নিউইয়র্ক ০৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সরকার সুবোধ বালকের অভিনয় করছে : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩
  • / ৩২ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে উৎসাহ জোগাতে’ এই ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ভিসা নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সমকাল কথা বলেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহ-সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে স¤প্রতি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: প্রথমেই যেটি বলতে চাই, এমন একটি ভিসা নীতি বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য লজ্জার। এমন ভিসা নীতি আর কোনো রাষ্ট্রের জন্য কি দেওয়া হয়েছে? যদি আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর দিকে তাকাইÑভারত, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানের জন্যও তো এমন ভিসা নীতি দেওয়া হয়নি। দেখতে হবে, বাংলাদেশকে কোন প্রেক্ষাপটে নতুন ভিসা নীতি দেওয়া হয়েছে। আমেরিকার ভিসা নীতির মূলে রয়েছে ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র। এখানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে এখানে একটি প্রকল্প বানিয়ে রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচনী প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ভিসা নীতির বক্তব্য বা বার্তা খুবই স্পষ্ট। এখানে বাকস্বাধীনতা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই; সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে ভিন্নমত ও দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এখানে ভোটকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারেই এই ভিসা নীতি কাজ করবে। এ দেশে কারা নাগরিক সমাজকে ভয় দেখাতে চায়; কারা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তা সবাই জানে।
প্রশ্ন : রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থায় ভিসা নীতির প্রভাব কতটা পড়তে পারে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমার বিবেচনায় এটি স্যাংশনের চেয়েও বেশি প্রভাব রাখবে। কারণ, স্যাংশন ছিল নির্দিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি। আর এটা উন্মুক্ত। যারা যারা নির্বাচনকে, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী হবে, তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা নিজেরা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যÑযারা উচ্চশিক্ষা, ভ্রমণের জন্য আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল, তাদের ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের বাধা। এটি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাটি তারা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছে, সেসবের আলোকে এটি দেওয়া হয়েছে। স¤প্রতি আমরা দেখেছি, গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এটি তো সতর্কবার্তা। যেখানে বিশ্বের ১০৭টি দেশ দাওয়াত পেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের দাওয়াত না পাওয়া এটিই নির্দেশ করেÑবাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য চরম অপমানজনক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়নি।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকার কথাও বলা আছে। এটা বিএনপির জন্য কোনো চাপ কিনা?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির জন্য চাপের প্রশ্নই আসে না। বরং আমরা যেসব কথা এত দিন ধরে বলে আসছিলাম, সেসব কথাই এখন ভিসা নীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করার কথা আমরা আগেও বলেছি। বিরোধী দল, নাগরিক সমাজকে ভয় দেখানো, সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও আমরা বলেছি। এসব অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। লাখো নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে বিএনপির যে লড়াই, সংগ্রাম ও ত্যাগ, সেসব নিশ্চিত করার কথাই এখন আমেরিকার ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে তো কিছু বলা হয়নি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির দাবিÑএকটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়, এমন একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে বিএনপির দায়বদ্ধতা। এই ভিসা নীতি যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় ভালোভাবে এই দাবির যথোপযুক্ততা সম্পর্কে জানেন। যে কারণে তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তারা জানে কারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা। দেশের জনসাধারণও জানে কোন পরিস্থিতিতে, কেন, কাদের প্রতি ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রশ্ন : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তা বর্জন ও প্রতিহত করার কথা বলে এসেছে বিএনপি। নতুন ভিসা নীতির পরে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনমনীয় থাকতে পারবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: একটি দেশে নির্বাচনের সময়ে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকার কথা; যে সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা থাকার কথা, সেসব ধ্বংস করা হয়েছে। বিএনপি সেই নিরপেক্ষ অবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতেই আন্দোলন করছে। দেশের মানুষ দেখেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপি যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়, তাহলে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ বিএনপিকে ক্ষমা করবে না। আরেকটি কথা, নির্বাচন হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। প্রথম ধাপ হচ্ছে- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; মানুষ ভোট দিতে পারবে এটা নিশ্চিত করা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তারপর নির্বাচন। এখন এসব না করে যদি বিএনপি নির্বাচনের দিকে যায়, তাহলে তো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আন্দোলন থেকে বিএনপির সরে আসার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : ক্ষমতাসীন দল তো বলছে, তারা বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: নতুন ভিসা নীতির পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা সুবোধ বালক হওয়ার অভিনয় করছে। ভিসা নীতির পরে আওয়ামী লীগ বলছে, ‘আমরা আমেরিকার সঙ্গে একমত।’ এখন তারা বলছে যে, তারা সংঘাত চায় নায়। এখন তারা বিরোধী দলকে দমন না করার কথা; সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণœ না করার কথা বলছে। এমন কথা তারা ২০১৮-এর নির্বাচনের আগেও বলেছিল। কিন্তু মানুষকে তো বারবার বোকা বানানো যাবে না। মিষ্টি কথায় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মতো বোকামি দেশের মানুষ আর করবে না। ন্যাড়া কয়বার বেলতলা যায়!
