নিউইয়র্ক ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত খোকা : বাবা-মার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০১৯
  • / ২৬১ বার পঠিত

অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হলে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে -যাযাদি

হককথা ডেস্ক: ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও ৫ দফা জানাজা শেষে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। নিউইয়র্ক থেকে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কফিন গ্রহণ করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অবসরপপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, নাজিমউদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, বজলুল বাসিত আনজু, নবী উলস্নাহ নবী, এসএম জাহাঙ্গীর, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ মহানগর নেতারা। খোকার কফিনের সঙ্গে তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন এবং মেয়ে সারিকা সাদেক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালামসহ স্বজনরাও এসেছেন।
‘সমাহিত করার আগে রাষ্ট্রীয় সালাম’
খোকার মরদেহ কবরে নামানোর আগে এক পস্ন্যাটুনের এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে পুলিশের ১৭ সদস্যের একটি চৌকস দল ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তারা এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা স্যালুট জানান। এই সময়ে পুলিশের এডিসি নাজমুর নাহারসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জুরাইনের পুরনো কবরস্থানে দাফন করা হয় সাদেক হোসেন খোকাকে। এই কবরস্থানে সামনের দিকে তার মা সালেহা খাতুন ও বাবা এম এ করীমের কবর রয়েছে।
এ সময়ে মরহুমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আত্মীয়স্বজরা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা’
বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সংসদ ভবনের আনা হয়। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ, এম মোরশেদ খান, অলি আহমেদ, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, সাবের হোসেন চৌধুরী, মশিউর রহমান রাঙ্গা, জয়নুল আবদীন ফারুক, উকিল আবদুস সাত্তার, আলমগীর কবির, হারুনুর রশীদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পরে বিরোধী দলের পক্ষে মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিএনপির সংসদীয় গ্রæপ, এলডিপির পক্ষ থেকে খোকার কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্পিকার ও সংসদ এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে কফিনে কোনো শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।
এরপর দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টার জন্য কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য রাখা হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, জাসাসের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শায়রুল কবির খানসহ বামসংগঠনগুলো ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময়ে কফিনের সামনে খোকার দুই ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন দাঁড়িয়েছিলেন।
বিএনপির অফিসে শেষ শ্রদ্ধা’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে তার মরদেহ নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে আসলে অশ্রæসজল নেতা-কর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়াত খোকার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রথমে দলের পক্ষ থেকে, পরে কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
খোকার কফিন নয়া পল্টনে কালো কাপড়ে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয়। এ সময়ে নেতা-কর্মীদের কফিনের সামনে ঘুমরে ঘুমরে কাঁদতে দেখা যায়। বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাদের অনেককেই অশ্রæসজল দেখাচ্ছিল।
কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে শোকাগ্রস্থ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের সকলের প্রিয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুইবারের নির্বাচিত ঢাকার সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এমন এক সময় চলে গেলেন যখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না। তার মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’
দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে খোকার বড় ছেলেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন উলামা দলের আহবায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক। জানাজার পর মুক্তিযোদ্ধা খোকার কফিনে স্যালুট জানান জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা। এদের মধ্যে ছিলেন সেক্টার কমান্ডার শাহজাহান ওমরসহ মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় জাতীয় পতাকা দিয়ে তার কফিন ঢেকে দেওয়া হয়।
এই জানাজায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবউদ্দিন খোকনহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ড. সালাউদ্দিন মোল্লসহ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, শামীম সাঈদী, জাগপা’র খোন্দকার লুফর রহমান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুফতি নেতারাও জানাজায় অংশ নেন। নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে ফকিরের পুল মোড় পর্যন্ত সড়ক ও তার আশপাশের গলিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই জানাজায় দাঁড়ান। পুরো পল্টন রোড কানায় কানায় পূর্ণ হয়।
জানাজা যখন হচ্ছিন তখন কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা মাথা নিচু করে তাদের প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
সকাল ৮টা থেকে নয়া পল্টনের অফিসের নিচ তলায় সকাল থেকেই কোরান খানি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির কার্যালয় থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সেখান জানাজায় অংশ নেন দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকনসহ কাউন্সিল ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর সাদেক হোসেন খোকাকে নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় খেলা ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সেখানে কিছক্ষণ রাখার পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কফিন গোপীবাগে পৈতৃক বাসভবনে আত্মীয়-স্বজনদের দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাদ আসর ধুপখোলা মাঠে সর্বশেষ জানাজার পর জুরাইনে দাফন করা হয় বীর এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। (যায়যায়দিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত খোকা : বাবা-মার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত

