নিউইয়র্ক ০৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটা কেন সারা বছর থাকে না?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:০৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ১২১ বার পঠিত

ফেব্রæয়ারী এলেই শহীদ মিনারের পাঁচটি স্তম্ভের পেছনে যুক্ত হয় উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত। কিন্তু সারা বছর এই বৃত্ত দেখা যায় না। একাধিক স্থপতির সঙ্গে কথা বলে এই পার্থক্যের কারণ জানা যায়নি। তবে সবাই বলেছেন, এই বৃত্ত শহীদ মিনারেরই অংশ, তাই সব সময়ই থাকা উচিত। ছবি : কালের কণ্ঠ
আজিজুল পারভেজ: ভাষার মাস ফেব্রæয়ারী এলেই নতুন রূপ নেয় বাঙালীর গৌরব ও অহংকারের প্রতীক ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। পাঁচটি স্তম্ভের পেছনে যুক্ত হয় উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত। কিন্তু সারা বছর থাকে না এই লাল বৃত্ত। কেন থাকে না? এটা কি শহীদ মিনারের নকশার অংশ নয়? অংশ হলে সারা বছর থাকবে না কেন? এই প্রশ্নগুলো প্রতিবছর ঘুরেফিরে এলেও উত্তর মেলে না সহজে।
বাংলা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা একুশের মহান শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রæয়ারী মাসের শুরুতে এবার এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কালের কণ্ঠ। স্বনামধন্য কয়েকজন স্থপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কেউ এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তাঁরা বলেন, লাল বৃত্তটা তো শহীদ মিনারেরই অংশ। এটা অবশ্যই সারা বছর থাকতে হবে। না থাকলে শহীদ মিনারের নকশার অঙ্গহানি হয়।
শহীদ মিনারের নকশার দিকে তাকালে দেখা যায়, এতে রয়েছে মোট পাঁচটি স্তম্ভ। মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু, ওপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। দুই পাশে আরো চারটি স্তম্ভ। মনে করা হয়, অতন্দ্র প্রহরী চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা। সেই গানের কথার মতো, ‘মাগো… ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রæ এলে শক্ত হাতে লড়তে জানি/তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’ পেছনে উদীয়মান লাল টকটকে সূর্য। অর্থাৎ মাতৃভাষার অধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যেমন অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন রফিক, জব্বার, সালাম, শফিক, বরকত; তেমনি মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মায়ের পাশে এখনো অতন্দ্র প্রহরায় তার সন্তানরা। আর পেছনের লাল সূর্যটা স্বাধীনতার, নতুন দিনের, অন্ধকার দূর করে আলোর উৎসারণ।
শহীদ মিনারের নির্মাণ সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রæয়ারী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে বাঙালীদের রাজপথে জীবনদানের স্মরণে ২৩ ফেব্রæয়ারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ করেন। ২৬ ফেব্রæয়ারী স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে ফেলে পুলিশ। এরপর ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশায় নির্মাণযজ্ঞে যুক্ত হন ভাস্কর নভেরা আহমদ। মূল রূপ কল্পনায় ছিল স্নেহময়ী আনত মস্তক মায়ের প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ কাঠামো এবং দুই পাশের সন্তানের প্রতীক স্বরূপ দুটি করে কাঠামোর সামনে বাঁধানো চত্বর। সম্মুখ চত্বরে দুটি ম্যুরাল। পেছনে দেয়ালচিত্র। ছিল বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে একটি ফোয়ারা স্থাপনের পরিকল্পনা। আরো ছিল একটি জাদুঘর ও পাঠাগার।
এ পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৫৭ সালে শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ। কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার পরও ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই অসম্পূর্ণ ও খন্ডিত শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শপথ গ্রহণ ও আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আজম খানের গঠিত কমিটির পরামর্শ মতে মূল নকশা অনেকটাই পরিবর্তন ও সংকুচিত করা হয়। মূল নকশাকে খন্ডিত করে আরেকটি নকশা দাঁড় করানো হয়। এ নকশানুযায়ী নির্মিত শহীদ মিনারটি ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রæয়ারী উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। সেই থেকে শহীদ মিনার হয়ে ওঠে বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের চেতনার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী ভেঙে দেয় বাঙালীর গৌরব ও অহঙ্কারের শহীদ মিনারটি। তারা সেখানে ‘মসজিদ’ লিখে রাখে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে নতুন করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরের বছরই বাঙালীর দুর্জয় সাহসের প্রতীক হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় শহীদ মিনার। ১৯৭৬ সালে নতুন করে অনুমোদন করা হয় একটি নকশা। কিন্তু নানা কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। শহীদ মিনার বর্তমান রূপ পায় আশির দশকে এসে। শহীদ মিনার চত্বরকে সম্প্রসারণ করা হয় ১৯৮৩ সালে। সেই থেকে বর্তমান শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।