প্রশ্ন : মাঠের আন্দোলনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আপনারা কতটা আশাবাদী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: একটা বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার; বিএনপির দাবি সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সুষ্ঠু নির্বাচন- এগুলো বিএনপির একার নয়। এগুলো দেশবাসীরও দাবি। স্বাধীন নাগরিকের যে অধিকার, সেগুলো থেকে এখন সবাই বঞ্চিত। তাই এই অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবির সঙ্গে সবার ঐকমত্য না হওয়ার কারণ নেই। এখন দেশবাসীরও একটিই দাবি। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে। এ দাবি মূলত দেশবাসীর দাবি। সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে একটি জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বিএনপি এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিএনপির কর্মসূচির দিকে তাকালে দেশের লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতি আজকে আরেকটি সামষ্টিক সংগ্রামে শামিল হয়েছে। তাই এখানে জয়ী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য জয়ী হতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেটি ফিরে পাওয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের জয়ী হতে হবে।
প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: এক কথায় বলতে গেলে, বিএনপির পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াই হবে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূলকথা। ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার যেভাবে দেশকে ব্যবহার করছে; আমরা এটা করব না। বাংলাদেশের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রধান থাকবে।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সরকার সুবোধ বালকের অভিনয় করছে : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

প্রকাশের সময় : ১১:৪৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুন ২০২৩

হককথা ডেস্ক: গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে উৎসাহ জোগাতে’ এই ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ভিসা নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সমকাল কথা বলেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহ-সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে স¤প্রতি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতিকে কীভাবে দেখছেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: প্রথমেই যেটি বলতে চাই, এমন একটি ভিসা নীতি বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য লজ্জার। এমন ভিসা নীতি আর কোনো রাষ্ট্রের জন্য কি দেওয়া হয়েছে? যদি আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর দিকে তাকাইÑভারত, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানের জন্যও তো এমন ভিসা নীতি দেওয়া হয়নি। দেখতে হবে, বাংলাদেশকে কোন প্রেক্ষাপটে নতুন ভিসা নীতি দেওয়া হয়েছে। আমেরিকার ভিসা নীতির মূলে রয়েছে ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র। এখানে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে এখানে একটি প্রকল্প বানিয়ে রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি নির্বাচনী প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ভিসা নীতির বক্তব্য বা বার্তা খুবই স্পষ্ট। এখানে বাকস্বাধীনতা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই; সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে ভিন্নমত ও দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এখানে ভোটকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারেই এই ভিসা নীতি কাজ করবে। এ দেশে কারা নাগরিক সমাজকে ভয় দেখাতে চায়; কারা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তা সবাই জানে।
প্রশ্ন : রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থায় ভিসা নীতির প্রভাব কতটা পড়তে পারে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমার বিবেচনায় এটি স্যাংশনের চেয়েও বেশি প্রভাব রাখবে। কারণ, স্যাংশন ছিল নির্দিষ্ট বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি। আর এটা উন্মুক্ত। যারা যারা নির্বাচনকে, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী হবে, তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা নিজেরা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যÑযারা উচ্চশিক্ষা, ভ্রমণের জন্য আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল, তাদের ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের বাধা। এটি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাটি তারা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেছে, সেসবের আলোকে এটি দেওয়া হয়েছে। স¤প্রতি আমরা দেখেছি, গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এটি তো সতর্কবার্তা। যেখানে বিশ্বের ১০৭টি দেশ দাওয়াত পেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের দাওয়াত না পাওয়া এটিই নির্দেশ করেÑবাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য চরম অপমানজনক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়নি।
