রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলাটি পুনঃতদন্ত শুরু করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৭শে ডিসেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে, ৩০শে জানুয়ারি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ডিবি পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়। ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার নিচে নন, এমন একজন মামলাটির অধিকতর তদন্ত করবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক এশারত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১লা জানুয়ারি আদালত এ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। আগামী ৩০শে জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার এজাহার, পুলিশ প্রতিবেদন, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন, প্রসিকিউশনের সাক্ষীর (পিডব্লিউ-১ থেকে পিডব্লিউ-৬ পর্যন্ত) জবানবন্দি ও বিজ্ঞ কৌঁসুলির বক্তব্যসহ নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৮ সালের ৪ই আগস্ট। ওই বছরের ১০ই আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগ, মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ। তিনি তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৮ই জানুয়ারি ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩, ৩২৩, ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ই আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ২০২১ সালের ১৮ই জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আব্দুর রউফ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার চার্জশিটে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। ২০২২ সালের ১লা মার্চ ৯ আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৮৬০ এর ১৪৩/৩২৩/৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন- নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খাঁন কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি। চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৪ঠা আগস্ট রাতে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাড়িতে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
ওই রাতে নৈশভোজের নামে তিনি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ির প্রধান ফটকে ধাক্কাধাক্কি করে ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।