নিউইয়র্ক ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৯৪ বার পঠিত

দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যপণ্য হিসেবে স্বীকৃত আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। এক বছরে দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমান খুচরা বাজার থেকে প্রতিকেজি প্যাকেট আটা ৭৫ এবং খোলা আটা কিনতে ভোক্তাকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৫ টাকা। এক বছর আগে ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিন নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৩৮-৪০ এবং খোলা আটা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম সহসা কমবে এ ধরনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বরং মূল্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এতে আটা-ময়দার বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। তবে আটা-ময়দার উৎপাদন, সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেনের বাইরে বিকল্প বাজারের খোঁজ করছে সরকার। এলক্ষ্যে ব্যবসায়ীদেরও নতুন বাজারের অনুসন্ধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি মজুত বাড়াতে জিটুজি ভিত্তিতে গম আমদানি বাড়ানো হবে। সরবরাহ বৃদ্ধি ও আটা ময়দার উৎপাদন বাড়াতে গম আমদানি করা হবে আটটি দেশ থেকে। নতুন করে বুলগেরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের সমান দাম দিয়ে আটা কিনছেন নগরবাসী। মানুষের খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন এবং রোগ-শোক সামলাতে ডাক্তারের পরামর্শে কয়েক দশক ধরে দেশে আটা ও ময়দার ব্যবহার বেড়েছে। প্রতিটি পরিবারের তিনবেলা আহারে একবেলা বিশেষ করে সকালের নাস্তায় রুটি ছাড়া যেনো চলেই না! এ ছাড়া বেকারি শিল্পের যাবতীয় পাউরুটি বিস্কুট-চানাচুর ও নুডল্সসহ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে আটা ও ময়দার প্রয়োজন হয়।

এ অবস্থায় আটা ও ময়দার দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন গরিব মানুষ। সব ধরনের বেকারিপণ্যসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনতে সাধারণ মানুষ এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় দ্রুত আটা ও ময়দার দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আটার পাশাপাশি রেকর্ড দাম বিক্রি হচ্ছে ময়দাও। মানভেদে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ এবং খোলা ময়দা ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

গত এক বছর আগে প্যাকেট ময়দা প্রতি কেজি ৫০-৫৫ এবং খোলাটি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ঢাকার বাজারে। ময়দা এখন চালের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে খোলা আটার দাম ৬৯ শতাংশ, আটা প্যাকেট ৭১ শতাংশ, ময়দা খোলা ৫৬ শতাংশ এবং প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ যাবতকালের মধ্যে এই দাম সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিটি ২ কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

ইতোপূর্বে কখনোই আর এত দাম দিয়ে ভোক্তাকে আটা ও ময়দা কিনতে হয়নি। আটা ও ময়দার দাম কমাতে সরকারি মজুত বাড়ানোর লক্ষ্যে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে তা খুবই অপ্রতুল। গমের আমদানি সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে ডলারের উচ্চমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতা এবং চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেনের বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির তেমন ভালো খবর নেই। এতে গমের সংকট বাড়ছে।

মূলত গমের মজুত দ্রুত কমে আসায় দেশে আটা ও ময়দার বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে আটা ও ময়দার দাম বাড়ছেই। বাজারে আটার দাম বাড়তির দিকে জানিয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক এসএম মুজিবুর রহমান জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে রেশনিং করেও কারখানার সক্ষমতার ৫০ শতাংশ পণ্যও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আবার বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি মজুতে গমের পরিমাণ রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৭১ টন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মজুত চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে দেশে গমের যে চাহিদা তার সিংহভাগ আমদানি করছে বেসরকারিখাত। সরকারিভাবে প্রতিবছর ৬-৭ লাখ টন গম আমদানি করা হয়।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে

প্রকাশের সময় : ০৬:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২

দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যপণ্য হিসেবে স্বীকৃত আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। এক বছরে দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমান খুচরা বাজার থেকে প্রতিকেজি প্যাকেট আটা ৭৫ এবং খোলা আটা কিনতে ভোক্তাকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৫ টাকা। এক বছর আগে ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিন নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৩৮-৪০ এবং খোলা আটা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম সহসা কমবে এ ধরনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বরং মূল্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এতে আটা-ময়দার বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। তবে আটা-ময়দার উৎপাদন, সরবরাহ বাড়ানো এবং দাম কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেনের বাইরে বিকল্প বাজারের খোঁজ করছে সরকার। এলক্ষ্যে ব্যবসায়ীদেরও নতুন বাজারের অনুসন্ধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি মজুত বাড়াতে জিটুজি ভিত্তিতে গম আমদানি বাড়ানো হবে। সরবরাহ বৃদ্ধি ও আটা ময়দার উৎপাদন বাড়াতে গম আমদানি করা হবে আটটি দেশ থেকে। নতুন করে বুলগেরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের সমান দাম দিয়ে আটা কিনছেন নগরবাসী। মানুষের খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন এবং রোগ-শোক সামলাতে ডাক্তারের পরামর্শে কয়েক দশক ধরে দেশে আটা ও ময়দার ব্যবহার বেড়েছে। প্রতিটি পরিবারের তিনবেলা আহারে একবেলা বিশেষ করে সকালের নাস্তায় রুটি ছাড়া যেনো চলেই না! এ ছাড়া বেকারি শিল্পের যাবতীয় পাউরুটি বিস্কুট-চানাচুর ও নুডল্সসহ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে আটা ও ময়দার প্রয়োজন হয়।

এ অবস্থায় আটা ও ময়দার দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন গরিব মানুষ। সব ধরনের বেকারিপণ্যসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনতে সাধারণ মানুষ এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় দ্রুত আটা ও ময়দার দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আটার পাশাপাশি রেকর্ড দাম বিক্রি হচ্ছে ময়দাও। মানভেদে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ এবং খোলা ময়দা ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

গত এক বছর আগে প্যাকেট ময়দা প্রতি কেজি ৫০-৫৫ এবং খোলাটি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ঢাকার বাজারে। ময়দা এখন চালের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে খোলা আটার দাম ৬৯ শতাংশ, আটা প্যাকেট ৭১ শতাংশ, ময়দা খোলা ৫৬ শতাংশ এবং প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ যাবতকালের মধ্যে এই দাম সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিটি ২ কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

ইতোপূর্বে কখনোই আর এত দাম দিয়ে ভোক্তাকে আটা ও ময়দা কিনতে হয়নি। আটা ও ময়দার দাম কমাতে সরকারি মজুত বাড়ানোর লক্ষ্যে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে তা খুবই অপ্রতুল। গমের আমদানি সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে ডলারের উচ্চমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতা এবং চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেনের বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির তেমন ভালো খবর নেই। এতে গমের সংকট বাড়ছে।

মূলত গমের মজুত দ্রুত কমে আসায় দেশে আটা ও ময়দার বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে আটা ও ময়দার দাম বাড়ছেই। বাজারে আটার দাম বাড়তির দিকে জানিয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক এসএম মুজিবুর রহমান জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে রেশনিং করেও কারখানার সক্ষমতার ৫০ শতাংশ পণ্যও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আবার বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি মজুতে গমের পরিমাণ রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৭১ টন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মজুত চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে দেশে গমের যে চাহিদা তার সিংহভাগ আমদানি করছে বেসরকারিখাত। সরকারিভাবে প্রতিবছর ৬-৭ লাখ টন গম আমদানি করা হয়।