এত সব জানার পর জানা গেল, শহীদ মিনারের লাল বৃত্তটি মূল নকশার অংশ ছিল না। এটি আশির দশকে যুক্ত করা হয়েছে। এ তথ্যটি জানা গেল বর্ষীয়ান চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের কাছ থেকে। তিনি জানান, বর্তমান শহীদ মিনারটি নির্মিত হওয়ার পর লাল বৃত্তটি যুক্ত করা হয়েছে। প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি জানান, শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ার পর দেখা গেল এর সামনে দাঁড়ালে দৃষ্টি চলে যায় তার পেছনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবনের দিকে। দেখা যায় ভবনের বারান্দায় মানুষের যাতায়াত। এ কারণে হাসপাতাল ভবনকে আড়াল করার জন্য শহীদ মিনারের পেছনে একটি প্রচীর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এসংক্রান্ত একটি সভায় অন্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁকেও (মুস্তাফা মনোয়ারকে) আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন তিনি প্রচীর না দিয়ে শহীদ মিনারের সঙ্গে একটি লাল বৃত্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করলে সেটা গ্রহণ করা হয়।
শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘গোল্ডেল সেকশন বলে একটা কথা আছে। এটি যে কোনো কিছুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের শরীরের মধ্যেও এমন গোল্ডেন সেকশন আছে। শহীদ মিনারের গোল্ডেন সেকশনে এই লাল বৃত্ত স্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, তখনকার কর্মকর্তারা এই লাল বৃত্তকে স্থায়ীভাবে স্থাপনের কথা বলেছিলেন। তখন তিনি বলেন, ‘বসন্তকালে নতুন ফুল ফোটে। সৌরভ ছড়িয়ে একসময় সেই ফুল ঝরে যায়। বছর শেষে আবার সজীবতা নিয়ে আসে নতুন ফুল। সে কারণে ফেব্রæয়ারী এলে আমরা শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটি লাগাব। এটা বিবর্ণ হয়ে গেলে আবার নতুন বছরে নতুন লাল বৃত্ত লাগাব। তাঁর এই ভাবনাকেও তখন গ্রহণ করা হয়। এভাবেই চলছে এখন। এ কারণেই সারা বছর থাকে না লাল বৃত্ত।’ প্রতি বছর ২০ ফেব্রæয়ারী শহীদ মিনারে যুক্ত হয় লাল বৃত্ত। (দৈনিক কালের কন্ঠ)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটা কেন সারা বছর থাকে না?

প্রকাশের সময় : ০৫:০৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ফেব্রæয়ারী এলেই শহীদ মিনারের পাঁচটি স্তম্ভের পেছনে যুক্ত হয় উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত। কিন্তু সারা বছর এই বৃত্ত দেখা যায় না। একাধিক স্থপতির সঙ্গে কথা বলে এই পার্থক্যের কারণ জানা যায়নি। তবে সবাই বলেছেন, এই বৃত্ত শহীদ মিনারেরই অংশ, তাই সব সময়ই থাকা উচিত। ছবি : কালের কণ্ঠ
আজিজুল পারভেজ: ভাষার মাস ফেব্রæয়ারী এলেই নতুন রূপ নেয় বাঙালীর গৌরব ও অহংকারের প্রতীক ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। পাঁচটি স্তম্ভের পেছনে যুক্ত হয় উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত। কিন্তু সারা বছর থাকে না এই লাল বৃত্ত। কেন থাকে না? এটা কি শহীদ মিনারের নকশার অংশ নয়? অংশ হলে সারা বছর থাকবে না কেন? এই প্রশ্নগুলো প্রতিবছর ঘুরেফিরে এলেও উত্তর মেলে না সহজে।
বাংলা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা একুশের মহান শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রæয়ারী মাসের শুরুতে এবার এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কালের কণ্ঠ। স্বনামধন্য কয়েকজন স্থপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কেউ এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তাঁরা বলেন, লাল বৃত্তটা তো শহীদ মিনারেরই অংশ। এটা অবশ্যই সারা বছর থাকতে হবে। না থাকলে শহীদ মিনারের নকশার অঙ্গহানি হয়।
শহীদ মিনারের নকশার দিকে তাকালে দেখা যায়, এতে রয়েছে মোট পাঁচটি স্তম্ভ। মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু, ওপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। দুই পাশে আরো চারটি স্তম্ভ। মনে করা হয়, অতন্দ্র প্রহরী চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা। সেই গানের কথার মতো, ‘মাগো… ভাবনা কেন? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রæ এলে শক্ত হাতে লড়তে জানি/তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’ পেছনে উদীয়মান লাল টকটকে সূর্য। অর্থাৎ মাতৃভাষার অধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যেমন অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন রফিক, জব্বার, সালাম, শফিক, বরকত; তেমনি মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মায়ের পাশে এখনো অতন্দ্র প্রহরায় তার সন্তানরা। আর পেছনের লাল সূর্যটা স্বাধীনতার, নতুন দিনের, অন্ধকার দূর করে আলোর উৎসারণ।
