নিউইয়র্ক ০২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলা সঙ্গীত জগতের উজ্জল নক্ষত্রের চির বিদায় ॥ কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৭
  • / ১০৮৫ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্বনামধন্য শিল্পী, বাংলা সঙ্গীত জততের উজ্জল নক্ষত্র  আবদুল জব্বার আর নেই। তিনি চির বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তার মৃত্যুতে দেশ ও প্রবাসের কোটি কোটি সঙ্গীতপ্রেমী আর ভক্তসহ সকল বাংলাদেশীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়, সালাম সালাম হাজার সালাম, ওরে নীল দরিয়া, তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়, এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি কেনো একা বয়ে বেড়াও সহ অসংখ্য গানের গায়ক আবদুল জব্বার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হারমোনিয়াম নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে মুক্তিকামী মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। তার গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও চরম সত্য যে, শিল্পী তার জীবনের শেষ সময় নিজেই নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলেন। শরীরিক সামর্থ্যরে কাছে হেরে গেলেন প্রখ্যাত আবদুল জব্বার। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বিদায় নিলেন চিরতরে।
জানা গেছে, বুধবার (৩০ আগষ্ট) সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল জব্বার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আবদুল জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল জব্বারের ইন্তেকালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক শোকবাণীতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শিল্পীর বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করেছেন।
শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুর পর বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মরদেহ তার ভূতের গলির বাস ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকাল তিনটার দিকে মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগষ্ট) সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আব্দুল জব্বারকে কোথায় দাফন করা হবে সে ব্যাপারে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে আব্দুল জব্বারের ছেলে সঙ্গীত শিল্পী মিথুন জব্বার জানিয়েছেন, পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলার পর এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুকে গান শোনাচ্ছেন আবদুল জব্বার
ইতিহাস বলেন: মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেন। অসংখ্য কালজয়ী গানে কণ্ঠ দেন আবদুল জব্বার। সঙ্গীতাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিতে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে তাকে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
এদিকে সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, সঙ্গীত জগতে আব্দুল জব্বারের বিকল্প নেই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আব্দুল জব্বারের যত কাজ আছে, সেসব একত্রিত করে আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দেব। তার স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে, যা তাকে সম্মানিত করবে।
বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্দুল জব্বারের মরদেহ দেখতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুর খবর শোনার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ছুটে যান তথ্যমন্ত্রী।
মরহুমের স্বজনদের সান্তনা দিয়ে ইনু বলেন, আব্দুল জব্বার আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে ধারণ করে বাংলাদেশের হাজার বছরের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি আমাদের জঙ্গিসন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উৎসাহ দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

বাংলা সঙ্গীত জগতের উজ্জল নক্ষত্রের চির বিদায় ॥ কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার আর নেই

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৭

হককথা রিপোর্ট: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্বনামধন্য শিল্পী, বাংলা সঙ্গীত জততের উজ্জল নক্ষত্র  আবদুল জব্বার আর নেই। তিনি চির বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তার মৃত্যুতে দেশ ও প্রবাসের কোটি কোটি সঙ্গীতপ্রেমী আর ভক্তসহ সকল বাংলাদেশীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়, সালাম সালাম হাজার সালাম, ওরে নীল দরিয়া, তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়, এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি কেনো একা বয়ে বেড়াও সহ অসংখ্য গানের গায়ক আবদুল জব্বার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হারমোনিয়াম নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে মুক্তিকামী মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। তার গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও চরম সত্য যে, শিল্পী তার জীবনের শেষ সময় নিজেই নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলেন। শরীরিক সামর্থ্যরে কাছে হেরে গেলেন প্রখ্যাত আবদুল জব্বার। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বিদায় নিলেন চিরতরে।
জানা গেছে, বুধবার (৩০ আগষ্ট) সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল জব্বার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আবদুল জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল জব্বারের ইন্তেকালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক শোকবাণীতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে শিল্পীর বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করেছেন।
শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুর পর বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মরদেহ তার ভূতের গলির বাস ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকাল তিনটার দিকে মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগষ্ট) সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আব্দুল জব্বারকে কোথায় দাফন করা হবে সে ব্যাপারে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে আব্দুল জব্বারের ছেলে সঙ্গীত শিল্পী মিথুন জব্বার জানিয়েছেন, পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলার পর এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুকে গান শোনাচ্ছেন আবদুল জব্বার
ইতিহাস বলেন: মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেন। অসংখ্য কালজয়ী গানে কণ্ঠ দেন আবদুল জব্বার। সঙ্গীতাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিতে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে তাকে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
এদিকে সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, সঙ্গীত জগতে আব্দুল জব্বারের বিকল্প নেই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আব্দুল জব্বারের যত কাজ আছে, সেসব একত্রিত করে আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দেব। তার স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে, যা তাকে সম্মানিত করবে।
বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্দুল জব্বারের মরদেহ দেখতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুর খবর শোনার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ছুটে যান তথ্যমন্ত্রী।
মরহুমের স্বজনদের সান্তনা দিয়ে ইনু বলেন, আব্দুল জব্বার আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে ধারণ করে বাংলাদেশের হাজার বছরের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি আমাদের জঙ্গিসন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উৎসাহ দিয়েছেন।