নিউইয়র্ক ১২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আজমতের সূচনা নাকি গৃহিণী জায়েদার চমক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
  • / ৬৯ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সিটি করপোরেশন এলাকা। এর আগে দুইবার মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আরেকবার বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তপশিল ঘোষিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে গাজীপুরে শুরু থেকেই ভোটের মাঠও জমজমাট। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও মিলছে। মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের পরও মাকে নিয়ে মাঠে রয়েছেন জাহাঙ্গীর। নির্বাচন ঘিরে আজমত ও জায়েদা নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিয়েছেন তাঁরা। কাকে মেয়র পদে নগরবাসী বেছে নেবেন, এটা জানতে সবার দৃষ্টিও আজ গাজীপুরে। প্রথমবার জয়ের মালা কে পরবেন? নৌকার আজমত উল্লা, নাকি গৃহিণী জায়েদা খাতুন– এমন প্রশ্ন গাজীপুরজুড়ে। এদিকে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির ২৯ জন স্থানীয় নেতাও কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন। দলীয় বহিষ্কারের খড়্গও তাঁদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমসহ অন্য নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের পর থেকে গাজীপুর মহানগরের পৃথক পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, আজমতের শক্তি হলো দলীয় ঐক্য ও ব্যক্তিগত ইমেজ। আর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের অনিয়ম-দুর্নীতিও আজমতের ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারে। আর জায়েদার অনুসারীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর মেয়র থাকাকালে তাঁর হাত ধরে এলাকার উন্নয়নের চিত্র সামনে এনে মায়ের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে নিজ এলাকা টঙ্গীর ভোটও আজমতকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি জয়ী হলে প্রথমবারের মতো টঙ্গীর কোনো বাসিন্দা নগরপিতা হবেন।

তবে এমনও প্রচার আছে, টঙ্গীতে আজমতের ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে জাহাঙ্গীর আলমই কৌশল করে টঙ্গীর সরকার পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম রনিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের গাজী আতাউর রহমানেরও বাড়ি টঙ্গীতে।
নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান সমকালকে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সৎ প্রার্থী হিসেবে নগরবাসী আমাকেই বেছে নেবেন।

জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। সুষ্ঠু ভোট হলে জয় আমারই হবে। তবে গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাহাঙ্গীরের একটি বিমানের টিকিট ভাইরাল হয়। ২৬ মে দুবাইয়ে যাওয়ার টিকিট সেটি। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর সমকালকে বলেন, কে বা কারা এটি ভাইরাল করেছে, তা তাঁর জানা নেই।

এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কালো টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার কেনার চেষ্টা করছেন। এলাকায় গুঞ্জনও আছে, টাকার বিনিময়ে ভোট কেনাবেচা চলছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, কালো টাকায় ভোট কেনার তথ্য-প্রমাণ কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে আসেনি। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে। এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সব কেন্দ্রে সিসিটিভি

গাজীপুরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল মজিদ আকন্দ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ। ১২ জন আনসার সদস্য এরই মধ্যে ওই কেন্দ্রে চলে এসেছেন। প্রিসাইডিং অফিসার আতাউর রহমান বললেন, আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। এ ছাড়া ভুরুলিয়া সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হওয়ার দৃশ্য দেখা গেল। স্কুল মাঠে বাঁশ দিয়ে একটি বেষ্টনীও তৈরি করা হয়েছে।

৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে হবে ভোট গ্রহণ। সব কেন্দ্রেই লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ৩২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র। এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ঝুঁকিপুর্ণ এবং ১২৯টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৩১ জন। এর মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪৬ জন। সংরক্ষিত প্রার্থী ৭৮ জন। আর মেয়র পদে লড়ছেন আটজন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটিতে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর ফলে সব কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সব কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে। তাই প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোটিং মেশিন রাখা হচ্ছে। মেশিন মেরামতের জন্য ট্রাবলশুটার রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ৫ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

১৩ হাজার ফোর্স মোতায়েন

নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য গাজীপুরে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ১৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। তাঁদের মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার সদস্যকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাইরে থেকে গাজীপুরে আনা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে পুলিশের মোবাইল ফোর্স রয়েছে। এ ছাড়া ৮টি থানা এলাকায় ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোট ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।

আলাদা চাপ নেই’

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ ও চাপ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সব নির্বাচনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে, আমরা তা মনিটর করছি। আমাদের পক্ষ থেকেও কারও ওপর চাপ নেই। গতকাল বিকেলে গাজীপুর সার্কিট হাউসে নির্বাচন নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

‘সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে যেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করব। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এটা একটা সমন্বিত প্রয়াস। গতকাল সকালে শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সূত্র : সমকাল
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আজমতের সূচনা নাকি গৃহিণী জায়েদার চমক

