নিউইয়র্ক ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৪:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৯ বার পঠিত

ঢাকা ডেস্ক: দেশের পশ্চিমাঞ্চলে দারিদ্র্য কমছে ধীরগতিতে, কিন্তু পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় কিছুটা দ্রæত কমছে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলনে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ছিল এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে আয় দারিদ্র্য ও বৈষম্যের অভিন্নতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস। এই গবেষক জানান, মাথাপিছু ভোগের ক্ষেত্রেও জাতীয় গড় পরিমাণের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ জাতীয় গড় ভোগের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। দেশে জাতীয় মাথাপিছু ভোগ ২০১০ সালে ছিল ১৪৭১.৫৪ টাকা। ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ১৫০৮.৬৪ টাকা।
প্রতিবেদনে মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, জাতীয় পর্যায়ে দেশে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩২.২৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ২৪.৩৪ শতাংশে।
আঞ্চলিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৮.৬৮ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল ১৬১৩.২২ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্যের হার হয় ২৩.০৭ শতাংশ। মাথাপিছু ভোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯৮.১৯ টাকা।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৭০ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল ১৩৭৪.৬০ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.৪৫ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ হয়েছে ১৩৭৮.৯৫ টাকা হয়েছে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে দ্রæত হারে দারিদ্র্য কমছে এবং ভোগ বাড়ছে। তুলনামূলক কম হারে দারিদ্র্য কমছে এবং ভোগ বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলোতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক বৈষম্যের এই পরিসংখ্যান সম-উন্নয়নের জন্য উদ্বেগজনক। উন্নয়নবৈষম্যের এই প্রবণতা চলতে থাকলে বড় ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক ২০১৯ সালে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঞ্চলিক বৈষম্য বিরাজ করছে। সংস্থাটির মতে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য কমানোর যাত্রায় দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান কমে আসছিল, কিন্তু ২০১০ সালের পর পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দারিদ্র্য পরিস্থিতির পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে দারিদ্র্য বেশি। নদীভাঙন, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, শিল্প গড়ে না ওঠা এর বড় কারণ। মানব দারিদ্র্য সূচকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো মূলত উত্তরবঙ্গ ও পার্বত্য অঞ্চলের।
বিবিএসের সর্বশেষ খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬.৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪.৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬.৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫.৪ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এর আগে গণমাধ্যমে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয় সাধারণত ভোগ দিয়ে। কিন্তু দারিদ্র্য যে বহুমুখী ধারণা, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে এর প্রভাব দেখা যায়। (দৈনিক কালের কন্ঠ)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ০৫:১৪:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

ঢাকা ডেস্ক: দেশের পশ্চিমাঞ্চলে দারিদ্র্য কমছে ধীরগতিতে, কিন্তু পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় কিছুটা দ্রæত কমছে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলনে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ছিল এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে আয় দারিদ্র্য ও বৈষম্যের অভিন্নতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস। এই গবেষক জানান, মাথাপিছু ভোগের ক্ষেত্রেও জাতীয় গড় পরিমাণের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ জাতীয় গড় ভোগের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। দেশে জাতীয় মাথাপিছু ভোগ ২০১০ সালে ছিল ১৪৭১.৫৪ টাকা। ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ১৫০৮.৬৪ টাকা।
প্রতিবেদনে মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, জাতীয় পর্যায়ে দেশে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩২.২৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় ২৪.৩৪ শতাংশে।
আঞ্চলিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৮.৬৮ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল ১৬১৩.২২ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্যের হার হয় ২৩.০৭ শতাংশ। মাথাপিছু ভোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯৮.১৯ টাকা।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৭০ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ ছিল ১৩৭৪.৬০ টাকা। ২০১৬ সালে এসে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.৪৫ শতাংশ। এ সময় মাথাপিছু ভোগ হয়েছে ১৩৭৮.৯৫ টাকা হয়েছে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে দ্রæত হারে দারিদ্র্য কমছে এবং ভোগ বাড়ছে। তুলনামূলক কম হারে দারিদ্র্য কমছে এবং ভোগ বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলোতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক বৈষম্যের এই পরিসংখ্যান সম-উন্নয়নের জন্য উদ্বেগজনক। উন্নয়নবৈষম্যের এই প্রবণতা চলতে থাকলে বড় ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক ২০১৯ সালে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঞ্চলিক বৈষম্য বিরাজ করছে। সংস্থাটির মতে, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য কমানোর যাত্রায় দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান কমে আসছিল, কিন্তু ২০১০ সালের পর পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দারিদ্র্য পরিস্থিতির পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে দারিদ্র্য বেশি। নদীভাঙন, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, শিল্প গড়ে না ওঠা এর বড় কারণ। মানব দারিদ্র্য সূচকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো মূলত উত্তরবঙ্গ ও পার্বত্য অঞ্চলের।
বিবিএসের সর্বশেষ খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬.৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪.৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬.৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫.৪ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এর আগে গণমাধ্যমে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয় সাধারণত ভোগ দিয়ে। কিন্তু দারিদ্র্য যে বহুমুখী ধারণা, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে এর প্রভাব দেখা যায়। (দৈনিক কালের কন্ঠ)