প্রকাশের সময় : ০৮:২০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০১৯

অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হলে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে -যাযাদি

হককথা ডেস্ক: ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও ৫ দফা জানাজা শেষে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। নিউইয়র্ক থেকে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কফিন গ্রহণ করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অবসরপপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, নাজিমউদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, বজলুল বাসিত আনজু, নবী উলস্নাহ নবী, এসএম জাহাঙ্গীর, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ মহানগর নেতারা। খোকার কফিনের সঙ্গে তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন এবং মেয়ে সারিকা সাদেক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালামসহ স্বজনরাও এসেছেন।
‘সমাহিত করার আগে রাষ্ট্রীয় সালাম’
খোকার মরদেহ কবরে নামানোর আগে এক পস্ন্যাটুনের এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে পুলিশের ১৭ সদস্যের একটি চৌকস দল ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তারা এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা স্যালুট জানান। এই সময়ে পুলিশের এডিসি নাজমুর নাহারসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জুরাইনের পুরনো কবরস্থানে দাফন করা হয় সাদেক হোসেন খোকাকে। এই কবরস্থানে সামনের দিকে তার মা সালেহা খাতুন ও বাবা এম এ করীমের কবর রয়েছে।
এ সময়ে মরহুমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আত্মীয়স্বজরা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা’
বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সংসদ ভবনের আনা হয়। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ, এম মোরশেদ খান, অলি আহমেদ, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, সাবের হোসেন চৌধুরী, মশিউর রহমান রাঙ্গা, জয়নুল আবদীন ফারুক, উকিল আবদুস সাত্তার, আলমগীর কবির, হারুনুর রশীদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পরে বিরোধী দলের পক্ষে মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিএনপির সংসদীয় গ্রæপ, এলডিপির পক্ষ থেকে খোকার কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্পিকার ও সংসদ এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে কফিনে কোনো শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।
এরপর দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টার জন্য কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য রাখা হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, জাসাসের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শায়রুল কবির খানসহ বামসংগঠনগুলো ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময়ে কফিনের সামনে খোকার দুই ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন দাঁড়িয়েছিলেন।
বিএনপির অফিসে শেষ শ্রদ্ধা’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে তার মরদেহ নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে আসলে অশ্রæসজল নেতা-কর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়াত খোকার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রথমে দলের পক্ষ থেকে, পরে কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
খোকার কফিন নয়া পল্টনে কালো কাপড়ে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয়। এ সময়ে নেতা-কর্মীদের কফিনের সামনে ঘুমরে ঘুমরে কাঁদতে দেখা যায়। বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাদের অনেককেই অশ্রæসজল দেখাচ্ছিল।
কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে শোকাগ্রস্থ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের সকলের প্রিয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুইবারের নির্বাচিত ঢাকার সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এমন এক সময় চলে গেলেন যখন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তিনি তাকে শেষ দেখা দেখতে পারলেন না। তার মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’
দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে খোকার বড় ছেলেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন উলামা দলের আহবায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক। জানাজার পর মুক্তিযোদ্ধা খোকার কফিনে স্যালুট জানান জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা। এদের মধ্যে ছিলেন সেক্টার কমান্ডার শাহজাহান ওমরসহ মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় জাতীয় পতাকা দিয়ে তার কফিন ঢেকে দেওয়া হয়।
এই জানাজায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবউদ্দিন খোকনহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ড. সালাউদ্দিন মোল্লসহ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান, হামিদুর রহমান আজাদ, শামীম সাঈদী, জাগপা’র খোন্দকার লুফর রহমান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুফতি নেতারাও জানাজায় অংশ নেন। নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে ফকিরের পুল মোড় পর্যন্ত সড়ক ও তার আশপাশের গলিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই জানাজায় দাঁড়ান। পুরো পল্টন রোড কানায় কানায় পূর্ণ হয়।
জানাজা যখন হচ্ছিন তখন কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা মাথা নিচু করে তাদের প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
সকাল ৮টা থেকে নয়া পল্টনের অফিসের নিচ তলায় সকাল থেকেই কোরান খানি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির কার্যালয় থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সেখান জানাজায় অংশ নেন দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকনসহ কাউন্সিল ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর সাদেক হোসেন খোকাকে নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় খেলা ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সেখানে কিছক্ষণ রাখার পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কফিন গোপীবাগে পৈতৃক বাসভবনে আত্মীয়-স্বজনদের দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাদ আসর ধুপখোলা মাঠে সর্বশেষ জানাজার পর জুরাইনে দাফন করা হয় বীর এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। (যায়যায়দিন)