সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস
- প্রকাশের সময় : ১০:৩৭:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭
- / ৮৯৪ বার পঠিত
ঢাকা: ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। একইসঙ্গে সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিলও পাস হয়েছে। নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে ২০১৭- ১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাস হলো যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সর্ব সম্মতিক্রমে এ বিল পাস হয়। যদিও প্রস্তাবিত বাজেটের নির্দিষ্টকরণ বিলের বিষয়ে কয়েকটি ছাটাই প্রস্তাব আনেন সংসদ সদস্যরা যা কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবে স্পিকার বিলটি পাসের জন্য ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন আরা এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (১ জুলাই) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা নবম বাজেট।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী মুহিত সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এক মাস আলোচনার পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে তা পাস হয়।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন। চার লাখ কোটি টাকার এই বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা; যার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। এই অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ২২ শতাংশ।
বিশাল এই ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মুহিত।
৮৪ বছর বয়সী মুহিত এই বাজেটকে নিজের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট’ বললেও এবারই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা সইতে হয়েছে তাকে, বিশেষ করে ভ্যাট আইন ও ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যদের বাইরে নিজের দল আওয়ামী লীগ, এমনকি মন্ত্রিসভার সহকর্মীরাও মুহিতের সমালোচনা করেছেন। দীর্ঘ আলোচনার পর ব্যাংক আমানতের আবগারি শুল্কের প্রস্তাবে বুধবার (২৮ জুন) সংশোধনী আনা হয়। সেইসঙ্গে সবক্ষেত্রে সমান ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের প্রস্তাব দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। এ দুটি বিষয়ের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় সংশোধন করে বুধবার সংসদে অর্থবিল পাস হয়।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় বৃহস্পতিবার সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর মধ্যে সাংসদদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ তিন লাখ ৭০ হাজার ৬৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত।
মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব: আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদরা ৩৫২টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।
ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো ছিল অর্থ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগে, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে।
বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদদের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।