নিউইয়র্ক ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অস্ত্র মামলায় পাপিয়া দম্পতির ২৭ বছর কারাদন্ড

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ৩২ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: অস্ত্র আইনের মামলায় শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ দম্পতির মোট ২৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। সোমবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার এক নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর একই আইনের ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দুটি ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। এতে পাপিয়া দম্পতিকে মোট ২০ বছরের সাজা খাটতে হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত প্রাঙ্গণে শামীমা নূর পাপিয়া (ওপরে) ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন (নিচে)
রায়ে পাপিয়া-সুমন দম্পতির মতো এমন রাজনীতিবিদরা ‘দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে আদালত বলেছেন, এ ধরনের তথাকথিত রাজনীতিবিদ রাজনীতির ছদ্মাবরণে শুধু নিজেদের প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। দেশ ও জাতির কল্যাণের ওপর যারা নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তারা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রায় ঘোষণার পর পাপিয়া দম্পতিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আলোচিত এ দম্পতির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত করা পাঁচটি মামলার মধ্যে অস্ত্র আইনের এ মামলাতেই সবার আগে রায় হল।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে এদিন পাপিয়া দম্পতিকে কারাগার থেকে দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার জন্য আদালত বসার আগে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে পাপিয়া দম্পতিকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় পাপিয়াকে আদালতের কাঠগড়ায় এবং তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে ডকে (আসামি রাখার জন্য লোহার তৈরি বিশেষ খাঁচা) রাখা হয়। এরপরই আদালত রায় ঘোষণা শুরু করেন। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে সংক্ষিপ্ত রায় পাঠ শেষ করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় থাকা পাপিয়া ও ডকে থাকা সুমন চৌধুরীকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।
এদিকে রায়ে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি মো. আবদুল্লাহ আবু ও অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রায় ঘোষণার পর আবদুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা দু’জনই রাজনীতি করতেন। তাদের বাড়ি থেকে অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা ও অস্ত্র পাওয়া গেছে। পাপিয়া নারী বলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়নি। যেহেতু তারা একই পরিবারের সদস্য, তাই তাদের দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পরিবর্তে ২৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে আমরা খুশি।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এএফএম গোলাম ফাত্তাহ বলেন, মামলাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাজানো। এ মামলায় আসামিদের একদিনেরও সাজা হতে পারে না। সেখানে তাদের ২৭ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। এছাড়া এক সাক্ষীর সঙ্গে অপর সাক্ষীর কথার কোনো মিল নেই। মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
গত ফেব্রæয়ারীতে আটকের পর পাপিয়া এবং তার সহযোগীদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে র‌্যাব। ফাইল ফটো
রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ: মামলার ঘটনা, তথ্য-প্রমাণ ও বিচার-বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসামি শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী আসামি মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের সজ্জন রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক কর্মী বলা যায় না। কারণ তাদের দখলে ভাড়াকৃত ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। আসামিরা রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা হলেও তাদের বাসায় এত বিপুল পরিমাণ- নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা রাখার কোনো যৌক্তিক বা বৈধ কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং এ ধরনের তথাকথিত রাজনীতিবিদ রাজনীতির ছদ্মাবরণে শুধু নিজেদের প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তারা দেশ ও জাতির জন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে না। দেশ ও জাতির কল্যাণের ওপর যারা নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তারা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ ধরনের রাজনীতিবিদের যে কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করার জন্য অবৈধ অস্ত্র দখলে রেখে সুবিধাজনক সময়ে তা ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও ২০ রাউন্ড গুলি তাদের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা প্রসিকিউশনপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে।
আসামি শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ মহিলা হওয়ায় এবং মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্বামী হওয়ায় অস্ত্র আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং একই আইনের ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হল। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে।
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলা ও বিচার: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ছয় নম্বর স্টাফ গেটের সামনে থেকে গত ২২ ফেব্রæয়ারী দুপুরে আসামিদের আটক করা হয়। ওই সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে পাপিয়ার কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; পাপিয়ার স্বামী সুমনের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও বিদেশি অর্থ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও মফিজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর থানাধীন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রæয়ারী ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে গত ২৯ জুন র‌্যাব-১ এর এসআই মো. আরিফুজ্জামান পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেন। গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে গত ৩১ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আর গত ৮ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে পাপিয়া দম্পতি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আদালত।
পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে যত মামলা: দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালীন পাপিয়া দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২২ ফেব্রæয়ারী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ছয় নম্বর স্টাফ গেটের সামনে থেকে তাদের আটক করে দেহ তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি করে পাপিয়ার কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; পাপিয়ার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমনের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও বিদেশি অর্থ; সহযোগী আসামি সাব্বির খন্দকারের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; শেখ তাইবা নূরের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও দুটি ডেবিট কার্ড পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও মফিজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর থানাধীন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি করে দুটি ও বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া গত ৪ আগস্ট ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় পাপিয়া দম্পতিকে একাধিক দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাগুলোর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলাটির রায় হল। বাকি চার মামলা তদন্তাধীন। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অস্ত্র মামলায় পাপিয়া দম্পতির ২৭ বছর কারাদন্ড

