নিখোঁজদের খুঁজে অপেক্ষায় স্বজনরা : বনানী অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত নিহত ১৯
- প্রকাশের সময় : ০২:১০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০১৯
- / ৫৩৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের বহুতল ভবন ‘এফআর টাওয়ার’-এর সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালে ৩জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ২জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং ঘটনাস্থলে ১১ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭০ জন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দিলীপ কুমার ঘোষ। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে উদ্ধারকাজ চলছে। ভবনে কেউ জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় আটকা পড়ে আছে কি না- তা অনুসন্ধানে উদ্ধার টিম কাজ করছে। এদিকে গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আব্দুল আহাদ নিহত ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), মামুন (৩৬), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মনির (৫০) ও মাকসুদুর (৩৬)।
জানা গেছে, ঢামেকে নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং কুর্মিটোলায় নিহতের নাম নিরস ভিগ্নে রাজা (৪০)। কুর্মিটোলায় নিহত রাজা শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং স্কেন ওয়েল লজিস্টিকসের ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তবে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ঢামেক ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই বাচ্চু জানান, বিকেল ৪টা ৩৮ মিনিটের দিকে আব্দুল্লাহ আল ফারুক মারা যান। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় ঢামেকে আনা হয়। হাসপাতালে আনার পরও তার জ্ঞান ফেরেনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ১৭ নম্বর রোডের ২২তলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস সদরের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে নির্বাপণ শতভাগ হয়নি। ধোঁয়া আছে। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে।
বগুড়ার শান্তাহারের মেয়ে তাবজিলা মৌ। বয়স ৩৬ বছর। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বেলা পৌনে ১টার দিকে মাকে ফোনে জানান, তার অফিসে আগুন লেগেছে। এরপর থেকেই মৌয়ের মুঠোফোনটি বন্ধ। বনানীতে আগুন লাগা ‘এফ আর টাওয়ার’ ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে বোন মৌকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ছোট ভাই ও দুলাভাই। কিন্তু এখনো মৌয়ের কোনো খোঁজ মেলেনি। আহতরা যে সব হাসপাতালে ভর্তি, সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছে মৌয়ের স্বজনরা। কোথাও তাকে না পেয়ে আবার ফিরে এসেছেন আগুন লাগা এফ আর টাওয়ারের সামনে। নিখোঁজ মৌয়ের দুলাভাই মোহাম্মদ রানা এসব কথা জানিয়েছেন।
মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘এই ভবনের ১০ তলায় হেরিটেক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করত মৌ। এখনো তার কোনো সন্ধান মেলেনি। শেষ ভরসা মৌয়ের লাশ। রাত ৮টা পর্যন্ত তাও মেলেনি।’
আগুন লাগা এফ আর টাওয়ারের গেটের নিচে ভাতিজি অনিকার খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন চাচা আবু জাফর। তার ভাতিজিও এই ভবনে কাজ করত। দুপুরের পর থেকে তিনিও নিখোঁজ। এমন অনেক ব্যক্তির স্বজনেরাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাদের আপনজনদের।
ফায়ার সার্ভিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভেতরে আরও কয়েকজনের লাশ পড়ে আছে। তবে কতজন, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। যারা পড়ে আছে তারা মৃত।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭ টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভেতরে আমাদের সার্চিং অপারেশন চলছে।’ (প্রতিদিনের সংবাদ)