নিউইয়র্ক ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর : মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাঠগড়ায় খালেদা জিয়া

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:২৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
  • / ৫৫৫ বার পঠিত

ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়ে সময় চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সময়ও দিলেন মোদি। সাক্ষাতও হলো। কিন্তু ক্ষণিকের সেই খালেদা জিয়ার বৈঠকে লাভ কী হল? এটা জানা না গেলেও কাঠগড়ায় দাড়াতে হলো বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এ বৈঠক নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদী ফিরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে বাংলাদেশের সর্বত্র আলাপ-আলোচনায় এখন এটাই প্রধান মুখরোচক বিষয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন- মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন খালেদা জিয়া, এবং এর জন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবই দায়ী।
গত সাধারণ নির্বাচনে দলকে অংশগ্রহণ করতে না-দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বিএনপি। সংসদে কোনও প্রতিনিধি না-থাকায় সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বিএনপি ও দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার কূটনৈতিক গুরুত্ব তলানিতে ঠেকেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সেই অসহায় অবস্থাটিই হাটে হাঁড়ি ভাঙা হয়ে গিয়েছে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে।
প্রোটোকল মেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদার আগে সময় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ, জাসদ-এর হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। রওশন সংসদে বিরোধী নেত্রী, ইনু ও মেনন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সরকারের শরিক হিসেবে সংসদে তাঁদের বেশ কয়েক জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। তাই খালেদাকে বসিয়ে রেখে তাঁর সামনেই ইনু-মেননদের ডাক পড়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনার জন্য। সবার শেষে খালেদার জন্য তখন মিনিট দশেক সময় হাতে ছিল মোদীর।
সময় পাবেন না বুঝেই নিজের বক্তব্য একটি কাগজে নোট করে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু সেগুলির সব ক’টি তিনি পড়েও উঠতে পারেননি বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। কিন্তু যে ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে নালিশ করেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলে অভিযোগ করেছেন, তাতেও প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি নেতা মইন খান অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, মোদী নিজে গণতান্ত্রিক মানুষ। গণতান্ত্রিক পথেই তিনি সমাজের সাধারণ স্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে উঠে এসেছেন। সে জন্যই তার কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র না-থাকার অভিযোগটি তুলেছেন বিএনপি নেত্রী। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন- সব সংস্থাকে হাসিনা সরকার কুক্ষিগত করে নিজের হাতিয়ার করেছে বলেও খালেদা মোদীর কাছে নালিশ করেছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, শুধু নিজের দেশের সরকারই নয়, দিল্লিতে আগের মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধেও খালেদা অনুযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদীর কাছে। বিএনপি নেত্রীর অভিযোগ, মনমোহন সরকারের প্রশ্রয়েই ভোটের ‘প্রহসন করে’ শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখল করেছেন। তিনি আশা করেন, মোদীর সরকার এই নীতি পুনর্বিবেচনা করবে।
মোদী তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন- কেন তিনি হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করছেন না? জবাবে খালেদা বলেন, তারা বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েও সরকারের আচরণে পিছিয়ে আসেন। মোদী তখন তাকে বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অন্য কোনও পথে হাঁটার সুযোগ সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। আলোচনায় না-বসলে কোনও সমস্যার সমাধানও মেলে না।
কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা- এই কথা বলে আসলে খালেদাকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শই দিয়েছেন মোদী। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনও পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা যে ভারত মেনে নেবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মনমোহন সরকারের বাংলাদেশ নীতি মেনেই মোদীর সরকার চলছে। তাই আগের সরকারের বিরুদ্ধে তোলা খালেদার অভিযোগকেও আমল দেননি মোদী।
বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য যোগাযোগের বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছে মোদীর মন পেতে চেয়েছেন খালেদা। কিন্তু বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগেই সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দলের নেতা হান্নান শাহ এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছেন, এটা আদতে ভারতের দাবির কাছে মাথা নুইয়ে করিডরের সুবিধা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়। এর ফলে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না। ঢাকা কোনও রাজস্বও পাবে না। তার দাবি অনুযায়ী, যা লাভ হবে সবই ভারতের। একই কথা বলে ভারতের সঙ্গে হওয়া সব চুক্তির বিরোধিতা করেছে খালেদা জিয়ার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর : মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাঠগড়ায় খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ০৯:২৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫

ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজেই উদ্যোগী হয়ে সময় চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সময়ও দিলেন মোদি। সাক্ষাতও হলো। কিন্তু ক্ষণিকের সেই খালেদা জিয়ার বৈঠকে লাভ কী হল? এটা জানা না গেলেও কাঠগড়ায় দাড়াতে হলো বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এ বৈঠক নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদী ফিরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে বাংলাদেশের সর্বত্র আলাপ-আলোচনায় এখন এটাই প্রধান মুখরোচক বিষয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন- মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন খালেদা জিয়া, এবং এর জন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবই দায়ী।
গত সাধারণ নির্বাচনে দলকে অংশগ্রহণ করতে না-দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বিএনপি। সংসদে কোনও প্রতিনিধি না-থাকায় সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বিএনপি ও দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার কূটনৈতিক গুরুত্ব তলানিতে ঠেকেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সেই অসহায় অবস্থাটিই হাটে হাঁড়ি ভাঙা হয়ে গিয়েছে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে।
প্রোটোকল মেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদার আগে সময় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ, জাসদ-এর হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। রওশন সংসদে বিরোধী নেত্রী, ইনু ও মেনন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সরকারের শরিক হিসেবে সংসদে তাঁদের বেশ কয়েক জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। তাই খালেদাকে বসিয়ে রেখে তাঁর সামনেই ইনু-মেননদের ডাক পড়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনার জন্য। সবার শেষে খালেদার জন্য তখন মিনিট দশেক সময় হাতে ছিল মোদীর।
সময় পাবেন না বুঝেই নিজের বক্তব্য একটি কাগজে নোট করে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু সেগুলির সব ক’টি তিনি পড়েও উঠতে পারেননি বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। কিন্তু যে ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে নালিশ করেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলে অভিযোগ করেছেন, তাতেও প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি নেতা মইন খান অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, মোদী নিজে গণতান্ত্রিক মানুষ। গণতান্ত্রিক পথেই তিনি সমাজের সাধারণ স্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে উঠে এসেছেন। সে জন্যই তার কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র না-থাকার অভিযোগটি তুলেছেন বিএনপি নেত্রী। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন- সব সংস্থাকে হাসিনা সরকার কুক্ষিগত করে নিজের হাতিয়ার করেছে বলেও খালেদা মোদীর কাছে নালিশ করেছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, শুধু নিজের দেশের সরকারই নয়, দিল্লিতে আগের মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধেও খালেদা অনুযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদীর কাছে। বিএনপি নেত্রীর অভিযোগ, মনমোহন সরকারের প্রশ্রয়েই ভোটের ‘প্রহসন করে’ শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখল করেছেন। তিনি আশা করেন, মোদীর সরকার এই নীতি পুনর্বিবেচনা করবে।
মোদী তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন- কেন তিনি হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করছেন না? জবাবে খালেদা বলেন, তারা বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েও সরকারের আচরণে পিছিয়ে আসেন। মোদী তখন তাকে বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অন্য কোনও পথে হাঁটার সুযোগ সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। আলোচনায় না-বসলে কোনও সমস্যার সমাধানও মেলে না।
কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা- এই কথা বলে আসলে খালেদাকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শই দিয়েছেন মোদী। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনও পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা যে ভারত মেনে নেবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মনমোহন সরকারের বাংলাদেশ নীতি মেনেই মোদীর সরকার চলছে। তাই আগের সরকারের বিরুদ্ধে তোলা খালেদার অভিযোগকেও আমল দেননি মোদী।
বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য যোগাযোগের বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছে মোদীর মন পেতে চেয়েছেন খালেদা। কিন্তু বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগেই সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দলের নেতা হান্নান শাহ এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছেন, এটা আদতে ভারতের দাবির কাছে মাথা নুইয়ে করিডরের সুবিধা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়। এর ফলে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না। ঢাকা কোনও রাজস্বও পাবে না। তার দাবি অনুযায়ী, যা লাভ হবে সবই ভারতের। একই কথা বলে ভারতের সঙ্গে হওয়া সব চুক্তির বিরোধিতা করেছে খালেদা জিয়ার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও।