নিউইয়র্ক ০৯:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ভিসার হুমকি, নজিরবিহীন পদক্ষেপ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
  • / ১৩ বার পঠিত

বাংলাদেশ ডেস্ক : গত ২৪শে মে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র এখন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য ভিসা সীমিত করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সব রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা, বিচারবিভাগ এবং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশটির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। নির্বাচনকে ক্ষুণ্নকারী কর্মগুলোকে ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে-যেমন ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে লোকেদের তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা , রাজনৈতিক দল, ভোটারদের প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থার ব্যবহার যাতে সুশীল সমাজ বা মিডিয়া তাদের মতামত প্রচার থেকে বিরত থাকে।’ স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশিদের কণ্ঠস্বর রোধ করার চেষ্টাকারী যে কোনো ক্ষমতার ওপর নজর রাখছে আমেরিকা। যদিও তাদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি, তবে মিলার ভবিষ্যতের জন্য তা বাতিলও করেননি।

গত দু’টি সাধারণ নির্বাচন, জানুয়ারি ২০১৪ এবং ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি। তবে ভারত দৃঢ়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কলঙ্কিত জয়কে সমর্থন করেছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং কয়েকটি ছোট দল বর্জন করেছিল কারণ তারা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। ফলস্বরূপ, জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসন (৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি) আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায়। নির্বাচন বর্জন ও বিক্ষোভের ফলে বিরোধী দল ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশ নিয়ে গঠিত সরকারের ‘যৌথ বাহিনী’কে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ বিচার-বহির্ভূত হত্যা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য দায়ী করেছে। ২০১৪ সালে ভারতের ভূমিকা বিতর্কিত ছিল। কারণ এমন অভিযোগ ছিল যে, একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করতে জাতীয় পার্টির প্রধান জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এইচএম এরশাদকে বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। বিএনপি ২০১৮ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল কিন্তু ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলে তারা। বিরোধীরা ভোটের প্রাক্কালে ব্যালট বাক্স ভর্তিতে পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের জড়িত থাকার দাবি করেছে। বিবিসি’র একজন প্রতিবেদক দাবি করেছেন, ভোট শুরুর আগেই তিনি চট্টগ্রামে একটি ব্যালট বাক্স ভরে যেতে দেখেছেন। যদিও আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬০ টি আসনে জয়লাভ করে, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ এটিকে একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু ভারত ব্যতিক্রম ছিল।

আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি ইঙ্গিত করে যে, দেশটি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারের কাজটি নিজের হাতে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা প্রত্যাখ্যানের ভয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজাত ও কর্মকর্তাদের উপর প্রভাব ফেলবে, যারা দেশের ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রকে বৈধতা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। পোশাক এবং সফ্টওয়্যার রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য এবং এফডিআইয়ের বৃহত্তম উৎস। দেশটি শিক্ষা, কর্ম এবং বসবাসের জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের গন্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১১-১২ সালের ৩৩১৪ থেকে তিনগুণ বেড়ে ২০২১-২২ সালে ১০,৫৯৭ হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভিসা নীতি ঘোষণা করে সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্লিঙ্কেন-এর টুইটে বলা হয়েছে যে, ‘ভিসা নীতিটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে জড়িতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও অবিলম্বে প্রযোজ্য হবে।’ এর মানে হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বা সেখানে গ্রিন কার্ডে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের তাদের ভিসা বাতিলের পরে দেশে ফিরে যেতে হবে, যদি তাদের বাবা-মা বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিকৃত করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। এটি বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা ব্যালট বাক্সে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নীতি পরিবর্তনের লক্ষ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, সুশীল সমাজের সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। শাসক দলের যুব শাখা এবং পুলিশের দ্বারা অবিলম্বে লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় বিরোধী দলগুলোর দ্বারা জনসভা সংগঠিত করা ক্রমবর্ধমানভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিরোধী দলের জনসভা ঠেকাতে এবং বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিতে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর কণ্ঠস্বরও ক্ষীণ হয়েছে, কারণ সরকার ঘোষণা করেছে যে, শুধুমাত্র গঠনমূলক সমালোচনাকেই স্বাগত জানানো হবে। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সংক্রান্ত রিপোর্ট করার জন্য সরকারি নীতির সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি জনপ্রিয় পত্রিকা, ‘প্রথম আলো’কে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে ‘আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের জনগণের শত্রু’- বলে অভিহিত করেছেন।

আরোও পড়ুন । সংসদ অধিবেশন বসছে বিকেলে, বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার

যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নজিরবিহীন হতে পারে, তবে তা অনাকাক্সিক্ষত নয়। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার একদিন পর অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ৭০ বছর বয়সী জায়েদা খাতুনের জয়ের কথা আপনারা পড়েছেন। অন্যরা অবশ্য নিশ্চিত নয় যে, এটি কতদিন কাজ করবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বুরকিনা ফাসো এবং বতসোয়ানায়- ২৪টি দেশে ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে পরপর দু’টি সাধারণ নির্বাচন হাইজ্যাক হওয়ার অবিরাম অভিযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশকে এককভাবে সতর্ক করেছে। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশে নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে হ্রাস করেছে। সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ভারত

