নিউইয়র্ক ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মানবতাবিরোধী অপরাধ : মোবারক হোসেনের মৃত্যুদন্ড

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১০৫১ বার পঠিত

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত সোমবার (২৪ নভেম্বর’২০১৪) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন-বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মোবারকের বিরুদ্ধে আনীত পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দন্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ৩ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে বাকি তিনটি অভিযোগে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
গত ২ জুন এ মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ ছয় মাস মামলটি অপেক্ষমাণ থাকার পর সোমবার রায় ঘোষণা করা হলো।

Mobarok-ho
যে অভিযোগে মোবারককে ফাঁসির দন্ড দেয়া হয় তা হলো ১নং অভিযোগ। এই অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২২ আগস্ট মোবারক হোসেনসহ অন্য রাজাকাররা আখাউড়ার টানমান্দাইল গ্রামে হাজী নূর বকশের বাড়িতে সভা ডাকেন। দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে ১৩০-১৩২ জন গ্রামবাসীকে ওই বাড়িতে নিয়ে জড়ো করা হয়। তখন মোবারক ও তার সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামবাসীদের আটক করে গঙ্গাসাগর দীঘির কাছে পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখেন। আটক ব্যক্তিদের মোবারক ও তার সহযোগীরা জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করেন। তিনি টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনসহ ৩৩ জনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি গর্ত খোঁড়ায়। পরে তাদের গুলী করে হত্যা করে এবং ওই গর্তে মাটি চাপা দেয়। ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত রায়ে এই অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো।
৩ নং অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। ৩ নং অভিযোগে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেক মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। একাত্তরের ১১ নবেম্বর রাত আটটা-নয়টার দিকে মোবারক সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন। খালেকের ছেলে রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা এর প্রত্যক্ষদর্শী। ওই রাতে খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলী করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন স্বজনেরা তার মরদেহ উদ্ধার করে কোলামুড়ি কবরস্থানে দাফন করেন।
সোমবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি এজলাসে বসেন। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশসহ শাস্তির অংশটুকু পড়ে শোনানো হয়। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং শেষ অংশ পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। সকাল ১২ টায় রায় পড়া শেষ হয়।
এ মামলার প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান বলেন, একাত্তর সালে মোবারক হোসেন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং স্বাধীনতাকামীদের পাক বাহিনীর সহায়তায় হত্যা করেছেন। এ অপরাধে তার ফাঁসি হয়েছে এতে আমরা খুশি।
তবে রায় ন্যায়ভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করে আসামীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আশা করি মোবারক খালাস পাবেন।

10_Mobarak+Hossain_Tribunal_241114_0001নিজের ভুলে ফেঁসে গেলেন মোবারক: ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি হত্যার অভিযোগে মোবারকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওই মামলায় আটক হন মোবারক হোসেন।
মোবারকের বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন গ্রামবাসী আব্দুল খালেকের লাশ পার্শ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করেন। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, যারা খালেককে ডেকে নেন তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিলেন।
শহীদ আব্দুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মোবারক হোসেন ওই বছরের ১৩ মে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন। এরপর কয়েক দফা জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে আরেক দফা জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে হাইকোর্ট তাকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।
পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান এবং মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন।
পরে ২০১২ সালের ৬ জুন আসামীপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আপিল মোকদ্দমা বা মিস কেস করলে মোবারকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসে। ট্রাইব্যুনাল এ মামলার নথিপত্র তলব ও আসামীকে হাজিরের নির্দেশ দিলে ১১ জুলাই মোবারককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ওই দিন তার জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে ১৬ জুলাই তাকে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে আরও ৪ দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
মোবারকের ছেলে বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে মামলা নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের চরম ভুল। তিনি বলেন, আমার বাবা বলেছিলেন, যেহেতু আমি নির্দোষ তাই আমি খালাস পাবো। এই বিশ্বাস থেকেই মামলাটি এই কোর্টে আনা হয়েছিল। কিন্তু এটা যে খালাস দেয়ার কোর্ট নয় সেটা বুঝতে আমাদের ভুল হয়েছে।
গত ২১ মে মোবারকের পক্ষে আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। এর আগে মামলার মূল বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন মোবারকের আরেক আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এছাড়া মোবারকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। গত বছর ২০ মে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে। তারা হলেন মামলার আইও শ্যামল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দারুল ইসলাম, শহীদ আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ও ছেলে রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ খাদেম হোসেন খান, আলী আকবর, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল মল্লিক, আব্দুস সামাদ, শহীদ জায়া ভানু বিবি, আব্দুল হামিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট চমন সিকান্দার জুলকারনাইন। গত ২৫ নবেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ ও সাক্ষীকে আসামীপক্ষের জেরা শেষ হয়।
এরপর আসামী মোবারক হোসেন নিজে ও তার বড় ছেলে মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়। পরে তাদেরকে জেরা করেন প্রসিকিউশন। গত বছর ১২ মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মরহুম সাদত আলীর সন্তান। (দৈনিক সংগ্রাম)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মানবতাবিরোধী অপরাধ : মোবারক হোসেনের মৃত্যুদন্ড

