নিউইয়র্ক ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিচার শেষের আগেই ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর ২০২১
  • / ১২৫ বার পঠিত

আহমেদ সাঈদ বুলবুল, যশোর থেকে: বিচার শেষের আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই বন্দির নাম হলো মোকিম ও ঝড়ু। তাদের আইনজীবীরা এই অভিযোগ করেছেন। তবে যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের নথি বলছে ভিন্ন কথা।
ওইসব নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ওই দুই আসামির জেল আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে খারিজ করে দেয়। ওই খারিজ আদেশের পর চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে দুই বন্দির নামে মৃত্যুদন্ড কার্যকরে পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তা কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন পাঠান। ওই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কারাগারে পৌঁছায়। এরপরই জেল কোডের বিধান মেনে যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৬ নভেম্বর দুইজনের ফাঁসি কার্যকর করে। ফাঁসি কার্যকরের প্রায় চার বছর পর দুই বন্দির ফৌজদারি আপিল (মোকিম-আপিল নং-১১১/২০১৩) ও (ঝড়ু-আপিল নং- ১০৭/২০১৩) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় উঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপরই পুরাতন ফাইলপত্র নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও জেলা প্রশাসনে। বুধবার (৩ নভেম্বর) রাত অবধি চলে এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। এরপরই দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকরের তথ্য-উপাত্ত ইত্তেফাকের হাতে আসে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আসামিদের জেল আপিল নিষ্পত্তির পরই নাকচ হয়েছে প্রাণভিক্ষার আবেদন এরপরই দন্ড কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ওই দুই আসামির আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আপিল নিষ্পত্তির আগেই ফাঁসি কার্যকর ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। আমরা শুনানির সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে এই মামলায় হুমায়ুন কবির নামে একজন আইনজীবী মামলা পরিচালনার জন্য আসামি পক্ষে নিয়োগ দেন। পরে ওই আইনজীবী আমাকে জানান যে দন্ডিত আসামির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের ফাঁসি ২০১৭ সালেই কার্যকর হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আইনজীবীদের কোনো কথা হয়নি বলেও জানান আসিফ হাসান।
আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের খবরের তোলপাড়ের মধ্যে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই ওই দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ফাঁসি হওয়া মামলার নম্বরের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া মামলার নম্বরের গড়মিল রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সরদারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ঐদিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দিন বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দন্ডিত আসামিরা। পাশাপাশি ফাঁসির আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি বহাল রাখে বাকিদের খালাস দেয়। এরপর আসামিরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল (০৩/২০১৬ ও লিভ টু আপিল -২৩/২০১৩) দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মোকিম ও ঝড়ুর জেল আপিল খারিজ করে দেন। বহাল রাখেন নিম্ন আদালতের দেয়া ফাঁসির দন্ড। এরপরই ওই রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌছলে চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দুই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌছলে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রাণভিক্তার আবেদন পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ।
ওই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কারা-২ শাখার সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর কারা মহাপরিদর্শককে লেখা চিঠিতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে লেখেন : (১) মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদী নং-৯০৭৫/এ, ঝড়–, পিতা-আকছেদ সরদার, (২) মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদী নং-৫৯৮/এ, মকিম, পিতা- মুরাদ আলী, উভয় সাং-দুর্লভপুর, থানা-আলমডাঙ্গা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা এর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক না-মঞ্জুর করা হয়েছে। এমতাবস্থায় জেল কোড অনুযায়ী কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এরপর ওই বছরের ১৬ নভেম্বর দুই বন্দির দন্ড কার্যকর করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন এ সংক্রান্ত একটি অফিস নোটও ইত্তেফাকের হাতে এসেছে। সেখানে বিস্তারিত ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) মো. ছগির মিয়া বলেন, ‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কারাগারে ২০১৭ সালে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে’ এমন খবর তাদের নজরেও এসেছে। কারা কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র-ফাইল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছে।
আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপ্রার্থী মোকিম কনডেম প্রিজনার ছিলেন। বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদন্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেননি। সে সামর্থও তাদের ছিলোনা। (দৈনিক ইত্তেফাক)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিচার শেষের আগেই ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর ২০২১