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ভিসার হুমকি, নজিরবিহীন পদক্ষেপ

প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : গত ২৪শে মে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র এখন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য ভিসা সীমিত করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সব রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা, বিচারবিভাগ এবং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশটির পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। নির্বাচনকে ক্ষুণ্নকারী কর্মগুলোকে ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে-যেমন ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে লোকেদের তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা , রাজনৈতিক দল, ভোটারদের প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থার ব্যবহার যাতে সুশীল সমাজ বা মিডিয়া তাদের মতামত প্রচার থেকে বিরত থাকে।’ স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশিদের কণ্ঠস্বর রোধ করার চেষ্টাকারী যে কোনো ক্ষমতার ওপর নজর রাখছে আমেরিকা। যদিও তাদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি, তবে মিলার ভবিষ্যতের জন্য তা বাতিলও করেননি।

গত দু’টি সাধারণ নির্বাচন, জানুয়ারি ২০১৪ এবং ডিসেম্বর ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি। তবে ভারত দৃঢ়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কলঙ্কিত জয়কে সমর্থন করেছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং কয়েকটি ছোট দল বর্জন করেছিল কারণ তারা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। ফলস্বরূপ, জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসন (৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি) আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায়। নির্বাচন বর্জন ও বিক্ষোভের ফলে বিরোধী দল ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশ নিয়ে গঠিত সরকারের ‘যৌথ বাহিনী’কে হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ বিচার-বহির্ভূত হত্যা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য দায়ী করেছে। ২০১৪ সালে ভারতের ভূমিকা বিতর্কিত ছিল। কারণ এমন অভিযোগ ছিল যে, একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করতে জাতীয় পার্টির প্রধান জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এইচএম এরশাদকে বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। বিএনপি ২০১৮ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল কিন্তু ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলে তারা। বিরোধীরা ভোটের প্রাক্কালে ব্যালট বাক্স ভর্তিতে পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনের জড়িত থাকার দাবি করেছে। বিবিসি’র একজন প্রতিবেদক দাবি করেছেন, ভোট শুরুর আগেই তিনি চট্টগ্রামে একটি ব্যালট বাক্স ভরে যেতে দেখেছেন। যদিও আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬০ টি আসনে জয়লাভ করে, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ এটিকে একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু ভারত ব্যতিক্রম ছিল।

আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি ইঙ্গিত করে যে, দেশটি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রচারের কাজটি নিজের হাতে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা প্রত্যাখ্যানের ভয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজাত ও কর্মকর্তাদের উপর প্রভাব ফেলবে, যারা দেশের ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রকে বৈধতা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। পোশাক এবং সফ্টওয়্যার রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য এবং এফডিআইয়ের বৃহত্তম উৎস। দেশটি শিক্ষা, কর্ম এবং বসবাসের জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের গন্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১১-১২ সালের ৩৩১৪ থেকে তিনগুণ বেড়ে ২০২১-২২ সালে ১০,৫৯৭ হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভিসা নীতি ঘোষণা করে সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্লিঙ্কেন-এর টুইটে বলা হয়েছে যে, ‘ভিসা নীতিটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে জড়িতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও অবিলম্বে প্রযোজ্য হবে।’ এর মানে হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বা সেখানে গ্রিন কার্ডে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের তাদের ভিসা বাতিলের পরে দেশে ফিরে যেতে হবে, যদি তাদের বাবা-মা বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিকৃত করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। এটি বেসামরিক প্রশাসন এবং পুলিশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা ব্যালট বাক্সে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নীতি পরিবর্তনের লক্ষ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, সুশীল সমাজের সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। শাসক দলের যুব শাখা এবং পুলিশের দ্বারা অবিলম্বে লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় বিরোধী দলগুলোর দ্বারা জনসভা সংগঠিত করা ক্রমবর্ধমানভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিরোধী দলের জনসভা ঠেকাতে এবং বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিতে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর কণ্ঠস্বরও ক্ষীণ হয়েছে, কারণ সরকার ঘোষণা করেছে যে, শুধুমাত্র গঠনমূলক সমালোচনাকেই স্বাগত জানানো হবে। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সংক্রান্ত রিপোর্ট করার জন্য সরকারি নীতির সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি জনপ্রিয় পত্রিকা, ‘প্রথম আলো’কে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে ‘আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের জনগণের শত্রু’- বলে অভিহিত করেছেন।

আরোও পড়ুন । সংসদ অধিবেশন বসছে বিকেলে, বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার

যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নজিরবিহীন হতে পারে, তবে তা অনাকাক্সিক্ষত নয়। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার একদিন পর অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ৭০ বছর বয়সী জায়েদা খাতুনের জয়ের কথা আপনারা পড়েছেন। অন্যরা অবশ্য নিশ্চিত নয় যে, এটি কতদিন কাজ করবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বুরকিনা ফাসো এবং বতসোয়ানায়- ২৪টি দেশে ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে পরপর দু’টি সাধারণ নির্বাচন হাইজ্যাক হওয়ার অবিরাম অভিযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশকে এককভাবে সতর্ক করেছে। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশে নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে হ্রাস করেছে। সূত্র : বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ভারত

বেলী/হককথা