নিউইয়র্ক ০১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সিলেটে নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৪৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ১৫১৮ বার পঠিত

ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী প্রচার’ শুরু হয়েছে সিলেট থেকে। ভোটের বছরের শুরুতে সিলেটে গিয়ে তিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন এবং জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারী) বিকালের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রচার চালানো এখান থেকেই শুরু। নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
নৌকায় মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় আগত সবাইকে হাত তুলে ওয়াদা করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। “আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।” মাঠভরতি মানুষ হাত তুলে শেখ হাসিনার কথায় সায় দেন। আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় সরকারী ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফরে গিয়ে জনসভায় শেখ হাসিনার ভোট চাওয়ার সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। তারা বলছে, এভাবে রাষ্ট্রীয় খরচে দলের পক্ষে প্রচার চালানো আইন-বিরুদ্ধ।
জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনাম হয়েছে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো শহর সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করেন। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের শুরুতে হবিগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্টদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা এবং বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের উপর গ্রেনেড হামলার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সভায় দশম জাতীয় সংসদ বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট কেন্দ্রে আগুন দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। পাঁচ বছরে বিএনপি হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। তিন হাজার মানুষ তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। পোড়া মানুষের লাশ দেখে খালেদা জিয়া উৎফুল্ল হয়েছে।
আওয়ামী লীগ আমলের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে উন্নয়ন। আর, বিএনপি আসা মানেই ধ্বংস। সেনানিবাস প্রতিষ্ঠাসহ সিলেটের উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে দেশের এত উন্নয়ন হত না। লুটেরা আসলে লুটেপুটে খেত।
সকালে সিলেটে পৌঁছে সরাসরি শহরের দরগাহ মহল্লায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি হজরত শাহজালালের  মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করেন। শাহজালালের মাজার থেকে শেখ হাসিনা যান শহরের প্রান্তে খাদিম নগরে, হজরত শাহপরাণের মাজারে। এরপর সুরমা পারের কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে হজরত গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি।
তিন মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতির পর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে পৌছান। জনসভার শুরুতেই ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার উন্নয়ন, নারীদের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, মাজারের সৌন্দর্য বর্ধন এবং মাজারের যাতায়াতের প্রধান রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, পিরোজপুরে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণাগার ভবন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা অফিস, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন, সিলেট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন হজরত শাহজালালের মাজারে নারীদের জন্য ইবাদতখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা হল নির্মাণ, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ ভবন ও হলরুম নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্র ও ছাত্রীদের দুটি হোস্টেল ভবন নির্মাণ, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেলের নার্সিং হোস্টেল ভবন নির্মাণ, সিলেট পুলিশ লাইনসে ব্যারাক ও অস্ত্রাগার নির্মাণ, কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবন, সিলেটের লালাবাজারে রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ লাইনস নির্মাণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পের।
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলার মানুষ তাঁর স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সন্মান পেয়েছে।’ ‘বাঙালী কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উচু করে চলবে, আর তা নিশ্চিত করতে হলে আগামী যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মাকায় ভোট চাই,’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত তুলে নৌকায় ভোট দানের জন্য জনগণের ওয়াদা চাইলে সকলে সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করেন।
সিলেট জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং ডা. দিপু মনি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অন্যান্যেও মধ্যে সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন। জনসভার পূর্বে এই আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থল থেকেই প্রধানমন্ত্রী একযোগে সিলেটে ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো নগরী সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রাক নির্বাচনী এই জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর চলার পথের দু’দিকে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে স্বাগত জানান লক্ষ্য জনতা। সকাল থেকেই সিলেটবাসীর যেন একটাই গন্তব্য ছিল, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। হাজার হাজার মানুষ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে- গেয়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে, আকাশ-বাতাস মুখরিত করে জড়ো হতে থাকে জনসভা স্থলে। দুপুর নাগাদ সমাবেশস্থল, আশ-পাশের রাস্তা-ঘাট, মাঠ, বাড়ি-ঘরের ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল, দেলোয়ার হোসেন, নওফেল চৌধুরী, বিপ্লব বড়ুয়া, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

