নিউইয়র্ক ০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ইসি’র জন্য অগ্নিপরীক্ষা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৭:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪১ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচনের আগে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক করতে পারবেন সিইসি। আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইতিমধ্যে। বিএনপি এখনো নীরব। অবশ্য দলটি আগেই বলে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে জাতীয় ও স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই তারা অংশ নেবে না। যদিও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি কি নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দেবে? নাকি তারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে? ওদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া এই সিটি নির্বাচন কতোটুকু সরকারি প্রভাবমুক্ত থাকবে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। যদিও সরকারি দল বলে আসছে নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে।

সরকারের এ কথাকে মাঠের বিরোধী দলগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা তারা প্রকাশ্যে বক্তৃতা বিবৃতিতে জানান দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো- পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি কি তাদের নিজ দলীয় নেতাদের থামিয়ে রাখতে পারবে? নাকি কেউ কেউ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়বেন? এক্ষেত্রেও বিএনপি কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছে দলীয় নেতাদের। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরও কিন্তু থেমে নেই আলোচনা। পাঁচ সিটিতেই কোনো কোনো বিএনপি নেতা আলোচনায় রয়েছে। প্রকাশ্যে এখনো কেউ ঘোষণা না দিলেও কেউ কেউ নীরবে প্রচারণাও চালাচ্ছে। এখানেও কথা থেকে যায়-বিএনপি থেকে দলছুট হয়ে নির্বাচন করা আর সরাসরি বিএনপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য।

সর্বত্র আলোচনা চলছে বিএনপি কি জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কোনো ভুল করছে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা কি আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে? যদিও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা যে ভোটের দৌড়ে অনেক পিছিয়ে এটাও বলাবলি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। প্রভাবমুক্ত রাখতে। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো ফলাফল করতে পারে। কিন্তু বিএনপি তো এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে- এটাই বিশ্বাস করে না। তাহলে এই সিটি নির্বাচনে আসলে কী হবে? নির্বাচন কমিশন কি নির্বাচন শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতে পারবে? সিইসি কি জোর গলায় বলতে পারবেন আমরা দেখিয়ে দিয়েছি নির্বাচন কীভাবে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত করা যায়। নাকি বিগত দিনে হওয়া অন্যসব নির্বাচনের মতো নির্বাচন হওয়া দরকার তাই করতে হবে-এই মনোভাবে নির্বাচন করতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সব দল ও সব মহলকে চিন্তার খোরাক এনে দিয়েছে। এটা সবাই জানেন, বিএনপি অংশ না নিলে কোনো নির্বাচনই অংশগ্রহণমূলক হবে না। আবার এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যও হবে না। তাইতো নির্বাচন কমিশনের এত চিন্তা। সরকারি দল আওয়ামী লীগ যতই বলুক কেউ আসুক বা না আসুক নির্বাচন সময়মতো হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। জনগণ ভোটও দেবে। কিন্তু দেশের জনগণ জানে বিএনপি না এলে নির্বাচন কী হবে। ইদানীং বিদেশিরাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জোরেশোরে বলছেন। তাদের এ বলায়ও একটা তাৎপর্য আছে। এ তাৎপর্য অনুধাবন করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে এলেই একটা পথ বেরুতে পারে। অন্যথায় সুড়ঙ্গের ওপাশের আলো আর এপাশ থেকে দেখা যাবে না। নির্বাচন কমিশন তখন কোন পথ বেছে নেবে? অথচ জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া এই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর মধ্যে একটা ঐকমত্য হতে পারতো। সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি এখন দাঁড়িয়ে। এমনিতেই ইসি’র প্রতি মাঠের রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট রয়েছে।

আরোও পড়ুন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শেষকৃত্য

এ অবস্থায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো আগে থেকেই রয়েছে। এমনিতেই গত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিভিন্ন উপনির্বাচন ও এ সময়ে হয়ে যাওয়া সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনও অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাষ্ট্র, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে। নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে দেশটির। এমন এক পরিস্থিতিতে পাঁচ সিটির নির্বাচন একতরফা করা হলে তাতে রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়তে পারে। সেই পরিস্থিতি সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে এমনটা ভাবা অবান্তর। এ ছাড়া পাঁচ সিটি নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতে নতুন প্রার্থী বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যার মধ্যে দুটিতে বর্তমান মেয়র বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে একজন প্রভাবশালী সাদিক আবদুল্লাহ। অন্যজন গাজীপুর সিটির জাহাঙ্গীর আলম। সাদিক আবদুল্লাহ এক পর্যায়ে এসে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও জাহাঙ্গীর আলম সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সিলেটেও এই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ঘিরে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে যেতে পারে। এদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরিকদেরও আগ্রহ নেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলে একতরফা নির্বাচন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ নির্বাচন বিএনপি’র জন্যও পরীক্ষা। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অবস্থানেই অটল বিএনপি। সেই অবস্থান থেকে দলটি পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠপর্যায়ের চাপ রয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর। অনেকেই সিটি নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আবারো নির্বাচন করতে পারেন-এমন আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করতে তিনি লন্ডন পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন। রূপনের বাবা বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি কামাল ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবার অনুসারীদের সহানুভূতি ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি রূপনের।

