নিউইয়র্ক ০৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আম্ফানে বিপুল ক্ষতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মে ২০২০
  • / ৮০ বার পঠিত

ঝালকাঠির রাজাপুরের বাদুরতলা এলাকায় বিষখালী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। বৃহস্পতিবার সকালে বাদুরতলার মিলঘর এলাকা থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আরিফুর রহমান: ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে সাতক্ষীরার হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর ১৫ টনের মতো আম ইউরোপে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। এবারও বিদেশের মাটিতে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলার শ্যামনগর উপজেলার জাকির হোসেন। কিন্তু বুধবার (২০ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার বাতাসের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে জাকির হোসেনের এক বিঘা জমিতে করা ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান। গাছে আর কোনো আম নেই। সব ঝরে গেছে। পুরো সাতক্ষীরার চিত্র একই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ঝরে পড়া আম কেজিতে এখন ১০ টাকা করে বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা।
আমের রাজ্য খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র আরো করুণ। আম্ফান সব কিছু তছনছ করে দেওয়ার পরের দিন বৃহস্পতিবার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া বাজারে ঝরে পড়া আম বিক্রি হয়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে। কৃষকের চোখেমুখে অন্ধকার। ঋণ নিয়ে আমের ব্যবসার ওপর তাঁদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। পুরো মেহেরপুরে বাগানের নিচে মণকে মণ বিভিন্ন জাতের আম পড়ে আছে। কেনার মানুষ নেই। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশিদুল ইসলাম পল্লব বলছিলেন, মেহেরপুরের গাংনি উপজেলায় বাগানের পর বাগান গাছের নিচে আম পড়ে আছে। আর মাত্র এক মাস সময় পেলে আমগুলো পূর্ণতা পেত।
প্রায় তিন মাস ধরে করোনাভাইরাস কৃষকের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে, নতুন করে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে কৃষকের পুরো কোমর ভেঙে দিয়েছে। আম্ফান যে ক্ষতি করে দিয়ে গেল, তা কাটিয়ে উঠতে কত দিন লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না। এদিকে সারা দেশে আমের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার একটি ধারণা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে ১৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আমের ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ হিসেবে যাতে আম কেনা হয়। মন্ত্রী জানান, সারা দেশে ২০০টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও বাড়িঘরের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তাঁদের হিসাবে মোট এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আজ থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আম্ফানের প্রভাবে সারা দেশে ১০ জন মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬ জেলা। আম্ফানে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাছের ঘের। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবদুল মান্নান মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের দিয়েছেন। আম্ফান ভাসিয়ে নিয়েছে তাঁর মাছের ঘের। নতুন পুঁজি নেই। ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাঁকে। মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সাতক্ষীরায় আম্ফানের প্রভাবে সাত হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে কাঁকড়া, কুচিয়া ও গলদা চিংড়ি এবার বিদেশে রপ্তানির পথ সংকুচিত হলো। শুধু সাতক্ষীরা নয়, বাগেরহাটের চার হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে এ বছর বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও কমে যাবে। করোনার প্রভাবে একদিকে কমছে পোশাক রপ্তানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও টান পড়েছে। আম ও চিংড়ি রপ্তানি করে যেটুকু বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যেত, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সেখানেও টান পড়ছে।
আম্ফানের আঘাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি যখন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন দুই কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা দেশের মোট গ্রাহকের প্রায় ৬০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু করে বিতরণ সংস্থাগুলো। তবে দুপুর পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুত ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ১৫ মে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশ উপকূলে আম্ফান প্রবেশ শুরু করে বুধবার বিকেল ৪টায়। সাতক্ষীরা-খুলনা দিয়ে ঢুকে যশোর-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, পাবনা হয়ে এখন স্থল নিম্নচাপ আকারে রূপ নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে আছে আম্ফান।
বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সিডরের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল আম্ফান। ২০০৭ সালে সিডর যখন বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে, তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। আর আম্ফানের গতিবেগ ছিল ১৮০ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের আইলার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১১৩ কিলোমিটার। আম্ফানের প্রভাবে বুধবার রাতে উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, আম্ফানের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরা। কারণ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে আম্ফান প্রথম আঘাত হানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অংশে। যার ফলে আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা। উপকূলীয় চারটি উপজেলার ২০টিরও বেশি পয়েন্টে নদ-নদীর গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। ঝড়ের তান্ডবে উড়ে গেছে কয়েক হাজার কাঁচা বাড়িঘর এবং বিধ্বস্ত হয়েছে সহ¯্রাধিক আধাপাকা বাড়ি। কয়েক লাখ গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
আবহাওয়া অফিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাস আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতো এবারও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় বুক চিতিয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। আম্ফানে যতটা ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল, তা অনেকটা শক্তি কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। সে কারণে এবারও সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আম্ফানের কারণে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বন বিভাগ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন বন বিভাগের ১০টির বেশি কাঠের জেটি এবং ৩০টির বেশি স্টাফ ব্যারাকের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছাসের কারণে বন বিভাগের ৬০টির বেশি পুকুরে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। গাছগাছালির মধ্যে কেওড়াগাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ভেঙে যাওয়া গাছপালা অপসারণ করা হবে না। সুন্দরবন নিজস্ব প্রাকৃতিক ক্ষমতাবলেই এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। ছয় মাস আগে সাতক্ষীরা-খুলনা অংশে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনের অবকাঠামো ও গাছ মিলিয়ে মোট এক কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছিল বন বিভাগ। ঘণ্টায় বাতাসে ১১৩ কিলোমিটার বেগে আসা বুলবুলের চেয়ে আম্ফানের গতিবেগ ছিল অনেক বেশি, ১৬০ কিলোমিটার। যার ফলে এবার ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে বন বিভাগ।
আম্ফানের তান্ডবে গাছ পড়ে যশোরের চৌগাছায় ও বাঘারপাড়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে অর্ধশত। অসংখ্য কাঁচা ঘর পড়ে গেছে। উড়ে গেছে আধাপাকা বাড়ির টিনের চাল। এ ছাড়া গাছ উপড়ে ও ডাল ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সচল করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
যশোরে বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। সকাল হতেই যশোরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ঝড়ের ধ্বংস চিহ্ন। প্রায় প্রতিটি এলাকায় গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ে। যশোরের আরবপুর ইউনিয়নের পতেঙ্গালী গ্রামে কথা হয় তাহাজ্জুত হোসেনের সঙ্গে। ঝড়ে তাঁর টিনের ঘর উড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঝড় আমি দেখিনি। বাবা রে, সেকি জোর বাতাসের!’
সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় চারটিসহ ৯ উপজেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে ২১ হাজার ২৮৮টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। এতে প্রায় ৪৪৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ভেঙে গেছে গাছের ডালপালা। কোথাও কোথাও উপড়ে পড়েছে গাছ।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে এক লাখ ৭৬ হাজার সাত হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাকে আমরা এখনো টাকার অঙ্কে কনভার্ট করতে পারিনি।’ মন্ত্রী দাবি করেন, এবার বোরো ধানের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে সাত থেকে আট দিন আগে ঘূর্ণিঝড় হলে কৃষিতে আরো বেশি ক্ষতি হতো। কৃষিমন্ত্রী জানান, টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা করা হবে, তাঁদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশের ৪৬টি জেলার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বয়ে গেছে। ফলে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আম, মাছের ঘের, চিনাবাদাম, লিচু, কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আম্ফানের বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। বৃহস্পতিবার সারা দিন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। দুপুর পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি। আম্ফানের প্রভাবে বরগুনায় ১১ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনাবাদাম, ভুট্টার ক্ষেতসহ শত শত সবজির বাগান।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে : কৃষিমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, আম্ফান আঘাত হানার আগে ৭২ শতাংশ বোরো ধান উঠানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ২৮ শতাংশ ধান উঠানো যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ সামান্য, যা খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও মসলা চাষিদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন মৌসুমে বিনা মূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, ফল ও পান চাষিদের মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষিঋণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কৃষিমন্ত্রী জানান, ভুট্টা ৫ ভাগ, পাট ৫ ভাগ, পান ১৫ ভাগ, সবজি ২৫ ভাগ, চিনাবাদাম ২০ ভাগ, তিল ২০ ভাগ, লিচু ৫ ভাগ, কলা ১০ ভাগ, পেঁপে ৫০ ভাগ, মরিচ ৩০ ভাগ, সয়াবিন ৫০ ভাগ, এবং আউশ ছয় হাজার ৫২৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (কালের কন্ঠ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