আহমেদ সাঈদ বুলবুল, যশোর থেকে: বিচার শেষের আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই বন্দির নাম হলো মোকিম ও ঝড়ু। তাদের আইনজীবীরা এই অভিযোগ করেছেন। তবে যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের নথি বলছে ভিন্ন কথা।
ওইসব নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ওই দুই আসামির জেল আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে খারিজ করে দেয়। ওই খারিজ আদেশের পর চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে দুই বন্দির নামে মৃত্যুদন্ড কার্যকরে পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তা কারাগারে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন পাঠান। ওই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কারাগারে পৌঁছায়। এরপরই জেল কোডের বিধান মেনে যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৬ নভেম্বর দুইজনের ফাঁসি কার্যকর করে। ফাঁসি কার্যকরের প্রায় চার বছর পর দুই বন্দির ফৌজদারি আপিল (মোকিম-আপিল নং-১১১/২০১৩) ও (ঝড়ু-আপিল নং- ১০৭/২০১৩) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্য তালিকায় উঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপরই পুরাতন ফাইলপত্র নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও জেলা প্রশাসনে। বুধবার (৩ নভেম্বর) রাত অবধি চলে এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। এরপরই দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকরের তথ্য-উপাত্ত ইত্তেফাকের হাতে আসে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আসামিদের জেল আপিল নিষ্পত্তির পরই নাকচ হয়েছে প্রাণভিক্ষার আবেদন এরপরই দন্ড কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ওই দুই আসামির আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আপিল নিষ্পত্তির আগেই ফাঁসি কার্যকর ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। আমরা শুনানির সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে এই মামলায় হুমায়ুন কবির নামে একজন আইনজীবী মামলা পরিচালনার জন্য আসামি পক্ষে নিয়োগ দেন। পরে ওই আইনজীবী আমাকে জানান যে দন্ডিত আসামির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের ফাঁসি ২০১৭ সালেই কার্যকর হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আইনজীবীদের কোনো কথা হয়নি বলেও জানান আসিফ হাসান।
আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের খবরের তোলপাড়ের মধ্যে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই ওই দুই বন্দির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ফাঁসি হওয়া মামলার নম্বরের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া মামলার নম্বরের গড়মিল রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সরদারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ঐদিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দিন বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দন্ডিত আসামিরা। পাশাপাশি ফাঁসির আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি বহাল রাখে বাকিদের খালাস দেয়। এরপর আসামিরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল (০৩/২০১৬ ও লিভ টু আপিল -২৩/২০১৩) দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মোকিম ও ঝড়ুর জেল আপিল খারিজ করে দেন। বহাল রাখেন নিম্ন আদালতের দেয়া ফাঁসির দন্ড। এরপরই ওই রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌছলে চুয়াডাঙ্গার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দুই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌছলে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রাণভিক্তার আবেদন পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ।
ওই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কারা-২ শাখার সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর কারা মহাপরিদর্শককে লেখা চিঠিতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে লেখেন : (১) মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদী নং-৯০৭৫/এ, ঝড়–, পিতা-আকছেদ সরদার, (২) মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদী নং-৫৯৮/এ, মকিম, পিতা- মুরাদ আলী, উভয় সাং-দুর্লভপুর, থানা-আলমডাঙ্গা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা এর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক না-মঞ্জুর করা হয়েছে। এমতাবস্থায় জেল কোড অনুযায়ী কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এরপর ওই বছরের ১৬ নভেম্বর দুই বন্দির দন্ড কার্যকর করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন এ সংক্রান্ত একটি অফিস নোটও ইত্তেফাকের হাতে এসেছে। সেখানে বিস্তারিত ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) মো. ছগির মিয়া বলেন, ‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কারাগারে ২০১৭ সালে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে’ এমন খবর তাদের নজরেও এসেছে। কারা কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র-ফাইল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছে।
আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপ্রার্থী মোকিম কনডেম প্রিজনার ছিলেন। বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদন্ড ইতিমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেননি। সে সামর্থও তাদের ছিলোনা। (দৈনিক ইত্তেফাক)