খুলনায় বিএনপি’র নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেছেন, অনেকে মনে করেন, এই নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমরা বিএনপি’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। গাজীপুরে বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দল সিদ্ধান্ত নিলে আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করবো। দল সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা কৌশল গ্রহণ করবো। আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে ছেড়ে দেয়া হবে না। ফলে বিএনপি’র এই নেতারা যদি নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বিএনপি’র অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে। তবে বিএনপি সিটি নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ নেবে না, এটি তারা পরিষ্কার করেছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আর অংশ নেবে না। সেটা সিটি নির্বাচন হোক আর জাতীয় নির্বাচন হোক। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান তাহলে তাদের পরিণতি উকিল আবদুস সাত্তারের মতো হবে। দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

ওদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিকে আবারো আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইসি’র পরীক্ষা নিন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ভালো কাজ করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও ভালো কাজ করবো। বিএনপি’র প্রতি আমাদের সব সময় আহ্বান থাকবে, যে আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন, আমাদের পরীক্ষা নিন। আপনারা তো আমাদের পরীক্ষাই নিচ্ছেন না। পরীক্ষা না নিয়েই আমরা যে অকৃতকার্য হলাম, আপনারা কীভাবে বুঝলেন? আমরা সব সময় পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ছোট ছোট দলের ওই রকম অফিস নাই, তাদের হয়তো যোগ্য প্রার্থী নাও থাকতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী নাই, হয়তো এইজন্যও নাও দিতে পারে। সেটা তো তাদের ব্যাপার। বড় দলগুলো তো আসছে। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এটা তো তাদের রাজনৈতিক কৌশল। এটা তো আমাদের ব্যর্থতা না। তারা কী বলেছে যে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ নির্বাচন করেছে, এজন্য আসবে না? কমিশনার আলমগীর যাই বলুক নির্বাচন কমিশন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে যে আরেক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি তা স্পষ্ট। সূত্র : মানবজমিন
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ইসি’র জন্য অগ্নিপরীক্ষা

প্রকাশের সময় : ০১:৩৭:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : জাতীয় নির্বাচনের আগে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক করতে পারবেন সিইসি। আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইতিমধ্যে। বিএনপি এখনো নীরব। অবশ্য দলটি আগেই বলে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে জাতীয় ও স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই তারা অংশ নেবে না। যদিও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি কি নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দেবে? নাকি তারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে? ওদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া এই সিটি নির্বাচন কতোটুকু সরকারি প্রভাবমুক্ত থাকবে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। যদিও সরকারি দল বলে আসছে নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে।

সরকারের এ কথাকে মাঠের বিরোধী দলগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা তারা প্রকাশ্যে বক্তৃতা বিবৃতিতে জানান দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো- পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি কি তাদের নিজ দলীয় নেতাদের থামিয়ে রাখতে পারবে? নাকি কেউ কেউ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়বেন? এক্ষেত্রেও বিএনপি কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছে দলীয় নেতাদের। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরও কিন্তু থেমে নেই আলোচনা। পাঁচ সিটিতেই কোনো কোনো বিএনপি নেতা আলোচনায় রয়েছে। প্রকাশ্যে এখনো কেউ ঘোষণা না দিলেও কেউ কেউ নীরবে প্রচারণাও চালাচ্ছে। এখানেও কথা থেকে যায়-বিএনপি থেকে দলছুট হয়ে নির্বাচন করা আর সরাসরি বিএনপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য।

