মুক্তিযোদ্ধা মন্টুর নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা
- প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০১৯
- / ৩৮৪ বার পঠিত
জয়নাল আবেদীন: একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মন্টু নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা দিয়েছেন। গত ২৩ মার্চ শনিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ‘অপ্রীতিকর’ কাজটি করেন। মন্টুর বাড়ি গোপালপুর উপজেলার পশ্চিম ভেঙগুলা গ্রামে। একাত্তর সালে তিনি ৬ ও ৭ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তার মুক্তিবার্তা নং ০১১১৮০৯০৩৭০ এবং গেজেট নং ১৯১৮। চার পুত্র ও এক সন্তানের জনক মন্টুর স্ত্রী আলেয়া বেগম অসুস্থ। নিজের বয়স বাহাত্তর। এজন্য শরীরটাও অনেক সময় ভালো যায়না।
একাত্তরে মন্টু যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন তখন ছিলেন দিনমজুর। স্বাধীনতার পর, পেটের তাগিদে ঢাকায় রিকসা চালাতেন। বয়সের ভারে রিকসার প্যাডেল ঘুরাতে না পেরে, চলে আসেন বাড়িতে। মুদির দোকান খোলেন। এর মধ্যে স্ত্রীর ও নিজের চিকিৎসা, পাঁচ সন্তানকে সামান্য পড়াশোনা বা বিয়েসাদী দিতে গিয়ে, রিক্ত হয়ে পড়েন।
রিক্ত অবস্থা থেকে রেহাই পেতে, ধারদেনার টাকায় মুদী দোকান খোলেন। দোকান চালাতে ব্যাঙ্ক ও এনজিও ঋণ গ্রহণ করেন। কালক্রমে দেনার প্রবাহ বাড়তে থাকে। ব্যাঙ্ক ছেড়ে এনজিও এবং মহাজনী ঋণের আষ্ট্রেপৃষ্ঠে ও বাঁধা পড়েন তিনি। বর্তমানে তিনি সুদাসল সহ প্রায় ২০ লক্ষ টাকার দেনায় দায়গ্রস্ত। সুদী মহাজনরা কিস্তীর জন্য, প্রায়ই বাড়িতে এসে, প্রাণনাশের হুমকী দিচ্ছেন। জীবনের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মন্টুর সাথে গোপালপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা
মুক্তিযোদ্ধা মন্টু জানান, তিনি মাসে মাত্র দশ হাজার টাকা সরকারি ভাতা পান। কিন্তু মাসে দেনার কিস্তি ৩০ হাজার টাকা। সন্তানদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তাই তাদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না তিনি। দেনা পরিশোধ করতে না পারার গঞ্জনা এবং দিনের পর দিন পালিয়ে থাকার যন্ত্রনা, সহ্য করতে না পেরে, তিনি নিজকে দেউলিয়া ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য আদালতের ও স্মরনাপন্ন হচ্ছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তার সাথে গোপালপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং হাদিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার, সাবেক কমান্ডার আব্দুস সোবহান তুলা, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মিনহাজউদ্দীনসহ পঁচিশ-ত্রিশ জন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
গোপালপুরের সচেতন মানুষের অভিমত, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সময় মন্টু ছিলেন দিনমজুর। আর স্বাধীনতার পাঁচদশকে পদোন্নতি পেতে পেতে হয়ে যান রিকসাচালক। আর এখন তো আরো একগ্রেড এগিয়ে দেউলিয়া। দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে যাচ্ছে বলে কতো গর্ব আমাদের। অথচ মন্টুরা এখন দেউলিয়া।
পাঁচ দশকে সারাদেশের কথা যদি ভাবি, তাহলে দেখবো, কতো রাস্তাঘাটের মানুষ কোটিপতি, কতো আউল-ফাউল লোক মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র বা ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। টাকার ভারে যাদের এখন হাটাচলা দায়। অথচ যাদের দানে দেশ স্বাধীন হলো, সেই মুক্তিযোদ্ধা আজ দেনার দায়ে নিজকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন, এ মহা কষ্ট আমাদের বুকে শেলের মতো বিঁধছে। মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান আর মূল্যবোধ নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা অসহায় মন্টুর পাশে দাঁড়িয়ে সততা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিন।