অফিস সময়ের তোয়াক্কা নেই অনেক কর্মকর্তার
- প্রকাশের সময় : ০২:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৫০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তা পুরোপুরি পালন হচ্ছে না। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সকাল ৯টার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হচ্ছেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা। ঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠায়। এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (বিশেষ কাজ ব্যতীত) অবশ্যই সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের মধ্যে অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া এ নির্দেশনা কতটা পালন হচ্ছে, তা জানতে গতকাল রোববার সমকালের প্রতিনিধিরা চোখ রেখেছিলেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সরকারি অফিসে। তাঁদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯টার মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখার দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব আনার কলি মাহবুব সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের মধ্যে কোনো অনুষ্ঠান না রাখার জন্য আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। এই নির্দেশনা নতুন করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে নতুন কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি বলেন, কেউ যদি জানা সত্ত্বেও নির্দেশের ব্যতিক্রম করেন, তাঁর বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরোও পড়ুন বাংলাদেশটা কি হরিলুটের জায়গা, প্রশ্ন হাইকোর্টের
ঢাকার চিত্র : রোববার ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছিলেন সমকালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। দেখা যায়, সকাল ৯টায় কর্মঘণ্টা শুরু হলেও সঠিক সময়ে অফিস কক্ষে উপস্থিত হননি বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ৯টা ১০ মিনিটে অফিসে ঢোকেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। ৯টা ৩০ মিনিটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী হাফিজুল আমিন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শিবলী সাদিক অফিসে ঢোকেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) শাহনাজ সুলতানা আসেন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে অফিস কক্ষে দেখা মেলেনি উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) আবু জাফর রিপন, সহকারী কমিশনার সিফাত বিন সাদেক, নেয়ামত উল্যা, ইমতিয়াজ মোর্শেদ, আদনান চৌধুরীসহ অনেকের। বেশিরভাগ কর্মকর্তাই দাবি করেন, মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও আদালতের কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁরা। শাহনাজ সুলতানা সমকালকে জানিয়েছেন, তিনি সকাল থেকে মন্ত্রণালয়ে দুটি মিটিং শেষ করে অফিসে ঢুকেছেন। জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঢাকায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মিটিং, প্রোগ্রাম, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন দায়িত্ব থাকে। অফিস সময়ের পরও কর্মকর্তাদের অনেক কাজ করতে হয়।
খুলনা : সকাল ৯টা ২০ মিনিটে খুলনা জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখায় কর্মকর্তাদের কাউকে দেখা যায়নি। অন্যান্য শাখায়ও সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্ধেক সংখ্যক চেয়ার ছিল ফাঁকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিক সময়ে অফিসে আসা এক কর্মচারী জানান, অধিকাংশ দিন বেশিরভাগ কর্মকর্তা দেরি করে আসেন। বিশেষ করে জরুরি সভা না থাকলে কর্মকর্তারা সাড়ে ৯টার পর, কেউ ১০টায়ও অফিসে আসেন।
সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) : সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে খোলা হলো একজন কর্মকর্তার কক্ষের তালা। এ চিত্র সাদুল্যাপুর পল্লী উন্নয়ন অফিসের। এ অফিস-সংলগ্ন পরিসংখ্যান অফিস বন্ধ ছিল ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। ৯টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত খোলা হয়নি হিসাবরক্ষণ অফিসের প্রধান ফটকের তালা। ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে আসেননি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মেনাজ, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. সালাউদ্দিন ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। বিলম্বে অফিসে আসা প্রসঙ্গে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনি তো আমার অথরিটি না। আপনি এই প্রশ্ন করতে পারেন না।’ তবে ঠিক সময়ে অফিসে আসতে দেখা গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগমকে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন সকাল ৯টার আগেই অফিসে আসেন। উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা আয়শা সুলতানা আসেন ৯টা ৩২ মিনিটে; পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম রঞ্জন হালদার অফিসে আসেন ৯টা ৩৮ মিনিটে; নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম ৯টা ৪৫ মিনিটে; বন কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারী ১০টা ১০ মিনিটে; উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা তুহিন হোসেন ১০টা ১৫ মিনিটে; পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার ১০টা ১৭ মিনিটে; মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ১০টা ৩৫ মিনিটে; উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন ১০টা ৫৫ মিনিটে অফিসে আসেন।
বাগেরহাট : সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে অফিসে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আরিফুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শাহিনুজ্জামান পৌঁছান ৯টা ২৯ মিনিটে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান আসেন ৯টা ৪০ মিনিটে। এ ছাড়া ৯টা ৭ মিনিট থেকে পরবর্তী ৪০ মিনিট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সহকারী কমিশনারদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। জেলা প্রশাসনের কর্মচারী বেশিরভাগই ৯টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে হাজির হন।
আরোও পড়ুন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিট এখন ‘বাংলাদেশ স্ট্রীট’
টাঙ্গাইল : জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় সব ফাঁকা। কোনো কোনো অফিস ৯টার পর খুলে ঝাড়ূ দেওয়া হয়। ৯টা ২০ মিনিটের পর একে একে অফিসে আসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওলিউজ্জামান সকাল ৯টা ১০ মিনিটে দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে অফিসে আসেন। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা থাকায় তিনি এসেই সভা কার্যালয়ে তদারকি করেন। ৯টা ২০ মিনিটে আসেন কয়েকজন সহকারী কমিশনার।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সকাল ৯টা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলার ২১টি কার্যালয় ঘুরে মাত্র তিনজন কর্মকর্তার দেখা মিলেছে। উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী মো. মানিক হোসেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ৯টা ২৬ মিনিটে। ৯টা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পাওয়া যায়নি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজওয়ান উল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরজুরুল হক, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. এহেতেশামুল হক, মো. জহিরুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৌলতর রহমান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লোরা আহমেদ, কানিজ ফাতেমা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. ইয়াছিনুল হাবীব, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রিয়াজউদ্দিনসহ বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে।
কাঁচপুর ইউনিয়নের বড় চেঙ্গাইন গ্রামের আলী আহসান সেবা নিতে এসে বলেন, সাড়ে ৯টায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে পিয়ন নুরু মিয়া ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। পিয়ন নুরু মিয়া জানিয়েছেন, কর্মকর্তা ১২টার দিকে আসেন। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রিনা বেগমের কাছে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০টার আগে কেউ কি অফিসে আসেন? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজওয়ান উল ইসলাম বলেন, কৃষি কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ তিনি জেলায় মিটিংয়ে আছেন।
আরোও পড়ুন সৌদি আরবে সার কারখানা নির্মাণ করছে বাংলাদেশ
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সকাল ৯টার ১ মিনিট আগে অফিসে ঢুকলেও অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা ঢোকেন সাড়ে ৯টায়। জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নবদুলাল তালুকদার ৯টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত অফিসে ঢোকেননি। ৯টা ২২ মিনিটে তাঁর অফিসে ঢুকে দেখা গেছে, প্রায় সব চেয়ারই ফাঁকা। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অফিসে ঢোকেননি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি যথাসময়েই অফিসে আসি। দুই দিনের ছুটি পেয়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। রাতের গাড়িতে ফিরেছি; এ জন্য সামান্য কিছু বিলম্ব হয়েছে অফিসে ঢুকতে।’
দিনাজপুর : সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান করে দেখা গেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ছাড়া কোনো কর্মকর্তাই নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসেননি। সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) অনিন্দিতা রানী ভৌমিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ৯টা ৪৩ মিনিটে এবং আরডিসি আরিফ ১০টা ১৪ মিনিটে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি প্রবেশ করে ৯টা ২৪ মিনিট ও ৯টা ৩৭ মিনিটে। জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনেক কর্মচারী আসেন সকাল ৯টার পর। বাহাদুরবাজার থেকে আসা সেবাপ্রার্থী সফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বাড়ির জমির কাগজের ব্যাপারে কথা বলতে তথ্যকেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু যাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই তিনি আসেননি। আমি একটি মুদি দোকানে চাকরি করি। সেখানে কাজে যোগ দেব; বিকেলে আবার আসতে হবে আমাকে।’ সূত্রঃ সমকাল
হককথা/ সাথী