প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠক : আলোচনায় জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচনের রোডম্যাপ
- প্রকাশের সময় : ০৪:০০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৪ বার পঠিত
ঢাকা ডেস্ক: দেশে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অতি দ্রæত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণারও তাগিদ দেয়া হয়েছে দলটির তরফে। দাবি করা হয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হওয়া সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানায় বিএনপি। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে দলটির প্রতিনিধিদলে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সরকারের তিন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, মাহফুজ আলম।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েকদিন ধরে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়েছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আশা করছি তিনি তার পরিষদ নিয়ে অতিদ্রæত এ বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান করবেন। যেন দেশে এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি না হয় যে সমস্যাগুলোর মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেটি মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা এর যে স্থিতিশীলতা সেটি বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে সে বিষয়টিও আমরা তাদের সামনে নিয়ে এসেছি। যাতে করে দ্রব্যমূল্য কমানো যায় এবং এলাকাভিত্তিক টিসিবি’র ট্রাক বাড়ানো যায়। ট্রাকসহ যানবাহন চলাচল যেন নির্বিঘœ থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি। এ ছাড়াও কৃষিতে বিশেষ করে সার বিতরণের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করার কথা আমরা বলেছি। কারণ এখনো এসব অনেক জায়গায় ফ্যাসিস্টদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করছে।
ফখরুল বলেন, শিল্প উৎপাদনে স্বাভাবিক যে কার্যক্রম সেটি যেন চালু থাকে সে বিষয়ে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। প্রয়োজনে সরকার থেকে ঋণ দেয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার জোর জবরদস্তি করে নির্বাচন করে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই আমরা বলেছি সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদের মতো এটাকেও ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে। এ ছাড়াও ট্রেড বডিগুলোকে ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়ে আসার কথা বলেছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামগ্রিকভাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য আমরা আহ্বান করেছি। নির্বাচন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সংস্কারগুলো যথাসম্ভব শেষ করে অতিদ্রæত নির্বাচনী রোডম্যাপ দেয়ার জন্য বলেছি। যেটি অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা মনোযোগ সহকারে আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা বিশ্বাস করি তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এ ছাড়াও আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলো দ্রæত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছি।
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, খুবই সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মিটিং হয়েছে। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। তিনি সব কমিউনিটির মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। সরকার বিশৃঙ্খলার বিষয়ে যা যা করা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বিষয়েও কথা হয়েছে। তিনি জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। এ ঘটনায় মোট ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ৬ জন হত্যাকাÐে অভিযুক্ত। ২১ জন সহিংসতা ও পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত। আর বাকি ৬ জন আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য। (দৈনিক মানবজমিন)