অবশেষে সহিদুর রহমান খাঁন মুক্তি কারাগারে

- প্রকাশের সময় : ১২:০০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০
- / ১৪৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: চাঞ্চাল্যকর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামী সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খাঁন মুক্তির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত প্রথম জেলা ও দায়রা জজের বিচারক মো. সিকান্দর জুলকার নাইন বুধবার (২ ডিসেম্বর)। সহিদুর রহমান খাঁন মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁনের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই। এরআগে দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থাকার পর বুধবার সকালের দিকে হঠাৎ প্রথম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবির মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এসময় তার পিতা ও টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন ও ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তার বড় ভাই আমানুর রহমান খাঁন রানা তার সাথে ছিলেন।
আমানুর রহমান খান রানা ও সহিদুর রহমান খাঁন মুক্তি
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌশলি (পিপি) মনিরুল ইসলাম খান মিডিয়াকে জানান, বুধবার সকাল পৌঁনে ১১ টা দিকে সহিদুর রহমান তার বাবা সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান ও ভাই সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে সাথে নিয়ে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তারা আদালত কক্ষের ভিতর অবস্থান নিয়ে আত্মসমর্পণের কাগজপত্র জমা দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত হয়ে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও মামলার বাদী নাহার আহমেদ ন্যায়বিচারের স্বার্থে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে জামিন না দেয়ার জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ করেন। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল তিনটার দিকে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
সাবেক পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি পলাতক হওয়ার পর বিগত ২০১৫ সালে গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি থেকে দুটি পিস্তলসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই ব্যক্তি তাঁর স্বীকারোক্তিতে এই পিস্তল সহিদুর রহমান খান মুক্তি তাদের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন বলে জানান। এ মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ সহিদুর রহমান খান মুক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এদিকে সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত ২৩ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করতে টাঙ্গাইল আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু বিচারক আদালতে না আসায় আসামী মুক্তি গ্রেফতার এড়িয়ে চলে যান। পরবর্তীতে বুধবার তিনি পুনরায় আদালতে উপস্থিত হন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলী মনিরুল ইসলাম, আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আব্দুল বাকী মিয়াসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারী রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফারুক আহমদের গুলীবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীর নামক দুইজনকে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করে।
ওই দুই আসামীর জবানবন্দিতে এই হত্যার সাথে একই পরিবারের চার ভাই যথাক্রমে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অপর তিন ভাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তার পরেই রানা ও মুক্তিসহ চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান।
পরে তদন্ত শেষে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ বিগত ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রæয়ারী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি তার দুই ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট জমা দেয়। ওই বছরের ৬ এপ্রিল আদালত মামলার চার্জশীট গ্রহণ করে পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে রানা ২২ মাস পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসর্মপণ করেন। প্রায় দুই বছর হাজতে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে তার অপর দুই ভাই এখনো পলাতক রয়েছেন। আদালতে এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।