প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০

ঢাকা ডেস্ক: অস্ত্র আইনের মামলায় শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ দম্পতির মোট ২৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। সোমবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার এক নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর একই আইনের ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দুটি ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। এতে পাপিয়া দম্পতিকে মোট ২০ বছরের সাজা খাটতে হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত প্রাঙ্গণে শামীমা নূর পাপিয়া (ওপরে) ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন (নিচে)
রায়ে পাপিয়া-সুমন দম্পতির মতো এমন রাজনীতিবিদরা ‘দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক’ আখ্যায়িত করে আদালত বলেছেন, এ ধরনের তথাকথিত রাজনীতিবিদ রাজনীতির ছদ্মাবরণে শুধু নিজেদের প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। দেশ ও জাতির কল্যাণের ওপর যারা নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তারা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রায় ঘোষণার পর পাপিয়া দম্পতিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আলোচিত এ দম্পতির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত করা পাঁচটি মামলার মধ্যে অস্ত্র আইনের এ মামলাতেই সবার আগে রায় হল।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে এদিন পাপিয়া দম্পতিকে কারাগার থেকে দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার জন্য আদালত বসার আগে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর ২টা ১৭ মিনিটের দিকে পাপিয়া দম্পতিকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় পাপিয়াকে আদালতের কাঠগড়ায় এবং তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে ডকে (আসামি রাখার জন্য লোহার তৈরি বিশেষ খাঁচা) রাখা হয়। এরপরই আদালত রায় ঘোষণা শুরু করেন। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে সংক্ষিপ্ত রায় পাঠ শেষ করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় থাকা পাপিয়া ও ডকে থাকা সুমন চৌধুরীকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।
এদিকে রায়ে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি মো. আবদুল্লাহ আবু ও অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রায় ঘোষণার পর আবদুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা দু’জনই রাজনীতি করতেন। তাদের বাড়ি থেকে অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা ও অস্ত্র পাওয়া গেছে। পাপিয়া নারী বলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়নি। যেহেতু তারা একই পরিবারের সদস্য, তাই তাদের দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পরিবর্তে ২৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে আমরা খুশি।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এএফএম গোলাম ফাত্তাহ বলেন, মামলাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাজানো। এ মামলায় আসামিদের একদিনেরও সাজা হতে পারে না। সেখানে তাদের ২৭ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। এছাড়া এক সাক্ষীর সঙ্গে অপর সাক্ষীর কথার কোনো মিল নেই। মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
গত ফেব্রæয়ারীতে আটকের পর পাপিয়া এবং তার সহযোগীদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে র‌্যাব। ফাইল ফটো
রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ: মামলার ঘটনা, তথ্য-প্রমাণ ও বিচার-বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসামি শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী আসামি মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু তাদের সজ্জন রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক কর্মী বলা যায় না। কারণ তাদের দখলে ভাড়াকৃত ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। আসামিরা রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা হলেও তাদের বাসায় এত বিপুল পরিমাণ- নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা রাখার কোনো যৌক্তিক বা বৈধ কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং এ ধরনের তথাকথিত রাজনীতিবিদ রাজনীতির ছদ্মাবরণে শুধু নিজেদের প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তারা দেশ ও জাতির জন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে না। দেশ ও জাতির কল্যাণের ওপর যারা নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, তারা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ ধরনের রাজনীতিবিদের যে কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করার জন্য অবৈধ অস্ত্র দখলে রেখে সুবিধাজনক সময়ে তা ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও ২০ রাউন্ড গুলি তাদের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা প্রসিকিউশনপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে।
আসামি শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ মহিলা হওয়ায় এবং মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্বামী হওয়ায় অস্ত্র আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং একই আইনের ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হল। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে।
পাপিয়া দম্পতির অস্ত্র মামলা ও বিচার: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ছয় নম্বর স্টাফ গেটের সামনে থেকে গত ২২ ফেব্রæয়ারী দুপুরে আসামিদের আটক করা হয়। ওই সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে পাপিয়ার কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; পাপিয়ার স্বামী সুমনের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও বিদেশি অর্থ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও মফিজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর থানাধীন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রæয়ারী ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে গত ২৯ জুন র‌্যাব-১ এর এসআই মো. আরিফুজ্জামান পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেন। গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে গত ৩১ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আর গত ৮ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে পাপিয়া দম্পতি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন আদালত।
পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে যত মামলা: দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালীন পাপিয়া দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২২ ফেব্রæয়ারী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ছয় নম্বর স্টাফ গেটের সামনে থেকে তাদের আটক করে দেহ তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি করে পাপিয়ার কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; পাপিয়ার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমনের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও বিদেশি অর্থ; সহযোগী আসামি সাব্বির খন্দকারের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; শেখ তাইবা নূরের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও দুটি ডেবিট কার্ড পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও মফিজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর থানাধীন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি করে দুটি ও বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া গত ৪ আগস্ট ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় পাপিয়া দম্পতিকে একাধিক দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাগুলোর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলাটির রায় হল। বাকি চার মামলা তদন্তাধীন। (দৈনিক যুগান্তর)