প্রকাশের সময় : ১০:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়াদিল গ্রামের মোবারক হোসেনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত সোমবার (২৪ নভেম্বর’২০১৪) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন-বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মোবারকের বিরুদ্ধে আনীত পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দন্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ৩ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে বাকি তিনটি অভিযোগে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
গত ২ জুন এ মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ ছয় মাস মামলটি অপেক্ষমাণ থাকার পর সোমবার রায় ঘোষণা করা হলো।

Mobarok-ho
যে অভিযোগে মোবারককে ফাঁসির দন্ড দেয়া হয় তা হলো ১নং অভিযোগ। এই অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২২ আগস্ট মোবারক হোসেনসহ অন্য রাজাকাররা আখাউড়ার টানমান্দাইল গ্রামে হাজী নূর বকশের বাড়িতে সভা ডাকেন। দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে ১৩০-১৩২ জন গ্রামবাসীকে ওই বাড়িতে নিয়ে জড়ো করা হয়। তখন মোবারক ও তার সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামবাসীদের আটক করে গঙ্গাসাগর দীঘির কাছে পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখেন। আটক ব্যক্তিদের মোবারক ও তার সহযোগীরা জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করেন। তিনি টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনসহ ৩৩ জনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি গর্ত খোঁড়ায়। পরে তাদের গুলী করে হত্যা করে এবং ওই গর্তে মাটি চাপা দেয়। ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত রায়ে এই অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো।
৩ নং অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। ৩ নং অভিযোগে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেক মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। একাত্তরের ১১ নবেম্বর রাত আটটা-নয়টার দিকে মোবারক সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন। খালেকের ছেলে রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা এর প্রত্যক্ষদর্শী। ওই রাতে খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলী করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন স্বজনেরা তার মরদেহ উদ্ধার করে কোলামুড়ি কবরস্থানে দাফন করেন।
সোমবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি এজলাসে বসেন। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশসহ শাস্তির অংশটুকু পড়ে শোনানো হয়। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং শেষ অংশ পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। সকাল ১২ টায় রায় পড়া শেষ হয়।
এ মামলার প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান বলেন, একাত্তর সালে মোবারক হোসেন মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং স্বাধীনতাকামীদের পাক বাহিনীর সহায়তায় হত্যা করেছেন। এ অপরাধে তার ফাঁসি হয়েছে এতে আমরা খুশি।
তবে রায় ন্যায়ভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করে আসামীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আশা করি মোবারক খালাস পাবেন।

10_Mobarak+Hossain_Tribunal_241114_0001নিজের ভুলে ফেঁসে গেলেন মোবারক: ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি হত্যার অভিযোগে মোবারকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওই মামলায় আটক হন মোবারক হোসেন।
মোবারকের বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন গ্রামবাসী আব্দুল খালেকের লাশ পার্শ্ববর্তী খাল থেকে উদ্ধার করেন। আরজিতে উল্লেখ করা হয়, যারা খালেককে ডেকে নেন তাদের মধ্যে আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মোবারক এবং জমশেদ মিয়া ছিলেন।
শহীদ আব্দুল খালেকের কন্যা খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মোবারক হোসেন ওই বছরের ১৩ মে ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নেন। এরপর কয়েক দফা জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে আরেক দফা জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে হাইকোর্ট তাকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।
পরে ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর মোবারক হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান এবং মামলার নথিপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন।
পরে ২০১২ সালের ৬ জুন আসামীপক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে আপিল মোকদ্দমা বা মিস কেস করলে মোবারকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসে। ট্রাইব্যুনাল এ মামলার নথিপত্র তলব ও আসামীকে হাজিরের নির্দেশ দিলে ১১ জুলাই মোবারককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ওই দিন তার জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে ১৬ জুলাই তাকে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে আরও ৪ দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
মোবারকের ছেলে বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে মামলা নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের চরম ভুল। তিনি বলেন, আমার বাবা বলেছিলেন, যেহেতু আমি নির্দোষ তাই আমি খালাস পাবো। এই বিশ্বাস থেকেই মামলাটি এই কোর্টে আনা হয়েছিল। কিন্তু এটা যে খালাস দেয়ার কোর্ট নয় সেটা বুঝতে আমাদের ভুল হয়েছে।
গত ২১ মে মোবারকের পক্ষে আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম। এর আগে মামলার মূল বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন মোবারকের আরেক আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এছাড়া মোবারকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। গত বছর ২০ মে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে। তারা হলেন মামলার আইও শ্যামল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দারুল ইসলাম, শহীদ আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ও ছেলে রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ খাদেম হোসেন খান, আলী আকবর, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল মল্লিক, আব্দুস সামাদ, শহীদ জায়া ভানু বিবি, আব্দুল হামিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট চমন সিকান্দার জুলকারনাইন। গত ২৫ নবেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ ও সাক্ষীকে আসামীপক্ষের জেরা শেষ হয়।
এরপর আসামী মোবারক হোসেন নিজে ও তার বড় ছেলে মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়। পরে তাদেরকে জেরা করেন প্রসিকিউশন। গত বছর ১২ মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযুক্ত মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামের মরহুম সাদত আলীর সন্তান। (দৈনিক সংগ্রাম)