মহামারীতে ঋণের বোঝা বেড়েছে প্রান্তিক পরিবারগুলোর

- প্রকাশের সময় : ১১:২৬:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১
- / ১০৬ বার পঠিত

Bangladeshi street peoples gathered to collect foods sit in lines, adopting social distancing rules as they received relief materials provided by local community during the nationwide lockdown as a preventive measure against the COVID-19 coronavirus pandemic in Dhaka, Bangladesh on April 3, 2020. (Photo by Sipa USA)No Use UK. No Use Germany.
ঢাকা ডেস্ক: করোনা মহামারীতে প্রায় ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর এক জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে উঠে আসে, মহামারীতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বেড়েছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও এসব পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে। গত ফেব্রæয়ারী মাসে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ‘কীভাবে অতিমারীকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী: একটি খানা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপন করেন জরিপের প্রধান গবেষক বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইশতিয়াক বারী। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক ও জীবনধারণের উপর প্রভাব নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। সারাদেশের এক হাজার ৬০০ খানায় সরাসরি পরিচালিত এ জরিপে কোভিড-১৯ বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাবও দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।
জরিপে দেশের চর, হাওর ও উপকূলীয় এলাকার ১০০ করে ও বস্তির ৪০০ পরিববার এবং ৩০০ আদিবাসী পরিবারের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ পরিবার সরকারের বিনামূল্যের ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ করোনাভাইরাস নিয়ে খুব বেশি ভোগেননি বলে জরিপের উপাত্ত তুলে ধরেন গবেষক ইশতিয়াক।
এই গবেষণার ওপর মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহŸায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অতিমারী চলাকালে প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সহযোগিতা আরও বহুগুণ বাড়ানো উচিত। এই অতিমারী সংকটাপন্ন মানুষকে আরও বিপন্ন করেছে। তাদের এই সমস্যা বহুমাত্রিক। একদিকে তাদের আয় কমে গেছে, খাদ্য সংকটে পড়েছে, আবার ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।’
মহামারী মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ‘সংহতি তহবিল’ গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই তহবিল থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে প্রান্তিক মানুষের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
করোনা মহামারীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়েছে, বেড়েছে ঋণের বোঝা, ফলে হতাশা নিয়ে বসে জটলা করছে। ছবি: সোহরাব আলম
অনুষ্ঠানে সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংহতি তহবিল গঠনকে যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এটি সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনার কাঠামো গঠনের কথা বলেন। তিনি আগামী বাজেটে এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার পরামর্শ দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জরিপের প্রধান গবেষক ইশতিয়াক বলেন, ‘জরিপকালে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সময়কার কষ্টের মধ্যে টিকে থাকতে প্রথমে খাদ্য বাছাইয়ে সামঞ্জস্য আনার অর্থাৎ সুষম খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর খাদ্যবহির্ভূত পণ্য কেনা বাদ দিয়েছেন। এরপরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার বলেছে তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। মহামারীর মধ্যে তারা চলমান আয় দিয়ে চলতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে- উপকূলীয় এলাকার ৮৬ শতাংশ, বস্তিবাসীর ৮৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।’
গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি আরও জানান, অতিমারীর সময়কালে পরিবারগুলোর মধ্যে ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় কমিয়েছেন। খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমিয়েছেন ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার। জরিপ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সরকারি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙেছে বলে উল্লেখ করে। অন্যদিকে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার আর্থিক অনটনে পড়ে গবাদি পশু বিক্রি করেছেন। ২ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার জমি বা স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে অর্থের সংস্থান করেছেন।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে শিক্ষক ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘এ সময়ে চরাঞ্চলের ২১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যান্য এলাকায়ও ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের আয় কমেছে। একই সময়ে এদের মধ্যে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছেন। জরিপের তথ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে।’
জরিপে আরও উঠে আসে, ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও তারা পরীক্ষা করাননি। এদের মধ্যে কোথায় যেতে হবে তা না জানা এবং সামাজিক নিপীড়নের ভয়ের কথাও উলেখ করেন তারা। তবে এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকার ফ্রি ভ্যাকসিন দিলে তা নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন ৮২ শতাংশ মানুষ। মহামারীকালে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ সরকারি সহায়তা নিয়েছেন। ১১ দশমিক ৯ শতাংশ পারিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার বিভিন্ন দান বা অনুদান নিয়েছেন ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। (দৈনিক সংবাদ)