মৃত্যপুরী থেকে সান্তনা
- প্রকাশের সময় : ০৪:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ এপ্রিল ২০২০
- / ১২৮ বার পঠিত
আসিফ নজরুল : মৃত্যপুরীতে পরিণত হয়েছে আমেরিকার নিউইয়র্ক স্টেট। শুধু নিউইয়র্ক শহরে এখন করোনা আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার, মৃত্যু প্রায় এক হাজার। সেখানে প্রিয়জনের কাছে ফোন করি খোঁজ নেয়ার জন্য। তাদের সান্তনা দিবো কি? দেখি তারা উল্টো চিন্তিত হয়ে আছেন আমাদের নিয়ে। শুধু একটা শহরে আক্রান্ত ৫০ হাজার, আর আমাদের পুরো দেশে ১০০ও না। তাহলে তারা কেন উদ্বিগ্ন আমাদের নিয়ে? কাল রাতে নিউইয়র্ক-এ মনির হায়দার এ প্রশ্ন শুনে হাসলেন। তিনি দেশে একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছিলেন। এখনও দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তথ্য নেয়ার সুযোগ আছে তার। তার বক্তব্য সংক্ষেপে এরকম।
এক: করোনো হলে বাংলাদেশে আমরা চিকিৎসা দূরের কথা ঠিকমতো দাফনও পাবো নাকি সন্দেহ। করোনাকালে অন্য কোন অসুখ হলেও মরবো বিনা চিকিৎসায়। সর্দি-কাশির লক্ষন নিয়ে মরলে পরিণতি হবে করোনার মতো। অন্যদিক নিউইয়র্ক-এ করেনো হলেও খুব ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে এটা শতভাগ নিশ্চিত। কেউ মারা গেলে সৎকার আর দাফনও হবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালোভাবে।
দুই: করোনাকালে দেশের অনেককে মারা যাবে না খেয়ে, বা ভুগবে খাদ্য, নিরাপত্তা আর জীবিকার অভাবে। সবচেয়ে সুবিধাভোগী শ্রেণীও ভুগবে কিছুটা। নিউইয়র্ক এসব হবে না। যেমন মনির উদাহরন দিলেন সেখানেকার মাঝারি মানের স্কুলেও প্রত্যাককে ল্যাপটপ দিয়ে বাসায় রেখে নিয়মিত ক্লাস করানো হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সুবিধা সবচেয়ে দামী স্কুলেও নেই।
তিন: সবচেয়ে ভয়াবহ যা তা হচ্ছে করোনা হচ্ছে কিনা তা আমাদের জানতে দেয়া হবে না। করেনো হলে টেস্ট করা হবে না চিকিৎসা নেই বলে, সরকার এ ব্যর্থতা কাউকে জানতে দিতে চায় না বলে। যে কয়েকশত আইসিইউ/ ভেন্টিলেটর আছে তা সংরক্ষিত আছে ভিভিআইপিদের জন্য। শুধুমাত্র মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা আর বিপুল সম্পদের মালিক ব্যবসায়ীদের পরিবাররা আক্রান্ত হলে তারা এসবের সুবিধা পাবে। অন্য কেউ এই সুবিধা পাবে না।
মনির কি ভুল বলেছে? বলেনি। বাংলাদেশে অবস্থা হতে পারে আরো খারাপ। মৃত্যুপুরী থেকে মনির সান্তনা দেয় ‘প্রায় করোনা মুক্ত’ একটা দেশের আমাকে। এবং আমি তা গ্রহণও করি অবনতচিত্তে। (সূত্র : মানবজমিন)