নিউইয়র্ক ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলেই খুন ১৭!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২৫৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: ক্যাসিনো গুরু যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন স¤্রাটের গ্রেফতারের পর দেশবাসী যখন সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিল তখনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করল একই বিদ্যাপীঠের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন তোলাপাড় সারা দেশ। বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লাখো কোটি নেটিজেন।
ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রতিবাদে নিজের মত জানিয়েছিলেন আবরার ফাহাদ। সেই স্ট্যাটাসের জেরে তাকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েটের একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এখন পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গঠিত ২ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বিগত বছরগুলোতে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডগুলোর ইতিহাস সামনে আসছে।
গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসা সেসব হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো জড়ো করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। এই ২৪ জনের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন, রাজশাহীতে ৫ জন, ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৩ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের ১৭টি ঘটেছে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে!
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণেমূলত এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
মহিউদ্দিন কায়সার হত্যা: ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারীর রাতে চট্টগ্রামের ষোল শহর রেলস্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন কায়সারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার জন্য ছাত্রলীগ ও শিবির একে অপরকে দায়ী করে। পরে মহিউদ্দিনকে নিজেদের কর্মী দাবি করে চবি ছাত্রলীগ ও শিবির উভয় দলই।
মামুন হত্যা: একই বছরের ১২ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হন।
হারুন অর রশীদ হত্যা: ২০১০ সালের ২৮ মার্চ রাতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহর হতে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চবি মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশীদকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
আসাদুজ্জামান হত্যা: একই বছরের ১৫ এপ্রিল চবি ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অ্যাকাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান নিহত হন।
তাপস হত্যা: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী তাপস।
দিয়াজ হত্যা: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চবির ২নং গেট সংলগ্ন নিজ বাসায় খুন হন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ। এ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শরিফুজ্জামান হত্যা: ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন রাবির শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী।
ফারুক হত্যা: পরের বছর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।
নাসিম হত্যা: একই বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবসে টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরুল্লাহ নাসিমকে ফেলে হত্যা করে ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা।
সোহেল হত্যা: ২০১২ সালের ১৫ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মাঝে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল।
পদ্মা সেতুর চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এই আভ্যন্তরীণ কোন্দল লাগে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
রুস্তম হত্যা: ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিশু রাব্বি হত্যা: কোনো শিক্ষার্থী নয় বাকৃবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বলি হন ১০ বছরের শিশু রাব্বি। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটে।
সায়াদ হত্যা: ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ নিজ দলের নেতাকর্মী হাতেই প্রাণ হারান আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়াদ ইবনে মমাজ। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে বলে সে সময় জাতীয় সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিশ্বজিৎ হত্যা: এ হত্যাকান্ডের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর সারা দেশ প্রকম্পিত হয়। শিবির সন্দেহে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে।
জুবায়ের হত্যা: এ হত্যাকান্ডের জন্যেও ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কলহের জেরে এক হামলায় গুরতর আহত হন জাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্পাসে তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
আবু বকর হত্যা: ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। এ হত্যা মামলায় সব আসামি ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিপুল হত্যা: ২০১২ সালের ৯ জুন সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ফাহিম মাহফুজ বিপুল।
জাকারিয়া ও মিল্টন হত্যা: স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা পড়েন হাবিপ্রবির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালইয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
সজীব, রিয়াদ ও সুমন দাস হত্যা: ২০১২ সালের ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হন। ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রকাশ্যে খুন হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ।
একই বছর ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমন দাস। (যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলেই খুন ১৭!

প্রকাশের সময় : ০৯:৫২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯

হককথা ডেস্ক: ক্যাসিনো গুরু যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন স¤্রাটের গ্রেফতারের পর দেশবাসী যখন সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিল তখনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করল একই বিদ্যাপীঠের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন তোলাপাড় সারা দেশ। বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লাখো কোটি নেটিজেন।
ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রতিবাদে নিজের মত জানিয়েছিলেন আবরার ফাহাদ। সেই স্ট্যাটাসের জেরে তাকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েটের একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এখন পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গঠিত ২ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর বিগত বছরগুলোতে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডগুলোর ইতিহাস সামনে আসছে।
গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসা সেসব হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো জড়ো করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। এই ২৪ জনের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন, রাজশাহীতে ৫ জন, ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৩ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের ১৭টি ঘটেছে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে!
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণেমূলত এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে
মহিউদ্দিন কায়সার হত্যা: ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারীর রাতে চট্টগ্রামের ষোল শহর রেলস্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন কায়সারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার জন্য ছাত্রলীগ ও শিবির একে অপরকে দায়ী করে। পরে মহিউদ্দিনকে নিজেদের কর্মী দাবি করে চবি ছাত্রলীগ ও শিবির উভয় দলই।
মামুন হত্যা: একই বছরের ১২ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হন।
হারুন অর রশীদ হত্যা: ২০১০ সালের ২৮ মার্চ রাতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহর হতে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চবি মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশীদকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
আসাদুজ্জামান হত্যা: একই বছরের ১৫ এপ্রিল চবি ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অ্যাকাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান নিহত হন।
তাপস হত্যা: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী তাপস।
দিয়াজ হত্যা: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চবির ২নং গেট সংলগ্ন নিজ বাসায় খুন হন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ। এ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শরিফুজ্জামান হত্যা: ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন রাবির শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী।
ফারুক হত্যা: পরের বছর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন।
নাসিম হত্যা: একই বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবসে টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরুল্লাহ নাসিমকে ফেলে হত্যা করে ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা।
সোহেল হত্যা: ২০১২ সালের ১৫ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মাঝে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল।
পদ্মা সেতুর চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এই আভ্যন্তরীণ কোন্দল লাগে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
রুস্তম হত্যা: ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিশু রাব্বি হত্যা: কোনো শিক্ষার্থী নয় বাকৃবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বলি হন ১০ বছরের শিশু রাব্বি। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটে।
সায়াদ হত্যা: ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ নিজ দলের নেতাকর্মী হাতেই প্রাণ হারান আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়াদ ইবনে মমাজ। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে বলে সে সময় জাতীয় সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিশ্বজিৎ হত্যা: এ হত্যাকান্ডের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর সারা দেশ প্রকম্পিত হয়। শিবির সন্দেহে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে।
জুবায়ের হত্যা: এ হত্যাকান্ডের জন্যেও ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কলহের জেরে এক হামলায় গুরতর আহত হন জাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্পাসে তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
আবু বকর হত্যা: ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। এ হত্যা মামলায় সব আসামি ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
বিপুল হত্যা: ২০১২ সালের ৯ জুন সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ফাহিম মাহফুজ বিপুল।
জাকারিয়া ও মিল্টন হত্যা: স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা পড়েন হাবিপ্রবির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালইয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
সজীব, রিয়াদ ও সুমন দাস হত্যা: ২০১২ সালের ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হন। ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রকাশ্যে খুন হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ।
একই বছর ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমন দাস। (যুগান্তর)