প্রকাশের সময় : ১১:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সিটি করপোরেশন এলাকা। এর আগে দুইবার মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আরেকবার বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তপশিল ঘোষিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে গাজীপুরে শুরু থেকেই ভোটের মাঠও জমজমাট। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও মিলছে। মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের পরও মাকে নিয়ে মাঠে রয়েছেন জাহাঙ্গীর। নির্বাচন ঘিরে আজমত ও জায়েদা নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিয়েছেন তাঁরা। কাকে মেয়র পদে নগরবাসী বেছে নেবেন, এটা জানতে সবার দৃষ্টিও আজ গাজীপুরে। প্রথমবার জয়ের মালা কে পরবেন? নৌকার আজমত উল্লা, নাকি গৃহিণী জায়েদা খাতুন– এমন প্রশ্ন গাজীপুরজুড়ে। এদিকে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির ২৯ জন স্থানীয় নেতাও কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন। দলীয় বহিষ্কারের খড়্গও তাঁদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমসহ অন্য নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরের পর থেকে গাজীপুর মহানগরের পৃথক পাঁচটি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, আজমতের শক্তি হলো দলীয় ঐক্য ও ব্যক্তিগত ইমেজ। আর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের অনিয়ম-দুর্নীতিও আজমতের ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারে। আর জায়েদার অনুসারীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর মেয়র থাকাকালে তাঁর হাত ধরে এলাকার উন্নয়নের চিত্র সামনে এনে মায়ের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে নিজ এলাকা টঙ্গীর ভোটও আজমতকে এগিয়ে রাখবে বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি জয়ী হলে প্রথমবারের মতো টঙ্গীর কোনো বাসিন্দা নগরপিতা হবেন।

তবে এমনও প্রচার আছে, টঙ্গীতে আজমতের ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে জাহাঙ্গীর আলমই কৌশল করে টঙ্গীর সরকার পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম রনিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের গাজী আতাউর রহমানেরও বাড়ি টঙ্গীতে।
নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান সমকালকে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সৎ প্রার্থী হিসেবে নগরবাসী আমাকেই বেছে নেবেন।

জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। সুষ্ঠু ভোট হলে জয় আমারই হবে। তবে গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাহাঙ্গীরের একটি বিমানের টিকিট ভাইরাল হয়। ২৬ মে দুবাইয়ে যাওয়ার টিকিট সেটি। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর সমকালকে বলেন, কে বা কারা এটি ভাইরাল করেছে, তা তাঁর জানা নেই।

এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কালো টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার কেনার চেষ্টা করছেন। এলাকায় গুঞ্জনও আছে, টাকার বিনিময়ে ভোট কেনাবেচা চলছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, কালো টাকায় ভোট কেনার তথ্য-প্রমাণ কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে আসেনি। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে। এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সব কেন্দ্রে সিসিটিভি

গাজীপুরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল মজিদ আকন্দ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ। ১২ জন আনসার সদস্য এরই মধ্যে ওই কেন্দ্রে চলে এসেছেন। প্রিসাইডিং অফিসার আতাউর রহমান বললেন, আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। এ ছাড়া ভুরুলিয়া সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হওয়ার দৃশ্য দেখা গেল। স্কুল মাঠে বাঁশ দিয়ে একটি বেষ্টনীও তৈরি করা হয়েছে।

৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে হবে ভোট গ্রহণ। সব কেন্দ্রেই লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ৩২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র। এসব ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি ঝুঁকিপুর্ণ এবং ১২৯টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৩১ জন। এর মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪৬ জন। সংরক্ষিত প্রার্থী ৭৮ জন। আর মেয়র পদে লড়ছেন আটজন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটিতে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর ফলে সব কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া সব কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে। তাই প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোটিং মেশিন রাখা হচ্ছে। মেশিন মেরামতের জন্য ট্রাবলশুটার রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ৫ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

১৩ হাজার ফোর্স মোতায়েন

নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য গাজীপুরে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ১৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। তাঁদের মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার সদস্যকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাইরে থেকে গাজীপুরে আনা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে পুলিশের মোবাইল ফোর্স রয়েছে। এ ছাড়া ৮টি থানা এলাকায় ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোট ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।

আলাদা চাপ নেই’

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ ও চাপ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সব নির্বাচনই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে, আমরা তা মনিটর করছি। আমাদের পক্ষ থেকেও কারও ওপর চাপ নেই। গতকাল বিকেলে গাজীপুর সার্কিট হাউসে নির্বাচন নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

‘সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব’

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে যেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করব। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এটা একটা সমন্বিত প্রয়াস। গতকাল সকালে শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সূত্র : সমকাল
সুমি/হককথা