সিলেটে নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন

প্রকাশের সময় : ০৭:৪৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮

ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী প্রচার’ শুরু হয়েছে সিলেট থেকে। ভোটের বছরের শুরুতে সিলেটে গিয়ে তিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন এবং জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারী) বিকালের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রচার চালানো এখান থেকেই শুরু। নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
নৌকায় মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় আগত সবাইকে হাত তুলে ওয়াদা করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। “আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।” মাঠভরতি মানুষ হাত তুলে শেখ হাসিনার কথায় সায় দেন। আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় সরকারী ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফরে গিয়ে জনসভায় শেখ হাসিনার ভোট চাওয়ার সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। তারা বলছে, এভাবে রাষ্ট্রীয় খরচে দলের পক্ষে প্রচার চালানো আইন-বিরুদ্ধ।
জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনাম হয়েছে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো শহর সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সিলেটের প্রয়াত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, দেওয়ান ফরিদ গাজী ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে স্মরণ করেন। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের শুরুতে হবিগঞ্জে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্টদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা এবং বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের উপর গ্রেনেড হামলার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সভায় দশম জাতীয় সংসদ বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোট কেন্দ্রে আগুন দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। পাঁচ বছরে বিএনপি হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে। তিন হাজার মানুষ তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। পোড়া মানুষের লাশ দেখে খালেদা জিয়া উৎফুল্ল হয়েছে।
আওয়ামী লীগ আমলের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে উন্নয়ন। আর, বিএনপি আসা মানেই ধ্বংস। সেনানিবাস প্রতিষ্ঠাসহ সিলেটের উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে দেশের এত উন্নয়ন হত না। লুটেরা আসলে লুটেপুটে খেত।
সকালে সিলেটে পৌঁছে সরাসরি শহরের দরগাহ মহল্লায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি হজরত শাহজালালের  মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করেন। শাহজালালের মাজার থেকে শেখ হাসিনা যান শহরের প্রান্তে খাদিম নগরে, হজরত শাহপরাণের মাজারে। এরপর সুরমা পারের কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে হজরত গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি।
তিন মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতির পর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে পৌছান। জনসভার শুরুতেই ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। হজরত গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার উন্নয়ন, নারীদের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, মাজারের সৌন্দর্য বর্ধন এবং মাজারের যাতায়াতের প্রধান রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, পিরোজপুরে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণাগার ভবন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা অফিস, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন, সিলেট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন হজরত শাহজালালের মাজারে নারীদের জন্য ইবাদতখানা ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা হল নির্মাণ, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ ভবন ও হলরুম নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেল কলেজে ছাত্র ও ছাত্রীদের দুটি হোস্টেল ভবন নির্মাণ, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেলের নার্সিং হোস্টেল ভবন নির্মাণ, সিলেট পুলিশ লাইনসে ব্যারাক ও অস্ত্রাগার নির্মাণ, কোতোয়ালি মডেল থানা কম্পাউন্ডে ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবন, সিলেটের লালাবাজারে রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ লাইনস নির্মাণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রকল্পের।
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অতীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলার মানুষ তাঁর স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সন্মান পেয়েছে।’ ‘বাঙালী কারো কাছে হাত পেতে চলবে না, মাথা উচু করে চলবে, আর তা নিশ্চিত করতে হলে আগামী যে নির্বাচন সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মাকায় ভোট চাই,’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাত তুলে নৌকায় ভোট দানের জন্য জনগণের ওয়াদা চাইলে সকলে সমস্বরে চিৎকার করে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্থ করেন।
সিলেট জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং ডা. দিপু মনি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান অন্যান্যেও মধ্যে সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান সমাবেশে সভাপতিত্বে করেন। জনসভার পূর্বে এই আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থল থেকেই প্রধানমন্ত্রী একযোগে সিলেটে ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেটে শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর এটি। এ উপলক্ষে পুরো নগরী সাজানো হয় ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রাক নির্বাচনী এই জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর চলার পথের দু’দিকে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে স্বাগত জানান লক্ষ্য জনতা। সকাল থেকেই সিলেটবাসীর যেন একটাই গন্তব্য ছিল, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। হাজার হাজার মানুষ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে- গেয়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে, আকাশ-বাতাস মুখরিত করে জড়ো হতে থাকে জনসভা স্থলে। দুপুর নাগাদ সমাবেশস্থল, আশ-পাশের রাস্তা-ঘাট, মাঠ, বাড়ি-ঘরের ছাদ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল, দেলোয়ার হোসেন, নওফেল চৌধুরী, বিপ্লব বড়ুয়া, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।