সর্বত্র আলোচনা চলছে বিএনপি কি জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কোনো ভুল করছে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা কি আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে? যদিও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা যে ভোটের দৌড়ে অনেক পিছিয়ে এটাও বলাবলি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। প্রভাবমুক্ত রাখতে। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো ফলাফল করতে পারে। কিন্তু বিএনপি তো এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে- এটাই বিশ্বাস করে না। তাহলে এই সিটি নির্বাচনে আসলে কী হবে? নির্বাচন কমিশন কি নির্বাচন শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতে পারবে? সিইসি কি জোর গলায় বলতে পারবেন আমরা দেখিয়ে দিয়েছি নির্বাচন কীভাবে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত করা যায়। নাকি বিগত দিনে হওয়া অন্যসব নির্বাচনের মতো নির্বাচন হওয়া দরকার তাই করতে হবে-এই মনোভাবে নির্বাচন করতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সব দল ও সব মহলকে চিন্তার খোরাক এনে দিয়েছে। এটা সবাই জানেন, বিএনপি অংশ না নিলে কোনো নির্বাচনই অংশগ্রহণমূলক হবে না। আবার এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যও হবে না। তাইতো নির্বাচন কমিশনের এত চিন্তা। সরকারি দল আওয়ামী লীগ যতই বলুক কেউ আসুক বা না আসুক নির্বাচন সময়মতো হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। জনগণ ভোটও দেবে। কিন্তু দেশের জনগণ জানে বিএনপি না এলে নির্বাচন কী হবে। ইদানীং বিদেশিরাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জোরেশোরে বলছেন। তাদের এ বলায়ও একটা তাৎপর্য আছে। এ তাৎপর্য অনুধাবন করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে এলেই একটা পথ বেরুতে পারে। অন্যথায় সুড়ঙ্গের ওপাশের আলো আর এপাশ থেকে দেখা যাবে না। নির্বাচন কমিশন তখন কোন পথ বেছে নেবে? অথচ জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া এই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর মধ্যে একটা ঐকমত্য হতে পারতো। সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি এখন দাঁড়িয়ে। এমনিতেই ইসি’র প্রতি মাঠের রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট রয়েছে।

আরোও পড়ুন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শেষকৃত্য

এ অবস্থায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো আগে থেকেই রয়েছে। এমনিতেই গত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিভিন্ন উপনির্বাচন ও এ সময়ে হয়ে যাওয়া সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনও অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাষ্ট্র, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে। নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে দেশটির। এমন এক পরিস্থিতিতে পাঁচ সিটির নির্বাচন একতরফা করা হলে তাতে রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়তে পারে। সেই পরিস্থিতি সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে এমনটা ভাবা অবান্তর। এ ছাড়া পাঁচ সিটি নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতে নতুন প্রার্থী বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যার মধ্যে দুটিতে বর্তমান মেয়র বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে একজন প্রভাবশালী সাদিক আবদুল্লাহ। অন্যজন গাজীপুর সিটির জাহাঙ্গীর আলম। সাদিক আবদুল্লাহ এক পর্যায়ে এসে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও জাহাঙ্গীর আলম সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সিলেটেও এই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ঘিরে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে যেতে পারে। এদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শরিকদেরও আগ্রহ নেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলে একতরফা নির্বাচন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ নির্বাচন বিএনপি’র জন্যও পরীক্ষা। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অবস্থানেই অটল বিএনপি। সেই অবস্থান থেকে দলটি পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠপর্যায়ের চাপ রয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর। অনেকেই সিটি নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আবারো নির্বাচন করতে পারেন-এমন আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করতে তিনি লন্ডন পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন। রূপনের বাবা বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি কামাল ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবার অনুসারীদের সহানুভূতি ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি রূপনের।

খুলনায় বিএনপি’র নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেছেন, অনেকে মনে করেন, এই নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমরা বিএনপি’র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। গাজীপুরে বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দল সিদ্ধান্ত নিলে আমরা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করবো। দল সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা কৌশল গ্রহণ করবো। আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে ছেড়ে দেয়া হবে না। ফলে বিএনপি’র এই নেতারা যদি নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বিএনপি’র অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে। তবে বিএনপি সিটি নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ নেবে না, এটি তারা পরিষ্কার করেছে। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আর অংশ নেবে না। সেটা সিটি নির্বাচন হোক আর জাতীয় নির্বাচন হোক। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান তাহলে তাদের পরিণতি উকিল আবদুস সাত্তারের মতো হবে। দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

ওদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিকে আবারো আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইসি’র পরীক্ষা নিন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ভালো কাজ করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও ভালো কাজ করবো। বিএনপি’র প্রতি আমাদের সব সময় আহ্বান থাকবে, যে আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন, আমাদের পরীক্ষা নিন। আপনারা তো আমাদের পরীক্ষাই নিচ্ছেন না। পরীক্ষা না নিয়েই আমরা যে অকৃতকার্য হলাম, আপনারা কীভাবে বুঝলেন? আমরা সব সময় পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ছোট ছোট দলের ওই রকম অফিস নাই, তাদের হয়তো যোগ্য প্রার্থী নাও থাকতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী নাই, হয়তো এইজন্যও নাও দিতে পারে। সেটা তো তাদের ব্যাপার। বড় দলগুলো তো আসছে। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, এটা তো তাদের রাজনৈতিক কৌশল। এটা তো আমাদের ব্যর্থতা না। তারা কী বলেছে যে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ নির্বাচন করেছে, এজন্য আসবে না? কমিশনার আলমগীর যাই বলুক নির্বাচন কমিশন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে যে আরেক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি তা স্পষ্ট। সূত্র : মানবজমিন
সুমি/হককথা