নিউইয়র্ক ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকাল : রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার শোক ॥ যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের শোক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৬:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
  • / ৭৫০ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক আর নেই। লন্ডনে চিকিৎসাধীন মেয়র আনিসুল হক বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র (ভেনটিলেশন যন্ত্র) খুলে নেন। এরপর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে সহ আত্মীয়-স্বজন ও বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার সহদর বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর প্রধান। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে মেয়র আনিসুল হক চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের শোক: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে তার বিদেহী আতœার শান্তি কামনা এবং মেয়র পরিবারের সদস্যদের শোক সইবার জন্য মহান অল্লাহতায়ালার রহমত কামনা করা হয়েছে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এই শোক প্রকাশ করেন।
শোক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, মেয়র আনিসুল হকের অকাল আর আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন সুন্দর মনের মানুষকে হারালো আর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা হারালেন একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধিকে। তার শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
লন্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মেয়র আনিসুল হক লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিটে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। এসময় তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা তাঁর পাশে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, শনিবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়া হবে। ওই দিন বাদ আসর তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মেয়র পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ঢাকাসহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ীর কাছে তাঁর জন্য দোয়া তাঁর চেয়েছে তার পরিবার।
এদিকে আনিসুল হকের মৃত্যুর খবরে তার স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ও গুনগ্রাহীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। যুক্তরাজ্যে স্বামীর পাশে থাকা রুবানা বৃহস্পতিবার বিকালে মিডিয়াকে বলেন, আনিসুল হকের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়। তার জন্য দোয়া করুন। পরে রাতে তার মৃত্যুর খবর জানা যায়।
জানা যায়, নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই স্ত্রী রুবানা হককে সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। এটি ছিলো তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সফর। সেখানে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর শরীরে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে মেয়রের শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেওয়া হয়। সাড়ে তিন মাস ধরে অসুস্থ আনিসুল হকের অবস্থার মাঝে উন্নতি ঘটলেও গত মঙ্গলবার তাকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) মেয়রের পরিবারের একজন সদস্য জানান, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে মেয়রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক সময়কার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, সুদর্শন আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালী জেলায় ১৯৫২ সালে। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। তবে পরে টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক। মোহাম্মদী গ্রুপ ও দেশ এনার্জি লি: এর কর্নধার তিনি।
আনিসুল হক ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিকমহলে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও নাগরিকবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের নেতা আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র হিসাবে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং গণ পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যেগ নেন তিনি। বিশেষ করে অভিযাত এলাকা গুলশান-বনানীতে তিনি ঢাকা চাকা নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গনপরিবহন চালু ও বেপরোয়া রিকশা নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকাল : রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার শোক ॥ যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের শোক

প্রকাশের সময় : ০৪:২৬:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

হককথা রিপোর্ট: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক আর নেই। লন্ডনে চিকিৎসাধীন মেয়র আনিসুল হক বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র (ভেনটিলেশন যন্ত্র) খুলে নেন। এরপর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে সহ আত্মীয়-স্বজন ও বহু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার সহদর বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর প্রধান। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে মেয়র আনিসুল হক চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের শোক: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের ইন্তেকালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে তার বিদেহী আতœার শান্তি কামনা এবং মেয়র পরিবারের সদস্যদের শোক সইবার জন্য মহান অল্লাহতায়ালার রহমত কামনা করা হয়েছে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এই শোক প্রকাশ করেন।
শোক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, মেয়র আনিসুল হকের অকাল আর আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন সুন্দর মনের মানুষকে হারালো আর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা হারালেন একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধিকে। তার শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
লন্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মেয়র আনিসুল হক লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিটে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। এসময় তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারা তাঁর পাশে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, শনিবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০মিনিটে আনিসুল হকের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ তাঁর বাসায় নেওয়া হবে। ওই দিন বাদ আসর তাঁকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মেয়র পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ঢাকাসহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ীর কাছে তাঁর জন্য দোয়া তাঁর চেয়েছে তার পরিবার।
এদিকে আনিসুল হকের মৃত্যুর খবরে তার স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ও গুনগ্রাহীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। যুক্তরাজ্যে স্বামীর পাশে থাকা রুবানা বৃহস্পতিবার বিকালে মিডিয়াকে বলেন, আনিসুল হকের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়। তার জন্য দোয়া করুন। পরে রাতে তার মৃত্যুর খবর জানা যায়।
জানা যায়, নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই স্ত্রী রুবানা হককে সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। এটি ছিলো তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সফর। সেখানে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর শরীরে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে মেয়রের শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেওয়া হয়। সাড়ে তিন মাস ধরে অসুস্থ আনিসুল হকের অবস্থার মাঝে উন্নতি ঘটলেও গত মঙ্গলবার তাকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) মেয়রের পরিবারের একজন সদস্য জানান, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে মেয়রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক সময়কার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, সুদর্শন আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালী জেলায় ১৯৫২ সালে। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। তার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। তবে পরে টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল মেয়াদে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক। মোহাম্মদী গ্রুপ ও দেশ এনার্জি লি: এর কর্নধার তিনি।
আনিসুল হক ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড় থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণ, গাবতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিকমহলে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও নাগরিকবাসীর আস্থাভাজন হয়েছিলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের নেতা আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র হিসাবে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং গণ পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যেগ নেন তিনি। বিশেষ করে অভিযাত এলাকা গুলশান-বনানীতে তিনি ঢাকা চাকা নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গনপরিবহন চালু ও বেপরোয়া রিকশা নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখেন তিনি।