আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি বিএনপির
- প্রকাশের সময় : ০১:১৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
- / ৪২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে অলআউট মাঠে নামার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদুল ফিতরের পরই রাজপথে নামার কথা ভাবছেন নেতারা। সে লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের ধরন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মত নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই ডাকা হতে পারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা।ওই সভায় আন্দোলনের সময় ও কর্মসূচি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একইসঙ্গে মাঠের আন্দোলনে গতি আনতে পূরণ করা হতে পারে স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদও। রমজান মাসজুড়ে সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের সক্ষমতা প্রমাণে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। এর অংশ হিসাবে রমজানজুড়ে ইফতার রাজনীতির আড়ালে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। প্রথমবারের মতো রাজধানীর ৫০ থানায় ইফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকবেন অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় সব নেতাকর্মীও। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমর্থন আদায়ে বিএনপির পক্ষ থেকেও একাধিক ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সমমনা দল ও বিএনপিপন্থি পেশাজীবীরাও আয়োজন করবে ইফতার পার্টি।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। দু-একদিনের মধ্যে সভার তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান আন্দোলন সামনে রেখে এ সভাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি দশ দিনব্যাপী সারা দেশের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আন্দোলন ও নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যুতে মতামত দিয়েছেন। এখন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এ দুই সভার মতামতকে সমন্বয় করে আন্দোলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া আন্দোলনের গতি আনতে স্থায়ী কমিটিসহ সম্পাদকীয় শূন্য পদগুলো পূরণের সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের কয়েকদিন আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রথম নির্বাহী কমিটির সভা হয়। সে সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি (পদাধিকারবলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য) আমন্ত্রিত ছিলেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, মুখের কথায় এ সরকার দাবি মেনে নেবে না এটা পরিষ্কার। তাই মাঠের আন্দোলন ছাড়া আমরা বিকল্প কিছু ভাবছি না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনকে আরও কীভাবে বেগবান করা যায় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
আরোও পড়ুন । সৌদি আরবে ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর খবর
তিনি বলেন, অতীত ইতিহাস বলে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে কখনো আন্দোলন হয় না। সময় এবং পরিস্থিতি বলে দেবে আন্দোলন কখন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সাংগঠনিকভাবে আমরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছি। গয়েশ্বর বলেন, আন্দোলন দমাতে সরকার নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকে এখনো বাড়িছাড়া। হোটেলে বা কোথাও কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানও করা যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হামলে পড়ে সবাইকে আটক করছে। কিন্তু এভাবে মামলা ও গ্রেফতার করে এবার আন্দোলন দমানো যাবে না। জনগণ জেগে উঠেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, রমজানকে সাংগঠনিক মাস ধরে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ মাসজুড়েই চলবে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার চিন্তা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়া রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না। নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ার ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসাবে এবার ইফতারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হবে। প্রথম রমজানে লেডিস ক্লাবে এতিম ও আলেম উলামাদের সঙ্গে হবে ইফতার। এরপর ৪ রমজান পেশাজীবী, ৭ রমজান কূটনৈতিক ও ১১ রমজান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবে বিএনপি। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এবারের ইফতার রাজনীতির বিশেষ গুরুত্ব হচ্ছে প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। অতীতে মহানগরের উদ্যোগে একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করা হতো। কিন্তু আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে এবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার যুবদলের এক যৌথ সভা হয়। সেই সভায় উপস্থিত হন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা। এছাড়া ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবার মহানগরের উদ্যোগে রাজধানীর সব থানায় ইফতারের আয়োজন করা হবে। সেই ইফতারের সব অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ইফতার সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে করা হবে প্রস্তুতি সভাও। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে ১৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনে অন্তত তিনটি থানা রয়েছে। একইদিন তিন থানায় হবে ইফতার। ২৮ মার্চ থেকে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আরোও পড়ুন । ‘বাংলাদেশ ৮৮ ইউএসএ’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তী ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
জানা গেছে, বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নিয়ে অনেকের নানা অভিযোগ আছে। তারা রাজপথে কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। সারা দেশের মতো ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন হলে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতো। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাতে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠন করে। কিন্তু তারপরও থানা এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক এলাকায় থানা বিএনপি নেতাদের কথা অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানছে না। যার যার মতো করে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সমন্বয়হীনতা দূর করে সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে অন্যান্য মহানগরীতেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। ইতোমধ্যে যুবদলের পক্ষ থেকে ১০ মহানগরীতে ইফতার পার্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক যুগান্তরকে বলেন, এবার রমজানে ব্যাপকভাবে ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় হবে। যা আগামী আন্দোলনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন যুগান্তরকে বলেন, প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানায় ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা থাকলে দূর হবে। বাড়বে ঐক্য। শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য মহানগরীতেও ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তিও যাচাই করার সুযোগ হবে। সূত্র : যুগান্তর
সাথী / হককথা