শহীদ মিনারের নির্মাণ সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রæয়ারী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনে বাঙালীদের রাজপথে জীবনদানের স্মরণে ২৩ ফেব্রæয়ারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ করেন। ২৬ ফেব্রæয়ারী স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে ফেলে পুলিশ। এরপর ১৯৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশায় নির্মাণযজ্ঞে যুক্ত হন ভাস্কর নভেরা আহমদ। মূল রূপ কল্পনায় ছিল স্নেহময়ী আনত মস্তক মায়ের প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ কাঠামো এবং দুই পাশের সন্তানের প্রতীক স্বরূপ দুটি করে কাঠামোর সামনে বাঁধানো চত্বর। সম্মুখ চত্বরে দুটি ম্যুরাল। পেছনে দেয়ালচিত্র। ছিল বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে একটি ফোয়ারা স্থাপনের পরিকল্পনা। আরো ছিল একটি জাদুঘর ও পাঠাগার।
এ পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৫৭ সালে শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ। কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার পরও ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই অসম্পূর্ণ ও খন্ডিত শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শপথ গ্রহণ ও আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আজম খানের গঠিত কমিটির পরামর্শ মতে মূল নকশা অনেকটাই পরিবর্তন ও সংকুচিত করা হয়। মূল নকশাকে খন্ডিত করে আরেকটি নকশা দাঁড় করানো হয়। এ নকশানুযায়ী নির্মিত শহীদ মিনারটি ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রæয়ারী উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। সেই থেকে শহীদ মিনার হয়ে ওঠে বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রামের চেতনার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী ভেঙে দেয় বাঙালীর গৌরব ও অহঙ্কারের শহীদ মিনারটি। তারা সেখানে ‘মসজিদ’ লিখে রাখে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে নতুন করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরের বছরই বাঙালীর দুর্জয় সাহসের প্রতীক হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় শহীদ মিনার। ১৯৭৬ সালে নতুন করে অনুমোদন করা হয় একটি নকশা। কিন্তু নানা কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। শহীদ মিনার বর্তমান রূপ পায় আশির দশকে এসে। শহীদ মিনার চত্বরকে সম্প্রসারণ করা হয় ১৯৮৩ সালে। সেই থেকে বর্তমান শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।
এত সব জানার পর জানা গেল, শহীদ মিনারের লাল বৃত্তটি মূল নকশার অংশ ছিল না। এটি আশির দশকে যুক্ত করা হয়েছে। এ তথ্যটি জানা গেল বর্ষীয়ান চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের কাছ থেকে। তিনি জানান, বর্তমান শহীদ মিনারটি নির্মিত হওয়ার পর লাল বৃত্তটি যুক্ত করা হয়েছে। প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি জানান, শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ার পর দেখা গেল এর সামনে দাঁড়ালে দৃষ্টি চলে যায় তার পেছনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবনের দিকে। দেখা যায় ভবনের বারান্দায় মানুষের যাতায়াত। এ কারণে হাসপাতাল ভবনকে আড়াল করার জন্য শহীদ মিনারের পেছনে একটি প্রচীর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এসংক্রান্ত একটি সভায় অন্য শিল্পীদের সঙ্গে তাঁকেও (মুস্তাফা মনোয়ারকে) আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন তিনি প্রচীর না দিয়ে শহীদ মিনারের সঙ্গে একটি লাল বৃত্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করলে সেটা গ্রহণ করা হয়।
শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘গোল্ডেল সেকশন বলে একটা কথা আছে। এটি যে কোনো কিছুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের শরীরের মধ্যেও এমন গোল্ডেন সেকশন আছে। শহীদ মিনারের গোল্ডেন সেকশনে এই লাল বৃত্ত স্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, তখনকার কর্মকর্তারা এই লাল বৃত্তকে স্থায়ীভাবে স্থাপনের কথা বলেছিলেন। তখন তিনি বলেন, ‘বসন্তকালে নতুন ফুল ফোটে। সৌরভ ছড়িয়ে একসময় সেই ফুল ঝরে যায়। বছর শেষে আবার সজীবতা নিয়ে আসে নতুন ফুল। সে কারণে ফেব্রæয়ারী এলে আমরা শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটি লাগাব। এটা বিবর্ণ হয়ে গেলে আবার নতুন বছরে নতুন লাল বৃত্ত লাগাব। তাঁর এই ভাবনাকেও তখন গ্রহণ করা হয়। এভাবেই চলছে এখন। এ কারণেই সারা বছর থাকে না লাল বৃত্ত।’ প্রতি বছর ২০ ফেব্রæয়ারী শহীদ মিনারে যুক্ত হয় লাল বৃত্ত। (দৈনিক কালের কন্ঠ)