ইসরাফিল আলম এমপি’র ইন্তেকাল

- প্রকাশের সময় : ০১:১৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
- / ১১৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বিশিষ্ট রাজনীতিক, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের এমপি ইসরাফিল আলম (৫৪) ইন্তেকাল করেছেন। ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে সোমবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৬টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরন করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি নওগাঁ-৬ আসনে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ইসরাফিল আলম এমপি’র মৃত্যুর বিষয়টি প্রথমে মিডিয়াকে নিশ্চিত করেন তাঁর বড় মেয়ে ইসরাত সুলতানা। ইসরাফিল আলম দীর্ঘদিন ধরে যক্ষা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চিকিৎসার কিছুদিন পর দ্বিতীয় দফা নমুনা পরীক্ষায় তাঁকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপতির শোক
এদিকে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এমপি’র মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সোমবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শ্রমিক রাজনীতি দিয়েই তার রাজনীতিতে পদার্পণ। তিনি সংসদে সবসময় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরতেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রতিশ্রæতিশীল ও নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক নেতাকে হারাল।’
রাষ্ট্রপতি তাঁর বিবৃতিতে মরহুমের রুহের মাগফেরাত করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এমপি’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসরাফিল আলম আজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন।’ শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রানীগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল ও ইসরাফিল আলমের সহধর্মিণী সুলতানা পারভীন বিউটি মিডিয়াকে জানান, তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি গত ১৭ জুলাই থেকে স্কয়ার হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। গত ৬ জুলাই অসুস্থতা নিয়ে তিনি প্রথম ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তার করোনা ধরা পড়ে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি বাড়ি চলে যান। পরে পরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ আসে। এ অবস্থায় গত ১৭ জুলাই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার রাত ১১টা দিকে তার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হয়। বাড়িতে নিয়ে আসার পর ১৭ জুলাই তার কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। ওই দিন আমরা তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন। সোমবার সকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে মরহুম আজিজুর রহমানের সম্ভ্রান্তমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিতাস গ্যাস কম্পানিতে মিটার রিডার হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। তার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এবং একাদশ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে পুরনায় নির্বাচিত হন।