ভারতের সমালোচনা অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে বিএনপি
- প্রকাশের সময় : ০২:১৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
- / ৭২ বার পঠিত
বাংলাদেশের রাজনীতি, সীমান্ত হত্যাসহ নানা ইস্যুতে প্রতিবেশী ভারতের নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা দেশের স্বার্থে অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে বিএনপি। দলীয় অবস্থান থেকে কীভাবে ভারতের সমালোচনা করা যায়- তার একটি কৌশল ঠিক করার কথাও ভাবছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। অন্যদিকে, দেশে চলমান ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের সঙ্গে দলগতভাবে বিএনপির যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না বলে মত দেয় এই নীতিনির্ধারণী ফোরাম। এ বিষয়েও বিএনপির কৌশল কী হবে- তাও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দেন স্থায়ী কমিটির নেতারা। সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ মতামত আসে। বৈঠকসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় বিএনপিসহ বেশকিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জন ক্যাম্পেইন শুরু করে এসব দল ও ব্যক্তি। সম্প্রতি এর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন
কেন্দ্রীয় নেতা। সর্বশেষ সোমবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ব্যানারেও ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন কথা লেখা ছিল। কয়েক দিন ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দেয়। এ অবস্থায় সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও এই ইস্যুতে কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি সব সময় দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করে। আমাদের দলের চেয়ারপারসনেরও একই ভাবনা। তার কথা হচ্ছে, দেশের বাইরে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আমরা এ নীতিতে বিশ^াস করি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ভারতের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক স্থাপনের আশায় নানা মহলের পরামর্শে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশটির সমালোচনা বন্ধ করে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করে, দলীয় প্রধানের ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না- তার বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। ২০১৪ সালের মতো পরবর্তী দুটি নির্বাচনেও ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষেই ছিল। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ভারতের বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন শুরু করে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে বিএনপির কিছু করার নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাতে রাজনৈতিক ‘রঙ’ লেগে যাবে। ফলে সামাজিক যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তা সঠিক পথে থাকবে না। এ বিষয়ে দলীয় কৌশল ঠিক করতে কমিটির আগামী কয়েকটি বৈঠকে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলেন। এরপর বিএনপির ভারত বিরোধিতার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। তখন দলের আরও কয়েকজন নেতাও এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি তোলেন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। বৈঠকে রিজভীর ভারতবিরোধী বক্তব্যের বিরোধিতা কেউ করেননি। তবে দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানানো শোভনীয় হয়নি বলে মনে করেন তারা। দলের অন্যতম মুখপাত্র রিজভীর এই বক্তব্য দলীয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন দেশের মানুষ খুশিতে করেনি। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপমান, লাঞ্ছনা এবং ক্ষোভ থেকে তারা এটি করছেন। যে সংহতি জানিয়েছি- তা বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে। এটি আমার ব্যক্তিগত বোধ থেকে করেছি।
উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীন : স্থায়ী কমিটির এ বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কৌশল কী হওয়া উচিত সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব সদ্যস্য দলগতভাবে নির্বাচনে না গিয়ে কৌশল গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, যতটুকু আলোচনা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে, উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলীয় নেতার উৎসাহিত না করা, কেউ নির্বাচনে যেতে চাইলে তাকে দলীয়ভাবে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে মতামত এসেছে। কয়েকজন সদস্য বলেন, বিএনপি দলগতভাবে যে নির্বাচনে যেতে চায় না তা পরিষ্কার করতে হবে। এর পর কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে অংশ নিতে পারেন। সূত্র : আমাদের সময়।