বাংলাদেশ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের এক বছর পূর্তি আজ ২৬ মার্চ। তবে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। পৌরসভার কাজকর্ম চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। সংস্কার কাজ চলছে প্রেস ক্লাবের। সাত মাস পর চালু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন।
এদিকে ২০২১ সালে হেফাজত তাণ্ডবের ঘটনায় যে ৫৫টি মামলা হয় সেগুলোর তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
গত বছরের ২৬,২৭ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব চলে। এই তিনদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সরকারি অফিস, সংগঠনের কার্যালয়ে নির্বিচারে হামলা-ভাঙচুরের পর আগুন দেয়া হয়। রেলস্টেশন একেবারে অচল করে দেয়া হয়। পৌরসভার ভবন ছাড়া কোনো কিছুই বাঁচেনি।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস, প্রেস ক্লাব, জেলা আনসার অফিস, সদর উপজেলা ভূমি অফিসসহ জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। রাম দা, রড, লাঠিসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের বাসা ও অফিস ভাঙচুর করা হয়। তার শ্বশুর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলা হয় পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরের বাসাতেও। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের বাড়িতেও হামলা হয়।
তিনদিনের ওই ঘটনায় বিজিবি ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয় বলে দাবি করে হেফাজত। আহত হয় ৫০ জনের মতো। এর আগেও বিভিন্ন সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২১ সালের তাণ্ডব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতায় এ ঘটনা ঘটানো হয়। জেলা সদরের বাইরে সরাইল ও আশুগঞ্জে সংঘর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এবারই প্রথম হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও শীর্ষ নেতারা এ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ পায় সরকার দলীয় নেতাদের মাঝে। সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চেীধুরী নিজে বাদী হয়ে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা দেন। যদিও মামলা গ্রহণ হয়নি শেষ পর্যন্ত।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ এমন ঘটনা আর দেখতে চান না। জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান বলেন, তাণ্ডব না করার মতো অবস্থা সরকার এখনো সৃষ্টি করেনি। তাদের যে প্রস্তুতি, তাদের যে অবস্থা, যেভাবে দিনকে দিন বিকশিত হচ্ছে আবার এই তাণ্ডব ঘটাতে পারে।
জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দত্ত বলেন, তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, হযবরল অবস্থার মধ্যেই আমাদের পৌরসভার কার্যক্রম চলছে এখনো। নতুন ভবন করার জন্যে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছি।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন জানান, ঘটনার বিষয়ে সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ থানায় মোট ৫৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিআইডি ১০টি, পিবিআই ৯টি ও বাকি মামলাগুলো থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। এসব মামলায় এজাহারনামীয় ৪৬ জন ও সন্দেহভাজন ৭১২ জনসহ মোট ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে ৬৩৮ জন জামিনে বেড়িয়ে এসেছেন। জেল হাজতে রয়েছেন ১২০ জন।
হককথা/এমউএ