প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকার কথাও বলা আছে। এটা বিএনপির জন্য কোনো চাপ কিনা?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির জন্য চাপের প্রশ্নই আসে না। বরং আমরা যেসব কথা এত দিন ধরে বলে আসছিলাম, সেসব কথাই এখন ভিসা নীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করার কথা আমরা আগেও বলেছি। বিরোধী দল, নাগরিক সমাজকে ভয় দেখানো, সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও আমরা বলেছি। এসব অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। লাখো নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে বিএনপির যে লড়াই, সংগ্রাম ও ত্যাগ, সেসব নিশ্চিত করার কথাই এখন আমেরিকার ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ে তো কিছু বলা হয়নি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির দাবিÑএকটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়, এমন একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে বিএনপির দায়বদ্ধতা। এই ভিসা নীতি যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় ভালোভাবে এই দাবির যথোপযুক্ততা সম্পর্কে জানেন। যে কারণে তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তারা জানে কারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা। দেশের জনসাধারণও জানে কোন পরিস্থিতিতে, কেন, কাদের প্রতি ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রশ্ন : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তা বর্জন ও প্রতিহত করার কথা বলে এসেছে বিএনপি। নতুন ভিসা নীতির পরে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনমনীয় থাকতে পারবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: একটি দেশে নির্বাচনের সময়ে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকার কথা; যে সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা থাকার কথা, সেসব ধ্বংস করা হয়েছে। বিএনপি সেই নিরপেক্ষ অবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতেই আন্দোলন করছে। দেশের মানুষ দেখেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপি যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়, তাহলে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ বিএনপিকে ক্ষমা করবে না। আরেকটি কথা, নির্বাচন হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। প্রথম ধাপ হচ্ছে- লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; মানুষ ভোট দিতে পারবে এটা নিশ্চিত করা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তারপর নির্বাচন। এখন এসব না করে যদি বিএনপি নির্বাচনের দিকে যায়, তাহলে তো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আন্দোলন থেকে বিএনপির সরে আসার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : ক্ষমতাসীন দল তো বলছে, তারা বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: নতুন ভিসা নীতির পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা সুবোধ বালক হওয়ার অভিনয় করছে। ভিসা নীতির পরে আওয়ামী লীগ বলছে, ‘আমরা আমেরিকার সঙ্গে একমত।’ এখন তারা বলছে যে, তারা সংঘাত চায় নায়। এখন তারা বিরোধী দলকে দমন না করার কথা; সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণœ না করার কথা বলছে। এমন কথা তারা ২০১৮-এর নির্বাচনের আগেও বলেছিল। কিন্তু মানুষকে তো বারবার বোকা বানানো যাবে না। মিষ্টি কথায় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মতো বোকামি দেশের মানুষ আর করবে না। ন্যাড়া কয়বার বেলতলা যায়!
প্রশ্ন : মাঠের আন্দোলনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আপনারা কতটা আশাবাদী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: একটা বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার; বিএনপির দাবি সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, সুষ্ঠু নির্বাচন- এগুলো বিএনপির একার নয়। এগুলো দেশবাসীরও দাবি। স্বাধীন নাগরিকের যে অধিকার, সেগুলো থেকে এখন সবাই বঞ্চিত। তাই এই অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবির সঙ্গে সবার ঐকমত্য না হওয়ার কারণ নেই। এখন দেশবাসীরও একটিই দাবি। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে। এ দাবি মূলত দেশবাসীর দাবি। সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে একটি জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বিএনপি এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিএনপির কর্মসূচির দিকে তাকালে দেশের লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতি আজকে আরেকটি সামষ্টিক সংগ্রামে শামিল হয়েছে। তাই এখানে জয়ী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য জয়ী হতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেটি ফিরে পাওয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের জয়ী হতে হবে।
প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: এক কথায় বলতে গেলে, বিএনপির পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াই হবে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূলকথা। ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার যেভাবে দেশকে ব্যবহার করছে; আমরা এটা করব না। বাংলাদেশের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রধান থাকবে।