আম্ফানে বিপুল ক্ষতি

প্রকাশের সময় : ১২:৫০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মে ২০২০

ঝালকাঠির রাজাপুরের বাদুরতলা এলাকায় বিষখালী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। বৃহস্পতিবার সকালে বাদুরতলার মিলঘর এলাকা থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আরিফুর রহমান: ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে সাতক্ষীরার হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর ১৫ টনের মতো আম ইউরোপে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। এবারও বিদেশের মাটিতে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলার শ্যামনগর উপজেলার জাকির হোসেন। কিন্তু বুধবার (২০ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার বাতাসের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে জাকির হোসেনের এক বিঘা জমিতে করা ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান। গাছে আর কোনো আম নেই। সব ঝরে গেছে। পুরো সাতক্ষীরার চিত্র একই। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ঝরে পড়া আম কেজিতে এখন ১০ টাকা করে বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা।
আমের রাজ্য খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র আরো করুণ। আম্ফান সব কিছু তছনছ করে দেওয়ার পরের দিন বৃহস্পতিবার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া বাজারে ঝরে পড়া আম বিক্রি হয়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে। কৃষকের চোখেমুখে অন্ধকার। ঋণ নিয়ে আমের ব্যবসার ওপর তাঁদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। পুরো মেহেরপুরে বাগানের নিচে মণকে মণ বিভিন্ন জাতের আম পড়ে আছে। কেনার মানুষ নেই। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশিদুল ইসলাম পল্লব বলছিলেন, মেহেরপুরের গাংনি উপজেলায় বাগানের পর বাগান গাছের নিচে আম পড়ে আছে। আর মাত্র এক মাস সময় পেলে আমগুলো পূর্ণতা পেত।
প্রায় তিন মাস ধরে করোনাভাইরাস কৃষকের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে, নতুন করে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে কৃষকের পুরো কোমর ভেঙে দিয়েছে। আম্ফান যে ক্ষতি করে দিয়ে গেল, তা কাটিয়ে উঠতে কত দিন লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না। এদিকে সারা দেশে আমের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার একটি ধারণা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে ১৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আমের ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ হিসেবে যাতে আম কেনা হয়। মন্ত্রী জানান, সারা দেশে ২০০টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও বাড়িঘরের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তাঁদের হিসাবে মোট এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আজ থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আম্ফানের প্রভাবে সারা দেশে ১০ জন মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬ জেলা। আম্ফানে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাছের ঘের। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবদুল মান্নান মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের দিয়েছেন। আম্ফান ভাসিয়ে নিয়েছে তাঁর মাছের ঘের। নতুন পুঁজি নেই। ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাঁকে। মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সাতক্ষীরায় আম্ফানের প্রভাবে সাত হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে কাঁকড়া, কুচিয়া ও গলদা চিংড়ি এবার বিদেশে রপ্তানির পথ সংকুচিত হলো। শুধু সাতক্ষীরা নয়, বাগেরহাটের চার হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে এ বছর বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও কমে যাবে। করোনার প্রভাবে একদিকে কমছে পোশাক রপ্তানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও টান পড়েছে। আম ও চিংড়ি রপ্তানি করে যেটুকু বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যেত, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সেখানেও টান পড়ছে।
আম্ফানের আঘাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি যখন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন দুই কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যা দেশের মোট গ্রাহকের প্রায় ৬০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু করে বিতরণ সংস্থাগুলো। তবে দুপুর পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুত ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ১৫ মে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ থেকে রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড়ে। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশ উপকূলে আম্ফান প্রবেশ শুরু করে বুধবার বিকেল ৪টায়। সাতক্ষীরা-খুলনা দিয়ে ঢুকে যশোর-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, পাবনা হয়ে এখন স্থল নিম্নচাপ আকারে রূপ নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে আছে আম্ফান।
বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সিডরের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল আম্ফান। ২০০৭ সালে সিডর যখন বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে, তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। আর আম্ফানের গতিবেগ ছিল ১৮০ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের আইলার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১১৩ কিলোমিটার। আম্ফানের প্রভাবে বুধবার রাতে উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, আম্ফানের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরা। কারণ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে আম্ফান প্রথম আঘাত হানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অংশে। যার ফলে আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা। উপকূলীয় চারটি উপজেলার ২০টিরও বেশি পয়েন্টে নদ-নদীর গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। ঝড়ের তান্ডবে উড়ে গেছে কয়েক হাজার কাঁচা বাড়িঘর এবং বিধ্বস্ত হয়েছে সহ¯্রাধিক আধাপাকা বাড়ি। কয়েক লাখ গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
আবহাওয়া অফিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাস আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতো এবারও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় বুক চিতিয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। আম্ফানে যতটা ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল, তা অনেকটা শক্তি কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। সে কারণে এবারও সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আম্ফানের কারণে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বন বিভাগ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন বন বিভাগের ১০টির বেশি কাঠের জেটি এবং ৩০টির বেশি স্টাফ ব্যারাকের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছাসের কারণে বন বিভাগের ৬০টির বেশি পুকুরে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। গাছগাছালির মধ্যে কেওড়াগাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ভেঙে যাওয়া গাছপালা অপসারণ করা হবে না। সুন্দরবন নিজস্ব প্রাকৃতিক ক্ষমতাবলেই এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। ছয় মাস আগে সাতক্ষীরা-খুলনা অংশে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনের অবকাঠামো ও গাছ মিলিয়ে মোট এক কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছিল বন বিভাগ। ঘণ্টায় বাতাসে ১১৩ কিলোমিটার বেগে আসা বুলবুলের চেয়ে আম্ফানের গতিবেগ ছিল অনেক বেশি, ১৬০ কিলোমিটার। যার ফলে এবার ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে বন বিভাগ।
আম্ফানের তান্ডবে গাছ পড়ে যশোরের চৌগাছায় ও বাঘারপাড়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে অর্ধশত। অসংখ্য কাঁচা ঘর পড়ে গেছে। উড়ে গেছে আধাপাকা বাড়ির টিনের চাল। এ ছাড়া গাছ উপড়ে ও ডাল ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সচল করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
যশোরে বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। সকাল হতেই যশোরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ঝড়ের ধ্বংস চিহ্ন। প্রায় প্রতিটি এলাকায় গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ে। যশোরের আরবপুর ইউনিয়নের পতেঙ্গালী গ্রামে কথা হয় তাহাজ্জুত হোসেনের সঙ্গে। ঝড়ে তাঁর টিনের ঘর উড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঝড় আমি দেখিনি। বাবা রে, সেকি জোর বাতাসের!’
সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় চারটিসহ ৯ উপজেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে ২১ হাজার ২৮৮টি চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। এতে প্রায় ৪৪৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ভেঙে গেছে গাছের ডালপালা। কোথাও কোথাও উপড়ে পড়েছে গাছ।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে এক লাখ ৭৬ হাজার সাত হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাকে আমরা এখনো টাকার অঙ্কে কনভার্ট করতে পারিনি।’ মন্ত্রী দাবি করেন, এবার বোরো ধানের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে সাত থেকে আট দিন আগে ঘূর্ণিঝড় হলে কৃষিতে আরো বেশি ক্ষতি হতো। কৃষিমন্ত্রী জানান, টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা করা হবে, তাঁদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশের ৪৬টি জেলার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বয়ে গেছে। ফলে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আম, মাছের ঘের, চিনাবাদাম, লিচু, কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আম্ফানের বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। বৃহস্পতিবার সারা দিন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। দুপুর পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি। আম্ফানের প্রভাবে বরগুনায় ১১ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনাবাদাম, ভুট্টার ক্ষেতসহ শত শত সবজির বাগান।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে : কৃষিমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, আম্ফান আঘাত হানার আগে ৭২ শতাংশ বোরো ধান উঠানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ২৮ শতাংশ ধান উঠানো যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ সামান্য, যা খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও মসলা চাষিদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন মৌসুমে বিনা মূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, ফল ও পান চাষিদের মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষিঋণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কৃষিমন্ত্রী জানান, ভুট্টা ৫ ভাগ, পাট ৫ ভাগ, পান ১৫ ভাগ, সবজি ২৫ ভাগ, চিনাবাদাম ২০ ভাগ, তিল ২০ ভাগ, লিচু ৫ ভাগ, কলা ১০ ভাগ, পেঁপে ৫০ ভাগ, মরিচ ৩০ ভাগ, সয়াবিন ৫০ ভাগ, এবং আউশ ছয় হাজার ৫২৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (কালের কন্ঠ)