও টিকার এক ডোজও নেয়নি তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই তাদের খুব সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়া বয়স্ক মানুষ ও যাদের একাধিক রোগ রয়েছে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত। কেননা তাদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় মোট মৃত ১৪০ জনের মধ্যে ৮৬ জন অর্থাৎ ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ বহুমাত্রিক ব্যাধি বা কো-মরবিডিটিতে (ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগব্যাধি) আক্রান্ত ছিলেন। কো-মরবিডিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী উচ্চ রক্তচাপে (৬৫ দশমিক ১ শতাংশ) আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।
একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও করোনায় মৃতদের মধ্যে প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের ব্যাপারে অনীহা ও অবহেলা ছিল। এর আগেও বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রবীণদের টিকা দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ সরকারের কাছে এর যথাযথ ডেটাবেস নেই।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আরও বেশি মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে সরকারকে টিকাদান কার্যক্রমের পরিধি ও গতি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাদের টিকা পাওয়ার কথা, যত শিগগির সম্ভব তাদের টিকা দেওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নাজির আহমেদ মনে করেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ মার্চের মাঝামাঝি সময়ে নিয়ন্ত্রণে এসে পড়তে পারে। দেশে আরেকটি ঢেউ পরে আবার আঘাত হানতে পারে। সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এপ্রিলে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় এর আগের দুই বছর এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়েছে।খবর সাম্প্রতিক দেশকাল
তিনি আরও বলেন, মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস খুব শিগগিরই বিদায় নেবে না। কেননা আরও বিপজ্জনক ধরন যে কোনো সময় আবির্ভূত হতে পারে। ভাইরাসটিকে সঙ্গে নিয়েই কীভাবে বাঁচা যায়, তা আমাদের শিখতে হবে।
হককথা/এমউএ